হোম অন্যান্যসারাদেশ ভাঙল প্রাণের বইমেলা

অনলাইন ডেস্ক :

বইমেলা শুধু গ্রন্থমেলা নয়, এ এক প্রাণের মেলা। আত্মার সঙ্গে আত্মার যেমন সম্পর্ক, তেমনি বইয়ের সঙ্গে পাঠকের সম্পর্ক। লেখক পাঠক ও প্রকাশকদের মহামিলন ঘটে এ বইমেলায়।

প্রতিবছরের মতো এবারও বইমেলা শুরু হয় ১ ফেব্রুয়ারি (বুধবার)। ফেব্রুয়ারি মাস পুরোটা জুড়েই বাংলা একাডেমি চত্বরে এবং সোওরাওয়ার্দী উদ্যানে চলে বইয়ের উৎসব। উৎসবমুখর পরিবেশে চলে বইমেলা।

মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সেই উৎসবের ইতি, পর্দা নামে প্রাণের বইমেলার।

‘যেতে নাহি দিব হায়/তবু যেতে দিতে হয়/তবু চলে যায়’- জীবনের এই কঠিন সত্যটি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন অনেক আগেই। তবুও মায়ার বাঁধন ছিড়তে চায় না মানুষ। মায়ার বাধঁনে আবদ্ধ এ বইমেলা বইপ্রেমীরা বিদায় জানাতে না চাইলেও, নতুন বইয়ের প্রত্যাশা রেখে বইমেলাকে বিদায় জানান তারা।

বাংলা একাডেমি চত্বরে বইমেলা শুরু হয়েছিল চিত্তরঞ্জন সাহার হাত ধরে। দিনটি ছিল ১৯৭২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ। বর্তমান বাংলা একাডেমি তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বর্ধমান হাউস প্রাঙ্গণের বটতলায় বই নিয়ে এসেছিলেন প্রকাশনা জগতের এক চিরস্মরণীয় ব্যক্তি, চিত্তরঞ্জন সাহা।

এখনকার মতো এমন স্টল আর সাজানো-গোছানো পরিবেশ তখন ছিল না। টেবিল-চেয়ারের আয়োজনও ছিল না। চিত্তরঞ্জন সাহা বই সাজিয়েছিলেন চটের ওপর। ১৯৭১ সালের মে মাসে তিনি আশ্রয় নিয়েছিলেন ভারতের কলকাতায়।

কলকাতায় তখন বাংলাদেশের বহু লেখক, সাহিত্যিক, শিল্পী, বুদ্ধিজীবী আশ্রয় নিয়েছিলেন। সেখানেই তিনি বই প্রকাশের উদ্যোগ নেন এবং মুক্তিযুদ্ধের ওপর ৩২টি বই প্রকাশ করেন। সেসব বই নিয়েই আয়োজন করা হয়েছিল বাংলাদেশের প্রথম বইমেলার।

সে বছর বাংলা একাডেমিও একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে ছাড়মূল্যে বই বিক্রি করেছিল। তবে, চিত্তরঞ্জন সাহার স্বাধীন বাংলা-সাহিত্য পরিষদ (পরে মুক্তধারা প্রকাশনী) ছিল একমাত্র বেসরকারি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান।

১৯৭২ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত চিত্তরঞ্জন সাহা নিজে চালিয়ে যান এ বইমেলা। চিত্তরঞ্জন সাহার আগ্রহ এবং মানুষের ভালোবাসার কারণে ১৯৭৮ সালে বাংলা একাডেমি এই উদ্যোগকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে।

১৯৭৯ সালে মেলার সঙ্গে যুক্ত হয় বাংলাদেশ পুস্তক বিক্রেতা ও প্রকাশক সমিতি। এ সংস্থাটিও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন চিত্তরঞ্জন সাহা। ১৯৮৪ সালে এসে গ্রন্থমেলার জন্য বিধিবদ্ধ নীতিমালা প্রণীত হয় এবং গ্রন্থমেলার নাম হয় ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’। সেই থেকে এ গ্রন্থমেলা প্রতি বছর প্রায় একই আঙ্গিকে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।

বইপ্রেমী বাঙালিরা অপেক্ষায় থাকে কবে ফেব্রুয়ারি আসবে এবং কখন বইমেলা শুরু হবে। সে অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে এবারও এসেছিল বইমেলা এবং মঙ্গলবার সে বইমেলা ইতি টানল।

এবারের বইমেলায় প্রত্যাশার চেয়ে প্রাপ্তিটাই বেশি বলে মনে করছেন প্রকাশকরা। বই কেনার দিক দিয়ে না, বইমেলায় পাঠক ও দর্শনার্থীদের আগমন এবং পদচারণাকে বিবেচনা করে বইমেলা এবার অনেকটাই সফল। করোনাভাইরাসের ভয়ে গেল ২ বছর পাঠক আনাগোনা এত ছিল না বইমেলায়। তবে, এবার সে ভয় কাটিয়ে উঠে দর্শনার্থী এবং পাঠকরা ভিড় জমিয়েছেন বইমেলায়।

এবারের বইমেলা সাজানো হয়েছে আগের বছরগুলোর তুলনায় ভিন্নরূপে। বইমেলা প্রাঙ্গণ বিগত বছরের তুলনায় ছোট করে আনা হলেও স্টল কিন্তু অন্য সববারের চেয়ে এবার বেশি বসেছে। এবারের বইমেলায় মোট স্টল ছিল ৯০১টি।

এবারের বইমেলার স্টল থেকে ফুড কর্ণার, ফায়ার স্টেশন থেকে তথ্যকেন্দ্র, নিরাপত্তা ব্যবস্থা থেকে বসার ব্যবস্থা প্রত্যেকটি জিনিস সুসজ্জিত এবং সাজানো গোছানো ছিল। দর্শনার্থীদের বসার জন্যেও করা হয় সুন্দর ব্যবস্থা।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন