জাতীয় ডেস্ক :
সন্ত্রাসের মাধ্যমে ভয়ভীতি দেখিয়ে বর্তমান সরকার আবারও ক্ষমতায় আসতে চায় বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বৃহস্পতিবার (২ জুন) দুপুরে রাজধানীর বাসাবোর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের দেখতে গিয়ে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
এ সময় সরকারদলীয় লোকজন খাদ্যশস্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে অবৈধ মুনাফা লুটছে বলেও দাবি করেন তিনি।
সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় আহত ছাত্রদল নেতাকর্মীদের দেখতে বাসাবোর একটি হাসপাতালে যান বিএনপির মহাসচিব। এ সময় তাদের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন তিনি। পরে উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ক্ষমতাসীনরা সন্ত্রাসের মাধ্যমে ভয়ের রাজত্ব কায়েম করে আবারও আগামী নির্বাচনের বৈতরণী পার হতে চায়। জনগণের কঠোর প্রতিরোধে তা বিফলে যাবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার সন্ত্রাসের মধ্য দিয়ে ক্ষমতাকে ধরে রাখতে চায়, জনগণের ভালোবাসায় নয়। এটা হচ্ছে তাদের মৌলিক চরিত্র। আজ শুধু নয় বা এবারও শুধু নয়, প্রতিবার আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সন্ত্রাসের মধ্য দিয়ে তাদের রাজনীতিকে এখানে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছে।
তিনি আরও বলেন, তারা (ক্ষমতাসীনরা) সন্ত্রাস করে, ভয়ভীতি দেখিয়ে দেশের মানুষকে একটা ‘ফিয়ারো ফোবিয়া’র মধ্যে রেখে আবারও আগামী নির্বাচন করতে চায়, সেই নির্বাচনী তরি পার হতে চায়। বাংলাদেশের জনগণ এবার তা অবশ্যই হতে দেবে না। তাদের ক্ষমতা থেকে সরে যেতে হবে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীন নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় জনগণের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে এখানে নির্বাচন হতে হবে।
ক্ষমতাসীনদের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ আর কোনো রকমের সন্ত্রাসকে প্রশ্রয় দেবে না। জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের মধ্য দিয়েই এ সন্ত্রাসকে পরাজিত করে জনগণের বিজয় ঘোষিত হবে।
এ সময় মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, অবৈধ পন্থায় মুনাফা লাভে সরকারের লোকজন নিজেরাই চালসহ নিত্যপণ্যের সংকট তৈরি করে মূল্য বৃদ্ধি করছে।
তিনি বলেন, ‘আটা, ময়দা, দুধ, পাউরুটি দাম বেড়েছে… আমাদের গরিব লোকরা কী করে? বেশির ভাগ রিকশাশ্রমিক যারা, তারা দিনের বেলা রিকশা চালিয়ে ফুটপাত থেকে একটা কলা ও পাউরুটি খায়। আজ সেই রুটির দাম ডাবল হয়ে গেছে, তিন গুণ হয়ে গেছে। চালের দাম ১০-১৫ টাকায় উঠে গেছে। ১০ টাকা কেজি দরের চাল যেই ৬২ হাজার লোককে দেয়া হতো, সেখানে তারা ১৫ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে। অর্থাৎ, সরকার নিজেই এ মূল্য বৃদ্ধি করার জন্য সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করছে। তাদের কারসাজিতেই আজ খাদ্যপণ্য বলুন, খাদ্যদ্রব্য বলুন–এর মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং জনগণের দুর্ভোগ বাড়ছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমান সরকারের সমস্যাটা হচ্ছে, তারা সবকিছুর মধ্যেই অবৈধ মুনাফা চায় এবং জনগণের ন্যূনতম প্রয়োজন যেটা খাদ্য, এ খাদ্যকে তারা এখন জিম্মি করে প্রফিট নিতে চায়, মুনাফা লুটতে চায়। এটা আজকের ব্যাপার নয়, প্রথম ১৯৭৪ সালে যে দুর্ভিক্ষটা হয়েছিল, সেখানে কিন্তু খাদ্যসংকট ছিল তা নয়, দুঃশাসন-দুর্নীতির কারণে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল।
সরকার অন্যায়ভাবে দাম বাড়াচ্ছে, মজুত করছে, আটকে রাখছে। আর্টিফিশিয়াল একটা ক্রাইসিস তৈরি করে তারা বাজারে দামটা বাড়িয়ে দিচ্ছে বলেও জানান তিনি।
এ সময় ক্ষমতাসীনদের একতরফা নির্বাচনের পাঁয়তারা প্রতিহত করতে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনেরও কথা বলেন বিএনপির মহাসচিব।
দুপুর ১২টায় রাজধানীর বাসাবোতে হেলথ এইড ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ২৪ মে ছাত্রলীগের হামলায় গুরুতর আহত ছাত্রদলের সিনিয়র সহসভাপতি রাশেদ ইকবাল খান, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াইয়া ও উত্তর ছাত্রদলের নেতা শাহাবুদ্দিন শিহাবকে দেখতে যান বিএনপির মহাসচিব। এ সময় তিনি চিকিৎসকদের কাছ থেকে তাদের চিকিৎসার খোঁজখবর নেন। এ সময় বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, মহানগর দক্ষিণের সদস্যসচিব রফিকুল আলম মজনু, যুগ্ম আহ্বায়ক ইউনুস মৃধাসহ স্থানীয় নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
