আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়ে মানুষকে কেন ভয়-ভীতি দেখানো হচ্ছে— প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকার আদায় করেছে। ভোটের জন্য মানুষকে সচেতন করেছে। এরপরও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হঠাৎ এ ধরনের ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেয়ার কোনও যৌক্তিকতা নেই।
শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) ভয়েস অব আমেরিকাকে দেয়া এক সাক্ষৎকারে মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে এ কথা বলেন শেখ হাসিনা।
মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞার সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামীলীগ এ দেশের মানুষের ভোটের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করেছে। এ দেশের বহু মানুষ রক্ত দিয়েছে ভোটের অধিকার আদায়ের জন্য। অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন যেন হয় তার জন্য সব ধরনের সংস্কার করেছি। আজকে ছবিসহ ভোটার তালিকা, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ,মানুষকে ভোটের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করা এসব আমরা করেছি। তারপরও যুক্তরাষ্ট্রের এ ধরনের ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেয়ার কোনও যৌক্তিকতা আছে বলে আমি মানে করি ন।’
তিনি বলেন, ‘আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব’ – এই স্লোগান আমার দেয়া। আমরাই মানুষকে ভোট নিয়ে সচেতন করেছি। আমাদের দেশ বেশিরভাগ সময় মিলিটারি শাসকরা শাসন করেছে। তাদের সময় মানুষকে ভোট দেয়া লাগেনি। তারা শুধু ফল ঘোষণা করেছে। এরই প্রতিবাদে আন্দোলন করে আমরা আজকে আমাদের নির্বাচন সুস্থ পরিবেশে নিয়ে আসতে পেরেছি। এখন মানুষ তার ভোটের অধিকার নিয়ে সচেতন।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, আমাদের দেশের আইন অনুযায়ী, কোনও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা যদি কোনও অন্যায় করে তাহলে আমাদের দেশে তাদের বিচার হয়। এ বিচারে কেউ রেহাই পায় না। অনেক সময় তারা কোনও কাজ অতিরিক্ত করতে পারে কিন্তু তা করলে দেশের আইনেই তাদের বিচার হয়। যেখানে এ ধরনের বিচার হচ্ছে তাহলে এ নিষেধাজ্ঞা কী কারণে?
তিনি বলেন, ‘আমরা ২০০৯ এ সরকার গঠনের পর থেকে এখন পর্যন্ত যত নির্বাচন হয়েছে মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছে। এটা নিয়ে অনেক সময় অনেকে প্রশ্ন তোলার চেষ্টা করেছে। কিন্তু বাস্তবতা কী? বাংলাদেশের মানুষ তার ভোট নিয়ে সচেতন। কেউ ভোট চুরি করলে তাকে ক্ষমতায় থাকতে দেয় না।’
বিএনপির শাসনামলের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া ভোট চুরি করেছিল। তিনি দেড়মাসও ক্ষমতায় থাকতে পারেননি। ৩০ মার্চ জনগণের আন্দোলনে পদত্যাগে বাধ্য হন তিনি। আবার ২০০৬ সালে ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটরলিস্ট তৈরি করেছিল। সেই ভোটারলিস্ট নিয়ে যখন নির্বাচনের ঘোষণা দিলেন তখন জরুরি অবস্থা ঘোষণা হয়। নির্বাচন বাতিল হয়ে গেল। কাজেই আমাদের দেশের মানুষ ভোট নিয়ে যথেষ্ট সচেতন। একটা নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হবে এটাতো আমাদেরই দাবি। আন্দোলন করে আমরাই তা প্রতিষ্ঠা করেছি। এখন তারা নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে, সামনে আরও দেবে। এটা তাদের ইচ্ছা। আমাদের দেশের মানুষের যে ভোটের অধিকার, ভাতের অধিকার, বেঁচে থাকার অধিকার, শিক্ষার অধিকার সব মৌলিক অধিকার আমরা নিশ্চিত করেছি।
সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ২০০৯ সাল থেকে ২০২৩ সালের বাংলাদেশ কিন্তু বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। এখন দেশে দুর্ভিক্ষ নেই, হাহাকার নেই। এমনকি দেশের বেকারত্বও এখন মাত্র তিন শতাংশ। মানুষ ইচ্ছা করলে কাজ করে খেতে পারেন। আজ বাংলাদেশে ডিজিটাল বাংলাদেশ। ওয়াইফাই সারা দেশে আছে, প্রত্যেক ঘরে ঘরে এখন বিদ্যুৎ, রাস্তাঘাটের অভূতপূর্ব উন্নয়ন ঘটেছে যেন মানুষ কাজ করে খেতে পারে। বিশেষ করে কারিগরি শিক্ষার ওপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, এমন পরিস্থিতিতে মানুষকে এভাবে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়ে মানুষকে ভয় ভীতি প্রদর্শন করা কেন? বাংলাদেশের মানুষ আমেরিকা না যেতে পারলে কী আসে যাবে? আমাদের দেশে এখন যথেষ্ট কর্মসংস্থানের সুযোগ আছে। কাজেই এখন দেখি তারা কী করে।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে ১৭ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের উদ্দেশে রওনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
১৭-২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৭৮তম অধিবেশনের ফাঁকে অন্যান্য উচ্চপর্যায়ের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে যোগদানের পর নিউইয়র্ক থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটন ডিসি পৌঁছান শেখ হাসিনা।
১৩ দিনের যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে বাংলাদেশ সময় শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকালে লন্ডনের পথে রওনা হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী ৩ অক্টোবর পর্যন্ত লন্ডনে অবস্থান করবেন তিনি। এরপর ৪ অক্টোবর ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর।