রিপন হোসেন সাজু,মণিরামপুর:
যশোরের মণিরামপুর উপজেলার বিভিন্ন বাসা বাড়ির ছাদে ও বাড়ীর আঙিনায় শখের বশে অনেকেই বিদেশী ড্রাগন ফলের চাষ গত কয়েক বছর ধরে আবাদ করে আসছে। গত কয়েক বছরের ব্যবধানে এই ফলের সাথে অনেকেরই পরিচিতি ঘটেছে। তবে এই ফল সম্পর্কে গ্রামীণ জনপদের অনেকেরই কোন ধারনা নেই। সম্প্রতি বিদেশী ড্রাগন ফলের চাষাবাদ দেশের অনেক স্থানে বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয়েছে।
স্বাদ ও পুষ্টির গুনাগুন এবং দাম সবমিলে চাষী তথা ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে এই ড্রাগন ফল নিয়ে বেশ আগ্রহ দেখা দিয়েছে। দেশের বড় বড় শহরের বাজার ও নামকরা হোটেল-মটেলে এই ড্রাগন ফলের সরবরাহ করে ড্রাগন ফল চাষীরা আর্থিকভাবে হয়েছেন অনেক লাভবান। দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলা পর্যায়ে এই ফলের চাষের ব্যাপকতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই উৎপাদনের চেয়ে চাহিদা কমে যাওয়ায় এটির বাজারজাত করণে পরিবর্তন এসেছে।
এমনটি মন্তব্য বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে পাওয়া গেছে। সম্প্রতি প্রায়ই মণিরামপুর পৌর শহরে ফুটপাতের দোকানে পেয়ারা বিক্রেতাদের পেয়ারার পাশাপাশি এই ড্রাগন ফল বিক্রি করতে দেখা গেছে। গত সোমবার ফুটপাতের দোকানী মণিরামপুর উপজেলার লক্ষনপুর গ্রামের আব্দুল হান্নানকে পেয়ারা বিক্রির পাশাপাশি লাল রঙের ড্রাগন ফল চটে বিছিয়ে বিক্রি করতে দেখা যায়।
এ সময় এই ফল কোথা থেকে আনা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাগেরহাট থেকে তারা কিনে এনে বিক্রি করছেন। দাম কেমন জানতে চাইলে বলেন, একটু বড় ও ভালমানের ফলগুলি প্রতি কেজি ৫০০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। ফলের মান একটু কম সেগুলি ৩০০ টাকা ও ২৫০ টাকায় বিক্রি করছেন। তিনি আরও বলেন, দাম বেশি হওয়ায় বেশিরভাগ ক্রেতা স্বাদ নিতে এক পিচ/দুই পিচ করে কিনছেন। তবে ক্রেতাদের কাছে বেশ চাহিদা রয়েছে এই ফলের। তাই বিক্রি করতে বেশী বেগ পেতে হচ্ছে না বলে তিনি মন্তব্য করেন।
মণিরামপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে,ড্রাগন ফল যা পিতায়য়া নামেও পরিচিত। এর বৈজ্ঞানিক নাম Hylocereus । এটি এক ধরনের ফণীমনসা(ক্যাকটাস) প্রজাতির ফল। এর মহাজাতি হায়লোসিরিয়াস (মিষ্টি পিতায়য়া)। বিভিন্ন দেশে এ ফলের নাম একেক ধরনের হলেও এই ফল ড্রাগন হিসেবে বেশ পরিচিত।
একাধিক রঙের হয়ে থাকলেও লাল রঙের এটি বেশী হয়ে থাকে। আমাদের দেশে গত কয়েক বছর আগে বিভিন্ন দেশে থেকে চারা আমদানি করে শখের বশে অনেকেই বাড়ীর ছাদে কিংবা আঙিনায় বা নার্সারীতে আবাদ শুরু করে। যা বর্তমানে অনেকেই এটি বানিজ্যিকভাবে চাষ শুরু করেছেন। ড্রাগন ফল মূলতঃ আমেরিকার প্রসিদ্ধ একটি ফল। যা বর্তমানে আমাদের দেশেও ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
আমাদের দেশে সর্বপ্রথম ২০০৭ সালে আমেরিকার ফ্লোরিডা, ভিয়েতনাম থেকে এই ফলের বিভিন্ন জাত এনে আবাদ শুরু করা হয়। এই ফল ক্যাকটাস জাতীয় । এই ফলের গায়ে কোন পাতা নেই । যা সাধারনতঃ ১.৫ থেকে ২.৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। বর্তমানে আমাদের দেশে বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউট(বারি) কর্তৃক উদ্ভাবিত ড্রাগন ফল-১ যা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। এই জাতের ড্রাগন ফলের আকার বড়, পাকলে খোসার রং লাল হয়ে যায়, শাঁস গাঢ় গোলাপী রঙের, লাল ও সাদা এবং রসালো সুস্বাদু প্রকৃতির ।
ফলে বীজ গুলো ছোট ছোট কালো ও নরম। একটি ফলের ওজন ১৫০ গ্রাম থেকে ৬০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে। এটি একটি উন্নত পুষ্টিগুন সম্পন্ন ফল হিসেবে আজ বিবেচিত।
উপজেলা কৃষি অফিসার হীরক কুমার সরকার বলেন, দেশের অন্যান্য স্থানের ন্যায় মণিরামপুর উপজেলায় গত কয়েকবছর ধরে সৌখিনভাবে এবং বানিজ্যিকভাবে ড্রাগন ফলের আবাদ হচ্ছে। উপজেলার রোহিতা গ্রামের প্রদীপ বিশ্বাস বছর তিনেক আগে ১০ শতক জমিতে বানিজ্যিকভাবে ড্রাগন চাষ করে বেশ লাভবান হওয়ায় এই ফলের আবাদের ব্যাপকতা লাভ করেছে।
উপজেলার শ্যামকূড় ইউনিয়নের লাউড়ী গ্রামের আফজাল হোসেন একজন সফল ড্রাগন ফল চাষী। আফজাল গত তিন বছর আগে তার বিশাল ফলের বাগানের সাথে ড্রাগন ফল চাষ করে বেশ লাভবান হয়েছেন বলে তিনি জানান। বর্তমানে মণিরামপুর উপজেলার খানপুর ও ভোজগাতী ইউনিয়নে ও কয়েকজন চাষী উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শ মোতাবেক ড্রাগন ফল চাষ করছেন বলে তিনি জানান।
তিনি আরও জানান, দেশে উৎপাদিত বারি ড্রাগন ফল-১ এর চারা বেশ উন্নত জাতের। এই জাতের ড্রাগন থেকে চাষীরা তাদের বাগানে নিজস্ব প্রযুক্তিতে চারা উৎপাদন করে বাগান বড় করতে পারছেন পাশাপাশি উৎপাদিত চারা বিক্রি করেও লাভবান হচ্ছেন। ড্রাগন ফলের আবাদ আমাদের দেশের কৃষকদের জন্য এক সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে তিনি তাঁর মন্তব্যে উল্লেখ করেন।