হোম অন্যান্যসারাদেশ বেগম জিয়া ফের সিসিইউতে

শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপরসন বেগম খালেদা জিয়াকে কেবিন থেকে আবারও করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয়েছে। তিনি বর্তমানে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।

শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে তাকে সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়।

 এর আগে গত ২২ সেপ্টেম্বর শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি হাওয়ায় মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে বেগম জিয়াকে সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়েছিলো। পরে অবস্থার উন্নতি হলে তাকে ফের কেবিনে স্থানন্তার করা হয়।
 
গত ১৭ সেপ্টেম্বরও তাকে এক দফা সিসিইউতে নেয়া হয়েছিলো। সেবার সাত ঘণ্টা পর আবার কেবিনে দেয়া হয়।

৭৮ বছর বয়সী খালেদা জিয়া হার্টের সমস্যা ও লিভারসিরোসিস ছাড়াও নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। এছাড়া, আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, দাঁত ও চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতা রয়েছে তার। এরই মধ্যে কয়েক দফা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন তিনি। গত বছরের জুনে খালেদা জিয়ার এনজিওগ্রাম করা হলে তার হৃদযন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়।

সর্বশেষ গত ৯ আগস্ট শারীরিক অসুস্থতার কারণে আবারও রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন খালেদা জিয়া। এরপর থেকে তিনি সেখানেই চিকিৎসাধীন।
এদিকে বেগম খালেদা জিয়ার স্থায়ী মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ চেয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবারও আবেদন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে জানা যায়, পরিবারের পক্ষে এবারও আবেদনটি করেছেন তার ভাই শামীম ইস্কানদার।
 
জানা গেছে, আবেদনটি মতামতের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
 
এর আগে চলতি মাসের শুরুর দিকে বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে সুচিকিৎসার সুযোগ চেয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর চিঠির মাধ্যমে আবেদন করেন শামীম ইস্কান্দার। চিঠিতে ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ তারিখ উল্লেখ ছিলো। এটি ৫ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয় বলে জানা যায়।
 
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর শামীম ইস্কান্দারের আবেদনপত্রে বলা হয়, ‘বেগম জিয়ার জীবন রক্ষার্থে ও তার শারীরিক সক্ষমতা ফিরিয়ে আনার জন্য জরুরি ভিত্তিতে উন্নতমানের ফিজিওথেরাপিসহ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে দেশের বাইরে ‘অ্যাডভান্স মেডিকেল সেন্টার’- এ চিকিৎসা গ্রহণ করা আবশ্যক। এমতাবস্থায় সকল শর্ত শিথিলপূর্বক তাকে স্থায়ী মুক্তি এবং বিদেশে গমনের অনুমতি প্রদানের জন্য আবেদন জানাচ্ছি।’

খালেদা জিয়ার দণ্ড স্থগিত করে সপ্তমবার বর্ধিত মুক্তির মেয়াদ শেষ হয় গত ২৪ সেপ্টেম্বর। এর আগেই তার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি চেয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আবেদন করা হয়।

এর প্রেক্ষিতে সম্প্রতি অষ্টমবারের মতো বিএনপি চেয়ারপারসনের সাজা স্থগিত করে আগের দুটি শর্তেই মুক্তির মেয়াদ আরও ৬ মাস বাড়ানো হয়। মুক্তির মেয়াদ বাড়িয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী শর্ত দুটি হলো: খালেদা জিয়া আগের মতোই ঢাকার নিজ বাসায় থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করবেন এবং এই সময় তিনি দেশের বাইরে যেতে পারবেন না।
দুটি মামলায় সাজা হওয়ায় কারাবন্দি ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। বর্তমানে নির্বাহী আদেশে দণ্ড স্থগিত থাকায় তিনি কারামুক্ত রয়েছেন।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ আদালত। রায়ের পর তাকে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পুরানো কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি রাখা হয়। এরপর ৩০ অক্টোবর এই মামলায় আপিলে তার সাজা আরও পাঁচ বছর বাড়িয়ে ১০ বছর করেন হাইকোর্ট।

একই বছরের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১০ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ড দেন একই আদালত।

২০২০ সালের মার্চে করোনা মহামারি শুরু হলে পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে সরকার নির্বাহী আদেশে দণ্ড স্থগিত করে খালেদা জিয়াকে শর্তসাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দেয়। এরপর থেকে মুক্তির মেয়াদ বাড়তে থাকায় তাকে আর কারাগারে যেতে হয়নি।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন