রিপন হোসেন সাজু,মণিরামপুর (যশোর) :
যশোরের মণিরামপুর ও অভয়নগর উপজেলায় ম্যাজিষ্ট্রেট, বিএসটিআই’র কর্মকর্তা ও সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে চাঁদাবাজির সময় অভয়নগর থানা পুলিশ এক ভুয়া ম্যাজিষ্ট্রেটসহ ৪ জনকে আটক করেছে।
মণিরামপুর থানার এলাকা থেকে তাদের আটক করে অভয়নগর থানা পুলিশ। মঙ্গলবার দুপুরে মণিরামপুর উপজেলার ঢাকুরিয়া বাজারে এ ঘটনা ঘটে।
আটককৃতরা হলো- ম্যাজিষ্ট্রেট পরিচয়দানকারী খুলনার দৌলতপুর থানার দক্ষিণ পাবলা এলাকার নূর মোহাম্মদের ছেলে শাহাদাত হোসেন (৩৫), বিএসটিআই’র কর্মকর্তা পরিচয়দানকারী একই এলাকার এস এম বাবর আলীর ছেলে মোস্তফা ফয়সাল, একটি অনলাইনের সাংবাদিক পরিচয়দানকারী খুলনা জেলার খালিশপুর থানার গোয়ালখালী এলাকার আব্দুর রাজ্জাকের মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস ইতি (২২) ও পত্রিকার সম্পাদক পরিচয়দানকারী ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার আলোকদিয়া এলাকার জহিরুল ইসলাম।
পুলিশ তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন নামস্বর্বস্ব দৈনিক ও অনলাইন পত্রিকার পরিচয়পত্র, সিল, পিএম টিভির লোগোসহ বুম, লাঠি, ভিজিটিং কার্ড, তথ্য প্রাপ্তির আবেদন ফর্ম ও নগদ টাকা উদ্ধার করেছে। জব্দ করেছে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত দুইটি ওয়াকিটকি ও একটি প্রাইভেট কার (ঢাকা মেট্রো গ- ২৩-৪৩২৯)। মঙ্গলবার বিকালে উপজেলার সীমান্তে ঢাকুরিয়া বাজার থেকে তাদেরকে আটক করা হয়।
মণিরামপুর উপজেলার কুয়াদা বাজারে ভুয়া ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্র্যাম্যমান আদালতের টিম জনতা কর্তৃক আটকের খবরে মণিরামপুর থানার ওসি রফিকুল ইসলাম ঘটনাস্থলে পৌঁছান, কিন্তু অভয়নগরের একটি রাইস মিল ও প্রেমবাগ বাজারে হোটেলে চাঁদাবাজীর ঘটনায় অভয়নগর থানা পুলিশ তাদেরকে আটক করতে অভিযান চালিয়ে ততক্ষনে ঘটনাস্থলে পৌছে যায়।
ঢাকুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ভুয়া ম্যাজিস্ট্রেট ও তার টিমকে গণপিটুনির হাত থেকে রক্ষা করতে ইউনিয়ন পরিষদের হেফাজতে রাখেন। পরে অভয়নগর থানা পুলিশ সেখান থেকে তাদেরকে আটক করে নিয়ে যায়।
অভয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাজুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার বিকালে উপজেলার সীমান্তবর্তী ঢাকুরিয়া বাজারে ভুয়া মেজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা হচ্ছিল। তাদের আচরণ সন্দেহজনক মনে হলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা তাদেরকে আটক করে পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একজন নারী ও তিনজন পুরুষকে একটি প্রাইভেট কারসহ উদ্ধার করে রাতে থানায় নিয়ে আসে।
আটককৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা নিজেদেরকে বিভিন্ন পত্রিকার সাংবাদিক দাবি করেন এবং পরিচয়পত্র দেখান। এসময় তাদের ব্যাগ তল্লাশী করা হলে দুইটি সিল, একটি পিএম টিভির লোগোসহ বুম, দুইটি লাঠি, অসংখ্য ভিজিটিং কার্ড, তথ্য প্রাপ্তির দুইটি আবেদন ফর্ম ও নগদ ২৯ হাজার ৯০০ টাকা পাওয়া যায়।
অভয়নগর থানা ওসি আরও জানান, একটি প্রতারকচক্র ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয়ে গত ২৩ আগস্ট অভয়নগরের প্রেমবাগ গেটের দুই হোটেল মালিক ও মাগুরা বাজারের এক রাইস মিল মালিকের নিকট থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। মঙ্গলবার ওই প্রতারকচক্র ঢাকুরিয়া বাজারে ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয়ে অভিযান করছে, এমন সংবাদের ভিত্তিতে অভয়নগর থানা পুলিশ তাদেরকে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন।
রাতে আটককৃদের সামনে অভিযোগকারী ওই তিন ব্যবসায়ীকে আনা হলে দধি ঘরের মালিক মতিয়ার রহমান বলেন, জান্নাতুল ফেরদৌস ইতি নিজেকে ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয় দিয়ে দুই লাখ টাকা জরিমানা করলে পাঁচ হাজার টাকায় আমি মুক্তি পায়।
প্রেমবাগের বনলতা সুইটস এর মালিক মুরাদ হোসেন জানান, এই নারীসহ আটককৃত তিন ব্যক্তি আমার দোকানে অভিযান চালিয়ে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে মিস্টি তৈরি করার দায়ে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করেন। আমি ১০ হাজার টাকা দিলে তারা চলে যায়।
মাগুরা গ্রামের রাইস মিল মালিক আব্দুল মজিদ জানান, গত ২৩ আগস্ট বিকালে এই আটককৃত চারজন আমার মিলে নিজেদেরকে ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন কাগজপত্র দেখতে চান। কাগজপত্র ও পরিবেশ অধিদপ্তরের লাইসেন্স নাই এমন অভিযোগে তারা দুই লাখ টাকা দাবি করেন। এসময় বাকবিতন্ডা শুরু করলে তারা বেরিয়ে যায়।
আটককৃতরা জানান, আমরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা নিলেও নিজেদেরকে ম্যাজিস্ট্রেট দাবি করিনি। এ ঘটনায় আটককৃতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে বলে অভয়নগর থানা ওসি নিশ্চিত করেন।