হোম জাতীয় বেইলি রোডে আগুন: রকির শেষ কথা ‘মা, আমি বোধ হয় এখান থেকে বেরোতে পারব না’

জাতীয় ডেস্ক:

‘মা, আমি বোধ হয় এখান থেকে বেরোতে পারব না’- ঢাকার বেইলি রোডে ভয়াবহ আগুনে আটকে পড়ার পর মায়ের সঙ্গে নিহত কামরুল হাসান হাবিব রকির এটিই ছিল শেষ কথা। এরপর থেকেই তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

যশোর সদরের আরবপুর ইউনিয়নের ধোপাখোলা কারিকরপাড়ায় রকির বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। রকির স্বপ্ন ছিল চাকরির পাশাপাশি নিজের লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার। সে কারণে আলিম পাশ করার পর ঢাকায় চলে যান চাকরিতে। একইসঙ্গে ফাজিল (বিএ) শ্রেণিতে পড়ার জন্য ফরমও পূরণ করেছেন। কিন্তু আগুনে পুড়ে গেছে সেই স্বপ্ন, শেষ হয়ে গেছে পরিবারের আশা ভরসা।

২১ বছরের যুবক রকি কারিকরপাড়ার কবির হোসেনের ছেলে। ২০২৩ সালে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গাজীর দরগাহ কামিল মাদ্রাসা থেকে আলিম (এইচএসসি) পাস করেন। গত ১৭ ডিসেম্বর তিনি ঢাকায় যান এবং বেইলি রোডে ‘কাচ্চি ভাই’ রেস্টুরেন্টে হিসাবরক্ষক হিসেবে যোগ দেন।

রকির স্বজনরা জানান, বৃহস্পতিবার রাতে আগুন লাগার পরপরই রকি তার মাকে ফোন করেছিলেন। ফোনে কথা বলার এক পর্যায়ে তিনি মাকে জানান, আমি বোধ হয় এখান থেকে বেরোতে পারব না। এরপর ফোন কল অফ হয়ে যায়। পরে তারা জানতে পারেন রকি মারা গেছেন।

ধোপাখোলা গ্রামের মসজিদের ইমাম আব্দুল হালিম বলেন, ঢাকা একটা অভিশপ্ত শহর। প্রায়ই শুনি আগুন লাগে এবং অনেক মানুষের প্রাণহানি ঘটে। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ নানা স্বপ্ন নিয়ে ঢাকায় যায় আর লাশ হয়ে বাড়ি ফেরে। আমাদের রকিও তেমন একজন ছিল। এতো আধুনিক ব্যবস্থা থাকতেও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা আগুন নেভাতে পারল না!

রকির দাদা হাসেম আলী বলেন, অনেক স্বপ্ন নিয়ে আমাদের রকি ঢাকা গিয়েছিল। এক আগুনে তার নিজের স্বপ্ন আর পরিবারের স্বপ্ন নিঃশেষ হয়ে গেল। মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে তরতাজা একটা প্রাণ আজ লাশ হয়ে ফিরে এসেছে আমাদের কাছে।

রকির প্রতিবেশীরা জানায়, রকি খুবই ভালো একটা ছেলে ছিল। তারা তিন ভাই। সে বড়, মেঝোজন নতুনহাট পাবলিক কলেজে পড়াশোনা করছে, ছোটজনের বয়স পাঁচ বছর, সে শারীরিক প্রতিবন্ধী। তার বাবা যশোর শহরে ইজিবাইক চালায়।

যশোর সদরের আরবপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে ঢাকায় রওনা দিই। শুনেছি, গতকালকের আগুনে ‘কাচ্চি ভাই’ রেস্টুরেন্টের কয়েকজন মারা গেছে। এরমধ্যে যশোরে আমাদের রকি। ভোর ছয়টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে রওনা দিই। বেলা ১১টার দিকে যশোরে পৌঁছেছি।

রকির স্বজনরা জানান, শুক্রবার (১ মার্চ) বাদ জুমা তার নামাজে জানাজার শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন