হোম অন্যান্যসারাদেশ বেনাপোল বন্দরের দুর্নিতির চিত্র-১: অপ্রতিরোধ্য গতিতে চলছে আমদানিজাত পন্যের শুল্ক ফাঁকি।

সংকল্প ডেস্ক :

জাতীয় রাজস্ববোর্ড ভারতীয় আমদানিজাত ফলবাহী ৬ চাকার ট্রাকের সর্বনিম্ন নিট পন্যের ওজন নির্ধারন করে দিয়েছে ১৭ মেট্রিকটন। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বেনাপোল বন্দরে চলছে শুল্ক ফাঁকির মহোৎসব। গুটি কয়েক সিএন্ডএফ এজেন্ট অসাধু কাস্টমস কর্মকর্তা পরস্পর যোগসাজসে দিনের পর দিন অপ্রতিরোধ্য গতিতে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে চলেছে। সরকারি স্বার্থ জ্বলাঞ্জলি দিয়ে ব্যাক্তি স্বার্থ চরিতার্থ করায় সংশ্লিষ্ট কাস্টমস কমিশনারের ভূমিকা প্রশ্ন বিদ্ধ হয়ে দেখা দিয়েছে। ২০ থেকে ২২ টন ভারতীয় ফল আমদানি করলেও ১৭ টনের রাজস্ব জমা দিয়ে আমদানিকারকরা পার পেয়ে যাচ্ছে। এর জন্য ট্রাক প্রতি ৫০হাজার থেকে ৫৩ হাজার টাকা ঘুষ আদায় করা হচ্ছে সংশ্লিষ্ট আমদানিকারকের কাছ থেকে। বন্দর সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র থেকে এ খবর পাওয়া গেছে।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়,আমদানিজাত প্রতিটি ট্রাকের নিট ওজন দেখানো হয় ১৭ মেট্রিক টন। কোন আমদানিজাত ফলবাহী ট্রাকের ওজন খুব একটা কম বেশি হয় না। অথচ উল্লেখিত আমদানিজাত আপেলের ট্রাকগুলো সোনামসজিদ ও ভোমরা শুল্ক স্টেশন দিয়ে আমদানি হলে ওইসব ট্রাকের নিট পন্যের ওজন হতো ২১-২২ মেট্রিক টন। প্রতিটি আপেলের ট্রাকে ৪-৫ টন শুল্ক ফাঁকির ঘটনা ওপেন সিক্রেট। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কাঠের কার্টুনে ভারতীয় আপেল সাজিয়ে তা ভারতের দিল্লী ও কাশ্মির থেকে বাংলাদেশ সিমান্তে আনা হয়। ভারতীয় পাড়ে এই পন্যের ট্রাক বদল করে ৬ চাকার ট্রাকে বাংলাদেশে আমদানি করা হয়। যে সব কার্টুনে আপেল সাজানো হয় ওই সব কার্টুনের ওজন (টিআর) বেশি দেখিয়ে ও কার্টুনের সংখ্যা দেড় থেকে দুই গুন বৃদ্ধি করে প্রতি ট্রাকে ৪ থেকে ৫ টন পন্যের শুল্ক ফাঁকি দেওয়া সম্ভব হয়।

সন্ধ্যার পর এসব আমদানিজাত পণ্যবাহী ভারতীয় ট্রাক বেনাপোল বন্দরে ঢুকানো হয়। এরপর পরীক্ষনের দায়িত্বে নিয়োজিত সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা, রাজস্ব কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট সিএন্ডএফ এজেন্ট কূট কৌশলে শুল্ক ফাঁকির কাজে জড়িয়ে পড়ে। উদাহরণ সরূপ বলা যায়, ভারতীয় এক ট্রাকে আনারের বহন ক্ষমতা নয়’শ থেকে সাড়ে নয়’শ ক্যারেট। যার নিট ওজন হয় ২০ টনের অধিক। কাস্টমস এর বিধান অনুযায়ী প্রতি ক্যারেটের ওজন ২.৮ কেজি থেকে ২.৯ কেজি বাদ দিয়ে নিট পণ্যের ওজন নির্ধারণ করা হয়।

এরপর নিট পন্যের উপর শুল্ক নির্ধারিত হয়। কিন্তু বেনাপোল বন্দরে এই বিধি বিধান অচল। অসাধু কাস্টমস কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট সিএন্ডএফ এজেন্ট আর্থিক সুবিধার লোভে প্রতিটি খালি ক্যারেটের ওজন ৩.৫ কেজি (টিআর) নির্ধারন করে থাকে। এ ছাড়াও বাস্তবে এক ট্রাকে যদি নয়’শ থেকে সাড়ে ৯শ’ক্যারেটে পণ্য থাকে পরীক্ষনের সময় কাগজে কলমে দেখানো হয় প্রায় উনিশস’শ ক্যারেট। যার কারনে প্রকৃত অর্থে প্রতি ট্রাকে টিআর বাবদ ওজন বাদ দেয়ার নিয়ম (৯০০ গুন ২.৮ কেজি) ২.৫ টন। কিন্তু শুল্ক ফাঁকির কারনে পরীক্ষনের সময় টিআর বাবদ ওজন বাদ দেয়া হয় (১৯০০ গুন ৩.৫ কেজি) ৬.৬ টন। ফলে প্রতি ট্রাকে ৪ টন পণ্যের শুল্ক ফাঁকি দেয়ার অভিযোগ ওপেন সিক্রেট। ৪ টন আনারের শুল্কর পরিমান প্রায় ২ লাখ টাকা। এভাবে যদি ১০ ট্রাক আনারের শুল্ক ফাঁকি দেয়া হলে তার পরিমান দাঁড়ায় প্রায় ২০ লাখ টাকা।

ক্যারেটের সংখ্যা বৃদ্ধি ও টিআর এর ওজন বেশি দেখিয়ে শুল্ক ফাঁকি দেওয়া সম্ভব হয়েছে। আমদানিজাত কমলালেবু,কাঁচা মরিচ সহ অন্যান্য পন্যের ক্ষেত্রেও একই পন্থায় শুল্ক ফাঁকির ঘটনা ঘটছে অহরহ। আর এ সব কার্যক্রম তদারকি করেন বেনাপোল কাস্টমস হাউজের এক জন অতিরিক্ত কমিশনার। আমদানিজাত প্রতিটি ফলবাহী ট্রাকে শুল্ক ফাঁকির ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। আপেল, আনার, কমলালেবু, আঙ্গুরসহ আমদানিজাত প্রতিটি ফলবাহী ট্রাকে শুল্ক ফাঁকির ঘটনা ঘটলেও তা প্রতিরোধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। বিষয়টি জানার জন্য কাস্টম কমিশনারের সথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

s

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন