হোম অন্যান্যলিড নিউজ মণিরামপুরে সাবেক চরমপন্থি নেতা রফিক হত্যাকান্ডে অজ্ঞাত ব্যক্তির নামে মামলা

মণিরামপুরে সাবেক চরমপন্থি নেতা রফিক হত্যাকান্ডে অজ্ঞাত ব্যক্তির নামে মামলা

কর্তৃক
০ মন্তব্য 98 ভিউজ

মণিরামপুর প্রতিনিধি :

যশোরের মণিরামপুরে সাবেক চরমপন্থি নেতা রফিকুল ইসলামকে প্রকাশ্যে দুপুরে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যাকান্ডের ঘটনায় নিহতের স্ত্রী শিরিনা বেগম বাদি হয়ে বৃহস্পতিবার রাতে অজ্ঞাত ৬/৭ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করেছেন। হত্যাকান্ডে জড়িত সন্দেহে হাদিউজ্জামান নামে একজনকে আটক করার খবর পাওয়া গেলেও পুলিশ স্বীকার করেনি।

অন্যদিকে ময়না তদন্তের পর শুক্রবার দুপুরে জানাজা শেষে মধুপুর গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে রফিকুল ইসলামের লাশ দাফন করা হয়েছে। স্থানীয় আওয়ামীলীগের দুগ্রুপের অভ্যন্তরীন কোন্দলের জের ধরেই এ হত্যাকান্ড সংগঠিত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানাগেছে। হত্যাকান্ডের ঘটনায় বর্তমান এলাকায় চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। ফলে এলাকায় পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে।

মামলার তদন্তকারী অফিসার ওসি(তদন্ত) শিকদার মতিয়ার রহমান জানান, তিন কন্যা সন্তানের জনক রফিকুল ইসলামের বর্তমান পেশা ছিল ইজিবাইক চালক। বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টার দিকে মধুপুর বাজার থেকে যাত্রী নিয়ে সুন্দলী বাজারে যান। সেখান থেকে ফেরার পথে দুপুর দেড়টার দিকে উপজেলার কুচলীয়া-দিগঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে পৌছলে অজ্ঞাত সন্ত্রাসীরা রাস্তায় ব্যারিকেট দিয়ে রফিকুল ইসলামকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানোর পর বুকে দুই রাউন্ড গুলি করে। পরে তার গলাকেটে হত্যা নিশ্চিত করে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়।

হরিদাসকাটি ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক আলমগীর কবির লিটন এবং এলাকাবাসী জানান, রফিকুল ইসলাম ইতিপূর্বে চরমপন্থি সংগঠন পূর্ববাংলা কমিউনিষ্ট পার্টির আঞ্চলিক নেতা ছিলেন। বর্তমান সে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে ইজিবাইক চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন। রফিকুল স্থানীয় আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। মধুপুর বাজারে আওয়ামীলীগের মধ্যে দুইটি গ্রুপ বিবদমান রয়েছে। এক গ্রুপের নেতৃত্ব দেন কলেজ শিক্ষক বুলবুল আহমেদ এবং অপর গ্রুপের নেতৃত্ব দেন পল্লী চিকিৎসক হাদিউজ্জামান রানা।

তবে রফিকুল ইসলাম ছিলেন বুলবুল গ্রুপের। যদিও বুলবুল আহমেদ জানান, তার কোন গ্রুপ নেই। অভিযোগ রয়েছে আধিপত্য বিস্তরকে কেন্দ্র করে রোববার রাতে স্থানীয় ব্যবসায়ী জাবের হোসেনের বাড়িতে বোমা হামলা চালায় হাদিউজ্জামান গ্রুপের মুছা, শিফনসহ বেশ কয়েকজন। এ ঘটনায় রফিকুল ও তার লোকজন প্রতিবাদ করেন। এছাড়াও গত ২ এপ্রিল মধুপুর বাজারে বুলবুল আহমেদ এবং হাদিউজ্জামান রানা গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।

এতে রানা গ্রুপের ইউনিয়ন ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক মুছা এবং মানিক, আলিম এবং হাসান আহত হয়। এ ঘটনায় বুলবুল গ্রুপের মধ্যে রফিকুল ইসলাম, মেহেদী হাসানসহ ১১ জনের নামে মামলা করেন। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকার একাধিক ব্যক্তি জানান, এরা প্রকাশ্যে আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকলেও গোপনে চরমপন্থিদের সাথে রয়েছে তাদের বেশ সখ্যতা।ধারনা করা হচ্ছে এসব বিরোধকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের হাতেই খুন হতে হয় রফিকুলকে।

ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক আলমগীর কবীর লিটন জানান, রফিকুল হত্যাকান্ডের পর থেকে মধুপুর বাজারের ব্যবসায়ী আওয়ামীলীগ নেতা মেহেদী হাসানের ফোনে শিপন নামে এক ব্যক্তি নিজেকে চরমপন্থি নেতা পরিচয় দিয়ে একলাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছে। দুইদিনের মধ্যে টাকা পরিশোধ করা না হলে রফিকুলের মত মেহেদী ও লিটনকে হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছে।

আর এর পেছনে হাত রয়েছে ছাত্রলীগ নেতা মুছার। অবশ্য রফিকুল হত্যার পর থেকে মুছা এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে। লিটন আরো জানান, এ ব্যাপারে থানা পুলিশকে অবহিত করা হয়েছে। অন্যদিকে রফিকুল হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ শুক্রবার সকালে মধুপুর থেকে আওয়ামীলীগ নেতা পল্লী চিকিৎসক হাদিউজ্জামান রানাকে আটক করে।

তবে আটকের সত্যতা অস্বীকার করে মামলার তদন্তকারী অফিসার ওসি(তদন্ত) শিকদার মতিয়ার রহমান জানান, প্রাথমিক তদন্তে জানাগেছে রফিকুল হত্যাকান্ডে চরমপন্থি কানেকশন রয়েছে। ধারনা করা হচ্ছে চরমপন্থিদের ভাড়া করে এ হত্যাকান্ড ঘটানো হয়েছে। তবে আরো তদন্তের পর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে। ওসি(সার্বিক) রফিকুল ইসলাম জানান, খুনিদের আটকের জন্য এলাকায় পুলিশের সাড়াশি অভিযান চলছে।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন