অনলাইন ডেস্ক :
এবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে এক লাখ ৩৫ হাজার ৮৯৮ জন শিক্ষার্থী। যা গতবারের তুলনায় ৩০ হাজারেরও বেশি। এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সংখ্যক জিপিএ-৫ পাওয়ার পরও শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে দেখা গেছে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা। ভালো ফল পেয়েও সেরা কলেজে ভর্তি হওয়া নিয়ে অনেকের মাঝে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। কেননা সারা দেশে ভালো মানের কলেজে আসন রয়েছে মাত্র ৫০ হাজারের মতো।
এবারের এসএসসি ও সমমানের ফলাফলে দেখা গেছে, পরীক্ষায় গড় পাসের হার ৮২ দশমিক ৮৭ শতাংশ। ২০ লাখ ৪০ হাজার ২৮ জন শিক্ষার্থী চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নেয়, তাদের মধ্যে ১৬ লাখ ৯০ হাজার ৫২৩ জন পাস করেছে। করোনার মধ্যেও মাধ্যমিকের ফল প্রকাশে উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা। এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে পাসের হারে গত কয়েক বছরের মতো এবারও শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে রাজশাহী শিক্ষাবোর্ড। বোর্ডটিতে পাসের হার ৯০ দশমিক ৩৭ শতাংশ।
৭৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ পাসের হার নিয়ে এবারও সবার নিচে অবস্থান করছে সিলেট বোর্ড। এবার ঢাকা বোর্ডে পাসের হার ৮২ দশমিক ৩৪, কুমিল্লায় ৮৫ দশমিক ২২, বরিশালে ৭৯ দশমিক ৭০, যশোর বোর্ডে ৮৭ দশমিক ৩১, চট্টগ্রাম বোর্ডে ৮৪ দশমিক ৭৫, দিনাজপুর বোর্ডে ৮২ দশমিক ৭৩ ও ময়মনসিংহ বোর্ডে ৮০ দশমিক ১৩ শতাংশ।
উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি সংক্রান্ত কমিটির তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে সাড়ে ৮ হাজার কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তিযোগ্য আসন রয়েছে প্রায় ২০ লাখ। এর মধ্যে মানসম্মত কলেজের সংখ্যা মাত্র পৌনে ২০০। এসব কলেজে আসন সংখ্যা ৫০ হাজারের কিছু বেশি।
অথচ এবার সাধারণ ৯টি বোর্ডে পাশের হার ৮৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ ও এক লাখ ২৩ হাজার ৪৯৭ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৭ হাজার ৫১৬ জন এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪ হাজার ৮৮৫ জন। মাদরাসা এবং কারিগরি বোর্ডের বড় একটি অংশ উচ্চ মাধ্যমিক সাধারণ বোর্ডের অধীনে কলেজে ভর্তি হয়।
ফলে কলেজগুলোতে ৯টি সাধারণ বোর্ডের বাইরেও মাদরাসা এবং কারিগরি বোর্ডের অধীনে জিপিএ-৫ পাওয়া অর্ধেকের বেশি শিক্ষার্থীর আবেদন পড়তে পারে। এর ফলে জিপিএ-৫ পেয়েও ৮০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী প্রথম সারির কলেজগুলোতে ভর্তির সুযোগ পাবে না।
গত কয়েক বছরে অনলাইনে যেসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তির আবেদন বেশি পড়েছে, সেই হিসেবে মানসম্মত প্রতিষ্ঠান রয়েছে- ঢাকা বিভাগে ৭৫টি, রংপুর বিভাগে রয়েছে ৩২, বরিশাল বিভাগে ১৪, রাজশাহী বিভাগে ৭, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৯, খুলনা বিভাগে ১৩ এবং সিলেট বিভাগে ২৩টি। এসব কলেজে স্ব-স্ব বিভাগের জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীরা ভিড় করলে সবার আসন নিশ্চিত হবে না।
রাজধানী ঢাকাতে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়াশোনার জন্য আসন রয়েছে প্রায় ৫০ হাজারের মতো। এর মধ্যে ভালো মানের ২০-২২টি কলেজে আসন রয়েছে ২৫ হাজারের বেশি। বিপরীত দিকে ঢাকা বোর্ডেই এবার পাস করেছে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩৬ হাজার ৪৭ জন। আবার জিপিএ-৪ থেকে ৫-এর মধ্যে পেয়েছে এক লাখ ৩৩ হাজার ৩৫৫ জন।
সেই হিসেবে ঢাকার বাইরের শিক্ষার্থীদের রাজধানীর প্রতিষ্ঠানসমূহে ভর্তির সুযোগ কতটা থাকবে, তা নিয়েও রয়েছে সংশয়। ফলে ভালো ফলাফলের পর উচ্চ মাধ্যমিকে রাজধানীতে পড়তে আসা শিক্ষার্থীদের জন্য চ্যালেঞ্জ অনেক বেশি থাকবে। একই ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে মাদরাসা বোর্ড থেকে পাস করার শিক্ষার্থীদের জন্যও। সব শিক্ষার্থীর ভর্তির জন্য পর্যাপ্ত আসন থাকলেও প্রথম সারির প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভর্তির সুযোগ পাবে না সবাই।
এ বিষয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক অধ্যাপক হারুন অর রশিদ বলেন, ‘গ্রামের প্রতিষ্ঠানগুলোতে দক্ষ শিক্ষকের অভাব, বিশেষ করে ইংরেজি ও বিজ্ঞান বিষয়ে ভালো শিক্ষক না থাকায় শিক্ষার্থীরা শহরের ভালো প্রতিষ্ঠানমুখী হয়। ফলে শহরের মানসম্মত প্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য ভিড় বাড়ে। তবে এটা সার্বিক চিত্র নয়।’
তিনি বলেন, ‘সারা দেশে প্রায় ২০ লাখ কলেজে ভর্তির আসন রয়েছে। তার মধ্যে ১৬ লাখ ৯০ হাজার ৫২৩ জন পাস করেছে। তাই ভালো ফল পাওয়া সকল শিক্ষার্থী পছন্দের কলেজ না পেলেও কেউ ভর্তি থেকে বঞ্চিত হবে না।’