হোম জাতীয় ভোটার নয়, সঠিক লোকদের তালিকা তৈরি করতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

ভোটার নয়, সঠিক লোকদের তালিকা তৈরি করতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

কর্তৃক
০ মন্তব্য 116 ভিউজ

অনলাইন ডেস্ক:
দলীয় কর্মী বা ভোটার বিবেচনা না করে ত্রাণ পাওয়ার যোগ্য সব সাধারণ মানুষের নামের তালিকা করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘কে দলের আর কে নয়, কে ভোট দিলো আর কে দিলো না, সেটা দেখে নয়, ত্রাণ বিতরণে প্রকৃত সাধারণ মানুষের নামের তালিকা তৈরি করতে হবে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বলবো তালিকা তৈরিতে প্রশাসনকে সহায়তা করুন। কোনও দুস্থ ও সাধারণ মানুষ যেন বাদ না পড়ে। সরকারি ত্রাণ সহায়তা যেন সঠিক লোকদের হাতে যায় সেটা দেখতে হবে।’

বৃহস্পতিবার (১৬ এপ্রিল) ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন জেলা প্রশাসনের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে মতবিনিময়-কালে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দলীয় নেতাদের এই নির্দেশনা দেন। তিনি ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, নরসিংদী, ফরিদপুর, মাদারীপুর, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর ও গোপালগঞ্জ জেলার কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় স্বাস্থ্য অধিদফতরও ভিডিও কনফারেন্সের সঙ্গে যুক্ত ছিল।

ত্রাণ বিতরণে আওয়ামী লীগের কমিটি গঠনের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের সংগঠনের যারা আছেন তাদের বলবো একেবারে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত কমিটি করে দিতে হবে। আমার ভোটার আমাকে ভোট দেয়, তার নাম যাবে−সেটা নয়, সাধারণ জনগণ, দুস্থ মানুষ যারা এখন অসুবিধায় আছে, তাদের নামের তালিকা করতে হবে। এ বিষয়টি আমি সুনির্দিষ্টভাবে বলতে চাই।’

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ কাজ করে জনগণের জন্য। কে কোন দল করে, কে আমার পক্ষে আর কে নয়, কে আমার ভোটার আর কে ভোটার না, এটা দেখার দরকার নেই। যার অবস্থা খারাপ, যে দুস্থ, ঘরে খাবার নাই, তাকে খাবার পৌঁছে দিতে হবে। আমি চাই আওয়ামী লীগের প্রত্যেকটা নেতাকর্মী সেই মানসিকতা নিয়ে কাজ করবে। সেইভাবে তালিকা করবে। আজকের এই ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সবাইকে এই মেসেজটা পৌঁছাতে চাই। এলাকায় কমিটি করার জন্য ইতোমধ্যে আমাদের নির্দেশনা চলে গেছে। এই কমিটি হবে প্রশাসনকে সহায়তার জন্য। যাতে করে সঠিক নামটা আসে। না হলে অনেক সময় দেখা যায় নির্বাচিত প্রতিনিধিরা তাদের কয়েকজন বাছাই করা লোকদের বা তাদের ভোটারদের নাম দেয়। বাকিরা বাদ পড়ে। এইবার যেন না পড়ে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এটার ব্যাপারে নজর রাখবেন। আমরা চাই একটি মানুষও যেন না খেয়ে কষ্ট না পায়। আল্লাহর রহমতে আমাদের প্রচুর খাবার আছে। আবার ধান কাটার সময় হয়ে গেছে। আলু উঠছে। ওষুধ-পত্র কোনও কিছুর অভাব নেই। অভাব থাকবে না। আমরা সেই ব্যবস্থা করবো।’

কেন্দ্রীয় অফিস থেকে নির্দেশনা পাঠানোর বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের নির্দেশনা ইতোমধ্যে চলে গেছে। ওয়ার্ড পর্যায়ে পর্যন্ত আমাদের আওয়ামী লীগের কমিটি রয়েছে। ত্রাণ বিতরণের জন্য আমাদের এই ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত আলাদা আলাদা কমিটি করতে হবে। প্রশাসন পুলিশ তালিকা করবে, এই তালিকাতে আপনাদের সহযোগিতা করতে হবে। যাতে করে কেউ বাদ না যায়।’

তিনি বলেন, ‘দল-মত নির্বিশেষে মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখে তালিকা তৈরি করতে হবে। প্রকৃত দুস্থদের কেউ যেন বাদ না যায়, তা দেখতে হবে। কেউ বাদ পড়লে প্রশাসনের পক্ষে যে কমিটি করা আছে, তাদের নিশ্চিত করে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। দল থেকে আমরা সহযোগিতা করার চেষ্টা তো করছি। সরকারিভাবে যে সহায়তা করা হচ্ছে, তা যেন সঠিক লোকদের হাতে যায়।’

তিনি বলেন, ‘যারা হাত পেতে খেতে পারে না, তাদের জন্য আমরা ১০ টাকা চালের রেশন কার্ডের ব্যবস্থা করবো। সেখানেও যাতে সঠিক নামের তালিকাটা যায়, তা দেখতে হবে। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি যারা আছে তাদের বলবো কে ভোট দিলো কে দিলো না সেটা নয়, জনগণ হিসেবে দেখে নামের তালিকা করবেন। আজ আমার সঙ্গে যে সব জেলা সম্পৃক্ত আছেন সবাই এটি শুনবেন, ধারণ করবেন এবং সেইভাবে কাজ করবেন। এটা আমার পার্টির প্রত্যেকটি নেতাকর্মীর প্রতি আমার নির্দেশ। প্রশাসনকে বলবো, আপনারা সম্পৃক্ত করে নেবেন যাতে সঠিক লোকদের চিনতে পারেন। কারণ সবাইকে আপনাদের পক্ষে চেনা সম্ভব নয়। স্থানীয়রা চেনেন ও জানেন।’

জেলাকে লকডাউন করে রাখতে হবে

ঢাকা বিভাগের ৯টি জেলার সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে মতবিনিময়কালে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সব জেলাকে লকডাউন করে রাখার নির্দেশনা দেন। তিনি বলেন, ‘বাইরের থেকে লোক যাতায়াতের কারণেই সমস্যাটা হচ্ছে। এজন্য জেলায় কাউকে ঢুকতে দেওয়া যাবে না। জেলাকে লকডাউন করে রাখতে হবে। আর যদি কেউ প্রবেশ করে, সঙ্গে সঙ্গে তাকে কোয়ারেন্টিনে রাখতে হবে। এজন্য আপনারা কোয়ারেন্টিনের জন্য জায়গা ঠিক করে রাখুন। কেউ জেলায় প্রবেশ করলেই সেখানে নিয়ে যাবেন। সেখানে ১৪ দিন আটকে রেখে তারপরে ছাড়তে হবে।’

ভিডিও কনফারেন্সে বেশিরভাগ জেলাই তাদের জেলায় করোনাভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার জন্য আক্রান্ত জেলা বিশেষ করে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জকে দায়ী করেন। তারা বলেন এসব আক্রান্ত এলাকা থেকে রোগী এসেই তাদের এখানে সমস্যা সৃষ্টি করেছে।

এসময়ে প্রধানমন্ত্রীও তার নির্বাচনি এলাকা টুঙ্গিপাড়ায় অন্য জেলা থেকে করোনা আক্রান্ত রোগী গিয়ে রোগটি ছড়িয়েছে বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা গোপালগঞ্জবাসী ভালোই ছিলাম। শিবচর থেকে টুঙ্গিপাড়া গিয়ে আমাদের এখানে সমস্যাটা করলো।’

গোপালগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান চৌধুরী এমদাদুল হক বলেন, ‘আমরা গোপালগঞ্জবাসী শান্তিতে ছিলাম। পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে করোনা রোগী আসার পরে আমাদের অবস্থা খারাপের দিকে যায়। তবে এখন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে।’ প্রধানমন্ত্রী এ সময় বয়সে প্রবীণ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে বাড়ি থেকে না বের হওয়ার পরামর্শ দেন।

নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু বলেন, ‘আমাদের প্রতিটি উপজেলায় করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। এছাড়া এখান থেকে যারা বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছে সেখানেও ছড়িয়ে পড়েছে। নারায়ণগঞ্জে করোনাভাইরাস শনাক্তকরণের গতি আরও বাড়িয়ে দিলে ভালো হয়।’

নরসিংদীর জেলা প্রশাসক বলেন, উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে নরসিংদী নারায়ণগঞ্জ ঢাকা পার্শ্ববর্তী জেলা। বুধবার পর্যন্ত এখানে ৪৪ জন করোনা রোগী চিহ্নিত হয়েছে।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা উদ্বেগের বিষয় যে নরসিংদীতে বেশকিছু রোগী চিহ্নিত হয়েছে। এটা যাতে আর না পারে, সে বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে।

ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ঢাকা মহানগরীর রোগীর সংখ্যা খুবই বেশি, এখানকার জনবসতি খুবই ঘন। এখানে রোগী ব্যবস্থাপনা এবং খাদ্য ব্যবস্থাপনা অন্য যে কোনও জেলার চেয়ে চ্যালেঞ্জিং। আমরা সবাই সমান হয়ে কাজ করলে ইনশাল্লাহ এটি ওভারকাম করতে পারবো।

তিনি বলেন, এটা সত্য যে বিভিন্ন জেলায় যে কারণে রোগী চিহ্নিত হয়েছে, তারা বেশিরভাগই ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে ছড়িয়েছে। তবে আমাদের এখনও ২০টি জেলা করোনামুক্ত রয়েছে। এই জেলাগুলোকে করোনামুক্ত রাখতে যদি বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয় সেটা একটি বড় কাজ হবে।

তিনি বলেন, লকডাউন এলাকার মানুষ যাতে নিত্যপণ্য পেতে পারে, তার জন্য আমরা অনলাইন মার্কেটিং-এর ব্যবস্থা করছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন ঢাকায় সব থেকে ঝামেলা।

ঢাকার শিল্পাঞ্চল পুলিশ সুপার বলেন, কিছু ছোট ছোট গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি যারা বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএ কারও সদস্য নয়, এসব গার্মেন্টসের শ্রমিকরা সময়মতো বেতন না পাওয়ায় বিভিন্ন জায়গায় রাস্তায় অবরোধ আন্দোলন করছে।

অতিকথনে বিরক্ত প্রধানমন্ত্রী

বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসনের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে মতবিনিময়কালে একাধিক স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বেশিক্ষণ বক্তব্য রাখায় বিরক্তবোধ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চলমান করোনাভাইরাস মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের করণীয় বিষয় এই ভিডিও কনফারেন্সে এসব জনপ্রতিনিধি বক্তব্যকালে নানা অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন তোলেন। সময় স্বল্পতার কারণে প্রধানমন্ত্রী নিজেই বারবার বক্তব্য সংক্ষেপ করার কথা বললেও তাদের কেউ কেউ বক্তব্য দীর্ঘায়িত করেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে বক্তব্যকালে মুন্সিগঞ্জ সদর আসনের সংসদ সদস্য মৃণাল কান্তি দাস পাঁচ মিনিটের বেশি কথা বলেন। এসময় তিনি করোনাভাইরাস বিষয় ছাড়াও অন্যান্য প্রসঙ্গে বক্তব্য দেন। প্রধানমন্ত্রী একাধিকবার তাকে থামতে বললেও তিনি বক্তব্য চালিয়ে যান এবং বক্তব্য শেষে সেখানে উপস্থিত আরও একজন সংসদ সদস্যকে ফ্লোর দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন বলেন। এসময় প্রধানমন্ত্রী বিরক্ত হয়ে বলেন, ‘আর সংসদ সদস্য দরকার নেই, যথেষ্ট হয়ে গেছে আমি সাধারণ সম্পাদকের সাথে কথা বলতে চাই। দরকার নাই স্টপ ইট। থামান।’

পরে তবুও দেওয়ার জন্য মাইক দেওয়া হয় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমানকে। তিনি বক্তব্য শুরুর আগেই প্রধানমন্ত্রী তাকে সতর্ক করে বলেন, ‘একটু সংক্ষেপে বলবেন। একেবারে লম্বা বক্তৃতা দেওয়ার জন্য এখানে বসি নাই। জাস্ট একটু কথা শোনার জন্য বসেছি।’

এর আগে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বক্তব্যকালে স্থানীয় সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু বক্তব্য দেন। প্রধানমন্ত্রী তাকেও সংক্ষিপ্ত বক্তব্য শেষ করার জন্য বারবার তাগাদা দেন।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন