হোম অন্যান্যসারাদেশ মণিরামপুরে বঙ্গবন্ধুর মূর‌্যাল নির্মাণ নিয়ে চঞ্চল্যকর তথ্য

মণিরামপুরে বঙ্গবন্ধুর মূর‌্যাল নির্মাণ নিয়ে চঞ্চল্যকর তথ্য

কর্তৃক
০ মন্তব্য 98 ভিউজ

নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর:
যশোরের মণিরামপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মূর‌্যাল নির্মাণ নিয়ে চঞ্চল্যকর তথ্য বের হতে শুরু হয়েছে। মূর‌্যাল নির্মাণ নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে বিবাদ সৃষ্টি হয় উপজেলা চেয়ারম্যান নাজমা খানমের। এ নিয়ে জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভও তৈরি হয়।

জানা গেছে, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে সারা দেশে প্রতিটি উপজেলায় একটি করে বঙ্গবন্ধুর মূর‌্যাল নির্মাণ করার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। গেল ৩০ জুনের মধ্যে মূর‌্যাল নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু মণিরামপুরে মূর‌্যাল নির্মাণ নিয়ে বিবাদ তৈরি হওয়ায় এ কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি।
সূত্র জানায়, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মূর‌্যাল নির্মাণের সিদ্ধান্ত চেয়ে উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছে ফাইল পাঠান এবং মৌমিতা এন্টারপ্রাইজের নামে প্রস্তাব পাঠানো হয়। কিন্তু উপজেলা চেয়ারম্যান নাজমা খানম তার ছেলে অভিকে কোটেশনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মূর‌্যাল নির্মাণের কাজ করাতে চেয়েছিলেন। এজন্য তিনি টালবাহানা করে আসছিলেন। এ কারণে তিনি আড়াই মাস ফাইল আটকে রাখেন।

সূত্র জানায়, উপজেলা মাসিক উন্নয়ন সমন্বয় সভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মূর‌্যাল নির্মাণ নিয়ে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য অসুস্তুষ্ট প্রকাশ ও ভৎসনা করেন। মন্ত্রীর সাথে সাথে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পৌর মেয়র কাজী মাহমুদুল হাসান, সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক ফারুক হোসেন, উপজেলা দুই ভাইস চেয়ারম্যান এবং ১৭ ইউপি চেয়ারম্যান উপজেলা চেয়ারম্যান ফাইল আটকানোর কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

এরপর তিনি আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। স্থানীয় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হাত করেন। ভৎসনাকারীদেরকে তিনি শায়েস্তা করতে উঠেপড়ে লাগেন। সম্প্রতি উপজেলা চেয়ারম্যান নাজমা খানম উপজেলার দুই ভাইস চেয়ারম্যান, দুই ইউপি চেয়ারম্যানসহ ৫জনের নামে শ্লীতহানির মামলা পর্যন্ত করেছেন।

তবে নাজমা খানম এ বিষয়ে জানান, বঙ্গবন্ধুর মূর‌্যাল নির্মাণের কাজ কোটেশনের মাধ্যমে করা হবে। কাজ এখনো শুরু হয়নি। ১০/১৫ দিনের মধ্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে কথা বলে এ কাজ শুরু হবে। তবে তিনি নিজের ছেলে অভিকে কাজ দেওয়ার বিষয়ে অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, মৌমিতা এন্টার প্রাইজ এ কাজ করছে। এর সাথে অভির কোন সম্পর্ক নেই।

সূত্র জানায়, নাজমা খানম নিজের স্বার্থসিদ্ধি হাসিলের জন্য সব রকম কাজ করতে পারেন। তার রোষানলে পড়ে অনেকেই আজ দুর্বিষহ জীবন যাপন করছেন। যার উদহারণ উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান উত্তম চক্রবর্তী বাচ্চু। গত ৪ এপ্রিল উপজেলা বিজয়রামপুর ভাই ভাই রাইস মিল থেকে ৫৫৫ বস্তা কাবিখার চাল জব্দ করে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এই চাল জব্দ হওয়ার সাথে সাথে উপজেলা চেয়ারম্যান নাজমা খানম এর দোষ চাপান উত্তম চক্রবর্তী বাচ্চুর উপর। তদন্ত ছাড়াই গণমাধ্যমে কাবিখার চালকে ত্রাণের চাল বলে জানান তিনি। আর চাল সিন্ডিকেটের সাথে ভাইস চেয়ারম্যান বাচ্চু জড়িত বলে তিনি বলেন।

তবে এ বিষয়ে ভাইস চেয়ারম্যান উত্তম চক্রবর্তী বাচ্চু বলেন, এই চালের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যে চাল জব্দ করেছে তা কিসের চাল তা আমার জানা নেই।
এদিকে, ওই চাল চুরির ঘটনায় তিনজনকে গ্রেফতার করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। পরে তাদের কাছ থেকে জোর পূর্বক সাদা কাগজে সইসহ উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান উত্তম চক্রবর্তী বাচ্চু নাম স্বীকার করতে বাধ্য করা হয় বলে তারা জানান। এজন্য জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কাছে দেওয়া জবানবন্দি প্রত্যাহার চেয়ে সম্প্রতি তারা যশোর আদালতে একটি নারাজি পিটিশন দাখিল করেছেন।

মামলার আসামি উপজেলার তাহেরপুর গ্রামের মৃত সোলাইমান মোড়লের ছেলে শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘১০ মে ইফতারির সময় আমাকে বাড়ি থেকে ডিবি পুলিশ উঠেয়ে নিয়ে গাড়ির মধ্যে মারপিট শুরু করে। এরপর আমাকে যশোর ডিবি কার্যালয়ে হাজির করে। সেখানে ডিবি পুলিশের কর্মকর্তারা আমাকে বলে, আমরা যে নাম তোকে বলবো, তুই সেই নামগুলো বলবি। যদি না বলিস তাহলে তোকে ক্রাসফায়ার দিয়ে দিবো। নাম না বলায় আবারও মারপিট শুরু করে। এরপর তারা কাগজে নাম লিখে দিয়ে বলে এসব নাম মুখস্ত কর। এরপর লাঠি নিয়ে আমার সামনে বসে বলে মুখস্ত নামগুলো বল, আমি তখন মুখস্ত নামগুলো বলি। আর তারা সেই দৃশ্য ভিডিও করে। এমনকি পরদিন আমার বাড়িতে লোক পাঠিয়ে ৮ লাখ টাকা দাবি করে। ফলে বাধ্য হয়ে আমি ডিবি পুলিশের শিখিয়ে দেওয়া নামগুলো বলতে বাধ্য হই।’

মামলার আর এক আসামি জুড়ানপুর গ্রামের রবীন্দ্র নাথ দাসের ছেলে জগদিশ দাস জানান, শহিদুলের ভিডিও দেখিয়ে আমাকে বলে, ‘আমরা লিস্ট দিচ্ছি, তুই এসব লোকের নামগুলো বলে দে। না বললে, তোকে কানাই তলা নিয়ে ক্রাসফায়ারে দেব। সেই সাথে মানষিক নির্যাতন চালায়। থার্ডডিগ্রি প্রয়োগের ভয় দেখায়। ফলে বাধ্য হই তাদের শেখানো নামগুলো বলতে।’

এ মামলার অন্যতম আসামি জুড়ানপুর গ্রামের আকবর আলী মোড়লের ছেলে কুদ্দুস জানায়, গত ১৩ জুলাই তাকে বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে পিট মুড়া দিয়ে বেধে টেবিলের নিচে মাথা দিয়ে মারপিট শুরু করে। আমার পুরুষঙ্গ নষ্ট করার ভয় দেখায়। বলে চাল চুরির ঘটনায় তারা যা বলবে তাই বলতে হবে। আমি মারপিট থেকে বাঁচতে তাদের শেখানো কথা বলতে বাধ্য হই।

এদিকে অপর একটি সূত্র জানায়, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের শীর্ষ এক কর্মকর্তা মণিরামপুর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন লাভলুর যশোর শহরের বাসায় ভাড়া থাকতেন। এরই সূত্র ধরে আমাজাদ হোসেন লাভলুর সাথে ওই কর্মকর্তার দহরম-মহরম সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিগত উপজেলা নির্বচনে আমজাদ হোসেন লাভলু মনোনয়ন না পাওয়ার শোধ তুলতে গোয়েন্দা পুলিশের ওই কর্মকর্তাকে ব্যবহার করেন।

এমনকি বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন। তিনি চালকে রাজনীতির চাল হিসেবে ব্যবহার করেন ডিবি পুলিশকে দিয়ে। আমজাদ হোসেন লাভলু উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়ন বঞ্চিত হন। পরে দলেও কোন ঠাসা হয়ে পড়েন। আর এর প্রতিশোধ নিতে তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান নাজমা খানমের সাথে গাটবাঁধেন। স্থানীয় শীর্ষ এক জনপ্রতিনিধির উন্নয়ন মূলক কর্মকান্ডকে হেয় করাতে উঠে পড়ে লাগেন। যার সর্বশেষ চাল চুরির নাটক সাজিয়ে মণিরামপুরের রাজনীতি নতুন মেরুকরণ সৃষ্টি করেছেন।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন