রিপন হোসেন সাজু, মণিরামপুর (যশোর) :
যশোরের মণিরামপুরে মহামারী করোনায় আর্থিক অনটনের মধ্যে কৃষকরা যখন আমন ধানের পরিপূর্ণ পরিচর্যা করে পাকা ধান কাটার স্বপ্ন দেখছিল তখন ক্ষেতে কারেন্ট পোকা ও খোলপঁচা রোগের প্রভাবে সেই স্বপ্ন বিলীন হতে চলেছে।
অপরদিকে উপজেলার ভবদহ অঞ্চলে জলাবদ্ধতার কারণে ৬ ইউনিয়নে কৃষকরা আমন ধানের চাষ করতে পারেনি। বাকী ১১ ইউনিয়ন ও পৌর এলাকায় বিভিন্ন জাতের আমন ধানের চাষ করা হয়েছে।
কৃষি অফিস জানায়, চলতি মৌসুমে ২২ হাজার ৪’শ ৫০ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও অতিরিক্ত ২’শ হেক্টর জমিতে বেশী চাষ করা হয়েছে। ধান ক্ষেতে কারেন্ট পোকা ও খোলপঁচা রোগ প্রভাব বিস্তার করায় কৃষকদের পরামর্শের মাধ্যমে সচেতন করতে কৃষি অফিস নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তবে দিশেহারা কৃষকরা ধানে কারেন্ট পোকা ও খোলপঁচা রোগা থেকে নিরাময়ের জন্য সঠিক ঔষধ প্রয়োগে আক্রান্ত ধানের গাছ নিয়ে বাজারের কীটনাশক বিক্রেতার নিকট ছুটছেন।
উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের সাথে কথা বলে জানাগেছে, চলতি মৌসুমে আমন ধান রোপনের পর থেকে আবহাওয়া অনুকূল থাকায় ফলন খুবই ভাল হবে বলে মনে হয়েছিল। কিন্ত জমিতে ধানের শীষ বের হওয়ার পর প্রথমে কারেন্ট পোকার আক্রমণে ধানের গাছ শুকাতে শুরু করে। ফলে ক্ষেতে ধানের তুলনায় চিটাই বেশী হবে। অপরদিকে খোলপঁচা রোগে ধানের শীষসহ গাছের গোড়া পর্যন্ত পঁচন ধরেছে।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের দেবীদাসপুর গ্রামের কৃষক সবুজ হোসেন জানান, তিনি চার হেক্টর জমিতে উফসি গুটিস্বর্ণ এবং ব্রি৭৫, ব্রি ৮৭ ও ব্রি৪৮ জাতের ধানের চাষ করেছেন। কিন্তু কারেন্ট পোকা ও খোলপঁচা রোগে চাষকৃত জমির অর্ধেক ধান শেষ হয়ে গেছে, অনেক কিছু স্প্রে করেছি কিন্তু কোন কিছুতে কাজ হয়নি।
তিনি আরো জানান, ১২ থেকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে কারেন্ট পোকা ধানের শীষ চুষে নষ্ট করে ফেলে। উপজেলার মকমতলা খানপুর এলাকার কৃষক গোলাম রসুল বলেন, করোনার কারনে অভাব-অনটনের মধ্যে অনেক কষ্ট করে আমনের চাষ করেছিলাম। কিন্তু কারেন্ট পোকার আক্রমণে সব শেষ করে দিয়েছে।
উপজেলার খেদাপাড়া ইউনিয়নের চাঁদপুর এলাকার কৃষক নিরঞ্জন দাস জানান, এবার আমন ধানে যে খোলপঁচা ও কারেন্ট পোকার দাপট তাতে মনে হয় ধান কাটার জন্য কাঁচি নিয়ে মাঠে যাওয়া লাগবেনা।
জানতে চাইলে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা হাসিনা বেগম বলেন, আমন ধানের ক্ষেতে বিভিন্ন ধরনের পোকা-মাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে এমিস্টার টপ, ফলিকুর, এমিস্কোর, নাটিভো এবং কমবি-টু ছত্রাকনাশক স্প্রে করা যেতে পারে।
এছাড়া, কারেন্ট পোকা দমনে প্লেনাম, কসিডর, পাইরাজিন ব্যবহার করা যায়। তবে ক্ষেতে জমে থাকা অতিরিক্ত পানি সরিয়ে দিলে কারেন্ট পোক দমনে সহায়তা করে।
জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবুল হোসেন বলেন, খোলপঁচারোগ ও কারেন্ট পোকার আক্রমণ থেকে আমনের ক্ষেত রক্ষার জন্য মাঠে আলোর ফাঁদ তৈরী করাসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি কৃষকদের সচেতন করতে উপজেলার ইউনিয়ন পর্যায় লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে।