হোম অন্যান্যসারাদেশ মণিরামপুরে টানা বৃষ্টিতে প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও পাঁচ শতাধিক মৎস্যঘের জলাবদ্ধ

রিপন হোসেন সাজু, মণিরামপুর (যশোর) :

স্থায়ী জলাবদ্ধতায় জর্জরিত ভবদহ পাড়ের মানুষের ভোগান্তি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে গত কয়েকদিনের বৃষ্টি। টানা বৃষ্টির কারনে মণিরামপুরে জলাবদ্ধতার চরম অবনতি হয়েছে।

এলাকার অন্তত: সাত’শ বাড়ি ঘর, পাঁচ শতাধীক মৎস্যঘের, প্রায় দুই হাজার হেক্টর ফসলের ক্ষেত এবং প্রায় ৩০ টির অধিক বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। মহামারি করোনার প্রাদূর্ভাবে প্রায় দেড় বছর পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু হলেও ভবদহ এলাকায় এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পানিবন্দি হওয়ায় শিক্ষার্থীদের যাতায়াত করতে অবর্ননীয় দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

সরেজমিনে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘুরে শিক্ষার্থীদের দূর্ভোগের ভিন্ন ভিন্ন চিত্র চোখে পড়ে। গত রোববার সরেজমিনে জানাযায়, কয়েকদিনের বৃষ্টিপাতে উপজেলার ভবদহ সংলগ্ন হরিদাসকাটি ইউনিয়নের চান্দুয়া সমসকাটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠটি তলিয়ে শ্রেণীকক্ষের বারান্দা পর্যন্ত পানি উঠেছে।

ফলে রাস্তা থেকে শিক্ষার্থীদের পানি ভেঙ্গে শ্রেণীকক্ষে আসতে হচ্ছে। বেলা ১০ টায় কয়েকজন ছাত্রীকে বিদ্যালয়ের পানিভর্তি মাঠ ভেঙ্গে শ্রেণীকক্ষে আসতে দেখা যায়। এসময় কথা হয় ১০ম শ্রেণীর ছাত্রী সামিরা খাতুন, রাজিয়া সুলতানা, পারুল খাতুনের সাথে। তারা জানান, বিদ্যালয়ের মাঠ পেরিয়ে বারান্দা পর্যন্ত পানিবন্দি হয়ে পড়ায় তাদের এখন পানিভেঙ্গে শ্রেণীকক্ষে আসতে হচ্ছে। বিদ্যালয়ে আসতে তাদের চরম দূর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। তার ওপর বারান্দা পর্যন্ত পানিবন্দি হয়ে পড়ায় এখন শুধুমাত্র শ্রেণীকক্ষেই অবস্থান করতে হচ্ছে।

একই চিত্র চোখে পড়ে নেহালপুর ইউনিয়নের বালিদহ পাঁচাকড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। পানিবন্দি মাঠ পেরিয়ে জামাকাপড় ভিজে শিক্ষার্থীদের শ্রেণী কক্ষে আসতে হচ্ছে। তার পরও শিক্ষার্থীরা ক্লাশ করতে পেরে খুশি। আবার হাটগাছা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণী কক্ষে পানি উঠায় ইট দিয়ে মেঝে উচু করা হয়েছে।

এছাড়া পানিবন্দি হয়ে পড়েছে পাঁচকাটিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়, এজিএম মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বিএইচএম মাধ্যমিক বিদ্যালয়, নেবুগাতী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মুক্তেশ্বরী ডিগ্রি কলেজ, মশিয়াহাটি ডিগ্রি কলেজ, দিগঙ্গা-কুচলিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বাজে কুলটিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কুলটিয়া বালিকা বিদ্যালয়, আলিপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বাগডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বাজে কুলটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কুলটিয়া সরকারি, হাটগাছা সুজাতপুর সরকারি, হাটগাছা মধ্যপাড়া সরকারি, সুজাতপুর দক্ষিণ সরকারি, বাগডাঙ্গা দহকুলা সরকারি, শ্রী শ্রী রাধাকৃষ্ণ আশ্রম সেবাসংঘ, লখাইডাঙ্গা সরকারি, চান্দুয়া সরকারি, শ্রীপুর সরকারি, নেবুগাতী সরকারি, হাজিরহাট সরকারি, মধ্যপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ২৫ টির অধিক বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

ফলে শিক্ষক, কর্মচারী, শিক্ষার্থীদের অবর্ননীয় দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বালিদহ পাঁচাকড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সঞ্জিত মন্ডল জানান, পানিভেঙ্গে আসতে বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা বেশি দূর্ভোগের শিকার হচ্ছে। ফলে ম্যানেজিং কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বিদ্যালয়ের মাঠে বাশের সাকো স্থাপনের। চান্দুয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাপস কুমার পাল জানান, ঝুঁকির মধ্যে অতিকষ্টে শ্রেণী কক্ষে শিক্ষার্থীদের পাঠদান দেওয়া চলছে।

এদিকে পানিবন্দি হবার খবর পেয়ে সোমবার সকালে জেলা শিক্ষা অফিসার একেএম গোলাম আযম ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বিকাশ চন্দ্র সরকার পানিবন্দি হওয়া বালিদহ পাঁচাকড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, হাটগাছা মাধ্যমিক ও কুলটিয়া বালিকা বিদ্যালয় পরির্দশন করে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের সাথে আলাপ করে তাদেরকে বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দেন।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বিকিাশ চন্দ্র সরকার পরিদর্শন শেষে জানান, ইতিমধ্যে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। তবে ৭/৮ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরিস্থিতি বেশ অবনতি হয়েছে। এ ব্যাপারে করনীয় সম্পর্কে উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে আলাপ আলোচনা চলছে।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন