রিপন হোসেন সাজু, মণিরামপুর (যশোর) :
যশোরের মণিরামপুরের শ্যামনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে আটকে ১৫ বছর বয়সী এক তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে ওই প্রতিষ্ঠানের নৈশপ্রহরী আতাউর রহমানের বিরুদ্ধে।
এ ঘটনায় সোমবার মধ্যরাতে আতাউরের বিরুদ্ধে থানায় ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন ওই তরুণী। এর আগে সোমবার সন্ধ্যা রাতে আতাউর এবং ওই তরুণীকে বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে একসাথে দেখতে পেয়ে গণপিটুনি দিয়ে আটকে রাখেন স্থানীয়রা।
পরে নেহালপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আতিকুজ্জামান তাদের উদ্ধার করে থানা হেফাজতে নেয়। আতাউর শ্যামনগর গ্রামের আলী মুনসুরের ছেলে ও শ্যামনগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরী। ধর্ষণের শিকার ওই নারীর বাড়ি একই গ্রামে। তিনি অভয়নগরের নওয়াপাড়ার একটি পাটকলের শ্রমিক।
জানা যায়, আতাউর ২০১৬ সাল থেকে শ্যামনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চুক্তিভিত্তিক নৈশপ্রহরী হিসেবে কর্মরত। ধর্ষণ মামলা হওয়ায় এবার তাঁর চাকরির চুক্তি বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। এর আগেও একবার বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে এক নারীসহ ধরা পড়ায় আতাউরকে চাকরি থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।
মণিরামপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) যোগেশ চন্দ্র মন্ডল জানায়, সোমবার সন্ধ্যায় শ্যামনগর বাজারে ডাক্তার দেখিয়ে স্কুল মাঠ দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন ওই তরুণী। আতাউর তখন স্কুলের বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। বাদীকে একা দেখতে পেয়ে আতাউর ডাক দেন। তিনি বারান্দায় উঠতেই আতাউর তাঁকে টেনে তার অফিস কক্ষে নিয়ে যান। তখন জোর করে ওই নারীকে তার ধর্ষণ করেন আতাউর।
এসময় ঘটনাটি দেখে ফেলেন আশপাশের লোকজন। তখন তারা আতাউরকে ধরে মারপিট করেন। খবর পেয়ে আতাউর ও ভুক্তভোগী তরুণীকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসি।
এদিকে স্থানীয়রা জানান, ওই তরুণীর বাড়ি ঘটনাস্থল থেকে খানিকটা দূরে। ওইদিন সন্ধ্যায় সেখানে ইউপি নির্বাচনী সভা চলছিল। সভার লোকজন তাদের বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে ঢুকতে দেখে ফেলেন। তখন তাঁরা এসে দু’জনকে বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে ধরে ফেলেন।
স্থানীয়রা বলেন, লোকজন দেখে আতাউর পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তখন তাঁকে গণপিটুনি দিয়ে অফিসকক্ষে ওই নারীর সাথে আটকে রাখা হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি বলেন, আতাউরের অত্যাচারে এক প্রকার ওই গ্রামের লোকজন অতিষ্ঠ ছিল। সে সরকারি ঘর পাইয়ে দেওয়ার নাম করে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
এদিকে আতাউরের বহিষ্কারের দাবিতে মঙ্গলবার সকালে স্কুল ঘেরাও করেন বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। এ সময় তাঁরা আতাউরের স্থায়ী বহিষ্কারের দাবীতে ইউএনও এবং উপজেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর গণস্বাক্ষর দেন। তাদের দাবী আতাউরের স্থায়ী বহিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের ক্লাস বর্জনসহ প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেন।
মণিরামপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাহবুবুর রহমান বলেন, আতাউরের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করেছেন ভুক্তভোগী তরুণী। মঙ্গলবার দুপুরে তাঁকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। মণিরামপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সেহেলী ফেরদৌস বলেন, আতাউরের ঘটনা শুনেছি। তাঁর নিয়োগ চুক্তিভিত্তিক। নিয়োগ চুক্তি বাতিল করে কাগজপত্র আমার অফিসে পাঠাতে প্রধান শিক্ষককে নির্দেশনা দিয়েছি।
