হোম আন্তর্জাতিক ভারতের হুঁশিয়ারি: দেশবিরোধী কার্যকলাপে জড়িত বিদেশিদের বহিষ্কার

ভারতের হুঁশিয়ারি: দেশবিরোধী কার্যকলাপে জড়িত বিদেশিদের বহিষ্কার

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 31 ভিউজ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
ভারতের মোদি সরকার কঠোর পদক্ষেপ নিলো বিদেশি নাগরিকদের প্রবেশ ও অবস্থান নিয়ে। নতুন অভিবাসন ও বিদেশি আইন, ২০২৫ অনুযায়ী, যারা দেশবিরোধী কাজে যুক্ত বা গুরুতর অপরাধে অভিযুক্ত, তাদের আর ভারতে থাকতে দেওয়া হবে না। যারা ইতোমধ্যে দেশে অবস্থান করছে, তাদের চিহ্নিত করে দ্রুত বহিষ্কার করা হবে।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় স্পষ্ট জানিয়েছে, সন্ত্রাসবাদ, গুপ্তচরবৃত্তি, ধর্ষণ, খুন, মানবপাচার, সাইবার অপরাধ, মানি লন্ডারিং, জাল নথি ব্যবহার কিংবা নিষিদ্ধ সংগঠনের সদস্যপদ নেওয়ার মতো অপরাধে জড়িত বিদেশিদের বিরুদ্ধে সরাসরি ডিপোর্টেশন ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নতুন আইনে বলা হয়েছে, ভুয়া ভিসা বা পাসপোর্ট ব্যবহার করলে সর্বোচ্চ ৭ বছরের কারাদণ্ড এবং ১০ লাখ রুপি পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে।
এখন থেকে প্রত্যেক বিদেশি ভিসা আবেদনকারী কিংবা ওসিআই নিবন্ধন প্রার্থীকে আঙুলের ছাপ, মুখের ছবিসহ সম্পূর্ণ বায়োমেট্রিক তথ্য জমা দিতে হবে।

কেন্দ্রীয় সরকারের মতে, এতে বিদেশিদের আগমন ও অবস্থান আরও স্বচ্ছভাবে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হবে।

দেশের সব রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে অবৈধ বিদেশিদের জন্য আলাদা ডিটেনশন সেন্টার বা হোল্ডিং সেন্টার গড়ে তুলতে। সীমান্তরক্ষী বাহিনী ও কোস্টগার্ডকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সীমান্তে আটক অনুপ্রবেশকারীদের বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহ করে তাৎক্ষণিকভাবে ফেরত পাঠাতে। উত্তরপ্রদেশ, আসাম, পশ্চিমবঙ্গের মতো সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোতে এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।

অরুণাচল, নাগাল্যান্ড, মণিপুর, জম্মু-কাশ্মীরসহ সংবেদনশীল এলাকায় প্রবেশের জন্য বিদেশিদের বিশেষ অনুমতি নিতে হবে। তবে আফগানিস্তান, চীন ও পাকিস্তানের নাগরিকদের এইসব এলাকায় প্রবেশ একেবারেই নিষিদ্ধ।

নতুন নিয়ম অনুযায়ী, বিদেশি নাগরিকরা বিশেষ অনুমতি ছাড়া বিদ্যুৎ, পানি, পেট্রোলিয়াম বা প্রতিরক্ষা সংশ্লিষ্ট সংবেদনশীল খাতে কাজ করতে পারবেন না। কেন্দ্র সরকারের মতে, এই পদক্ষেপ দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে।

তবে মানবিক কারণে কিছু ছাড় রাখা হয়েছে। আফগানিস্তান, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে আসা হিন্দু, শিখ, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, জৈন ও পারসি ধর্মাবলম্বী সংখ্যালঘুরা ছাড় পাবেন। শ্রীলঙ্কান তামিল (যারা ৯ জানুয়ারি ২০১৫-এর আগে ভারতে নিবন্ধিত), তিব্বতি শরণার্থী এবং নেপাল-ভুটানের সীমান্তবাসীর ক্ষেত্রেও ছাড় প্রযোজ্য হবে।

নতুন আইন নিয়ে রাজনৈতিক মহলেও আলোচনা শুরু হয়েছে। বিজেপি সরকারের মতে, এই পদক্ষেপ দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা আরও মজবুত করবে। তবে বিরোধীদের একাংশের মতে, এই আইনকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করা হতে পারে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তকে ‘বিভাজনমূলক’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।
সব মিলিয়ে, নতুন অভিবাসন আইনের লক্ষ্য হল অবৈধ অনুপ্রবেশ নিয়ন্ত্রণ, জাতীয় নিরাপত্তা জোরদার এবং সন্ত্রাসবাদের ঝুঁকি কমানো। ভারত সরকারের মতে, এই আইন কার্যকর হলে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বড় পরিবর্তন আসবে।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন