হোম ফিচার বিস্ময় বালক সাদ, সাত বছর বয়সে আঁকতে পারে পৃথিবীর যে কোন দেশের মানচিত্র, দিতে পারে জটিল সব জ্যামিতি ও এ্যালজেবরার সমাধান সব কাজে তার ভাষা ইংরেজী

ঝিনাইদহ অফিস :

ভিন গ্রহের এক এ্যলিয়েন বোকা সোখা এক বালকের মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। তারপর থেকে স্কুলের সেই দুর্বল ছাত্রটি হয়ে উঠলো সবথেকে মেধাবি। গণিত কিংবা কম্পিউটারের জটিল সব সমাধান দিল নিমিষেই। এ্যালিয়েনের ছোয়াই বিস্ময় বালক হয়ে উঠার এই গল্পটি ভারতীয় সিনেমা কোয় মিলগায়া’র।

এবার সিনেমা নয়, সত্যি সত্যিই এক বিস্ময় বালকের সন্ধ্যান পাওয়া গেছে। বয়স মাত্র সাড়ে সাত বছর। নাম সামিউন আলিম সাদ। ২০২০ সালে বাড়ির পাশে একটি প্রাইমারি স্কুলের প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি করে দেন তার বাবা। ২০২১ সালে দ্বিতীয় শ্রেণি।

বিশ্বব্যাপী করোনার মহামারিতে দুই বছরে স্কুল জীবনের এক মাসও ক্লাসে যাওয়া হয়নি শিশু সাদের। স্কুলে না গেলেও এ দু’বছরে সামিউন আয়ত্ব করেছে ব্রিটিশ বা আমেরিকানদের ভাষা ইংরেজী। এতটুকু বয়সে ভিনদেশী ভাষা ইংরেজীতে বলে দিচ্ছে পৃথিবী নামক গ্রহের মানচিত্রে থাকা সব দেশের ভূমি, পাহাড়, পর্বত আর সাগর মহাসাগরের অবস্থান। পৃথিবীর গঠন প্রকৃতি ভূমিকম্প ও আগ্নেয়গীরির বর্ণনা করছে অভিজ্ঞ বিশেজ্ঞের মত।

চোখের পলকে কলমের স্পর্শে একে দিতে পারছে পৃথিবীর যে কোন দেশের মানচিত্র। বলতে পারে প্রতিটি দেশের চতুর পাশের সব দেশের বর্ননা। বলে দিচ্ছে মহাকাশের সব গ্রহ উপগ্রহ আর নক্ষত্রের নাম অবস্থান আর দুরুত্ব। নিমিষেই করে দিচ্ছে এ্যালজেবরা ও জ্যামিতির মতো বিষয়ের জটিল সব সমস্যার সমাধান। শুধু নিজেই পারে বা বুঝে এমন না, সে তার আয়ত্ব করা ইংরেজী ভাষার সাবলিল বর্ণনায় বুঝিয়ে দিচ্ছে অপরকেও। তার স্বপ্ন বড় হয়ে একজন বিজ্ঞানী, গণিতবিদ অথবা মহাকাশ বিজ্ঞানী হবে।

বর্ণনার এই বিস্ময় বালক সামিউন আলিম সাদ ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা শহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এএইচএম আলীমের ছোট ছেলে। মা আয়েশা আক্তার চার্লি কলেজ টিচার। ২০১৪ সালের ৬ জুলাই মা কলেজ শিক্ষক চার্লির কোল আলো করে পৃথিবীতে আসে এই বিস্ময় বালক সাদ। সামিউন দুই ভাই বোনের ছোট। বড় বোন সামিয়া আলীম প্রমি ২০২২ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থী। তাদের বসবাস কালীগঞ্জ শহরের মধুগঞ্জ বাজার এলাকার একটি ভাড়া বাড়িতে। গ্রামের বাড়ি কালীগঞ্জ উপজেলা বালিয়াডাঙ্গা গ্রামে। এতটুকু বয়সে সাদ নিজেই ংধসরঁহ ধষরস ংধধফ নামে একটি ইউটিউব চ্যানেল খুলে তার বর্ণনায় মহাকাশ, গনিত ও বিজ্ঞানের বিষয়ের কনটেন্ট আপলোড করেছে।

সামিউন আলিম সাদ এর বাড়ি গিয়ে কথা তার বাবা আব্দুল আলিম ও মা চার্লির সাথে। তার বাবা আব্দুল আলিম জানায়, বড় বোন প্রমি হাউজ টিচারের কাছে ইংরেজী পড়ত। তখন সামিউনের বয়স তিন থেকে সাড়ে তিন বছর। সে সময় সে ইংরেজী বই পড়তে চাইতো। এসময় আমি তাকে ইংরেজী অক্ষর শেখা একটি এ্যাপস আমার এ্যান্ড্রয়েট ফোনে ডাউনলোড করে দিই। তখন থেকে সে আমাদের ব্যবহৃত এ্যন্ড্রোয়েট ফোন নিয়ে ইংরেজী ও আরবী ভাষা শেখা শুরু করে। এছাড়া লক্ষ্য করতাম ইউটিউবে বিভিন্ন স্পীকারদের বক্তৃতা শুনছে। আমরা বুঝতাম না ও কি করছে, তবে নিষেধও করতাম। এরইমধ্যে কয়েক মাসের মধ্যে সাদ সবাইকে অবাক করে দিয়ে ইংরেজী শুদ্ধ উচ্চারণে রিডিং শিখে যায়। চার থেকে পাঁচ বছর বয়সে তার বোনের গণিত বই থেকে যে কোন জটিল এ্যালজেবরা ও জ্যমিতির সমাধান করে দিয়ে বাড়ির সবাইকে অবাক করে দেয় সাদ। এভাবে দিনে দিনে পরিবারের সবার নজরে আসতে থাকে তার বিস্ময়কর মেধার। ২০২০ সালে স্কুলে ভর্তির পর থেকে শুরু হয় শ্রেণির পাঠ্যবই অধ্যয়ন। স্কুল জীবনের এই দেড় বছরে একে একে প্রথম থেকে নবম শ্রেণির সকল গণিত বই এর সকল এ্যালজেবরা ও জ্যামিতির সমাধান সে করে দেখায়। আয়ত্ব করে মহাকাশ ও পৃথিবীর সবদেশের ভৌগোলিক অবস্থানও।

সামিউন আলিম সাদ এর মা আয়েশা আক্তার চার্লি জানান, প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি করার পর স্কুল থেকে বই দেয়। সে বই সামিউন তিন দিনে শেষ করে ফেলে। তিন দিন পর সামিউন বলে বাবা আমার পড়া শেষ। ছেলের কথা শুনে প্রথমে গুরুত্ব দেয়নি। পরে মনে করলাম পরীক্ষা করেই দেখি। কিন্তু তার মুখস্থ ক্ষমতা দেখে আমরা অবাক হয়ে যায়। এরপর ছেলে বাহনা শুরু করে দ্বিতীয় শ্রেণির বই এনে দিতে। তার বাহনায় কৌতুহলি আমরাও তার পরের ক্লাসের বই এনে দিই। এবারও দুই তিন দিনের মধ্যে সব বই পড়া শেষ। এভাবে মাত্র দেড় বছরে প্রথম থেকে নবম শ্রেণির সকল বই পড়ে শেষ করে ফেলে। কিন্তু তার বেশি আগ্রহ জিওগ্রাফি, ম্যাথ ও জ্যামিতি, স্পেস ও প্লানেটস, ফিজিকস এবং বিভিন্ন ধরনের রোগ ব্যধি মানুষের শরীরে কিভাবে কাজ করে এবং কি ক্ষতি করে তা নিয়ে।

স্থানীয় মোস্তবাপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গণিতের শিক্ষক মোঃ মিজানুর রহমান জানান, শিশু সাদ অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী। আমি নিজে তার সাথে কথা বলেছি। সে কোন কিছু লুকোচুরি না করে কথা বলতে পছন্দ করে। সে ক্লাস নাইনের বীজগণিত এবং জ্যামিতির সমাধান খুব সহজেই করতে পারে। সব থেকে বড় কথা ও সবকিছু বলে ইংরেজীতে। সে মুহুর্তের মধ্যে মহাকাশ ও পথিবীর যে কোন দেশের ভৌগোলিক অবস্থান চিত্র একে বর্ণনা করতে পারে। যা বিস্ময়কর, এটি আল্লাহর উপহার ছাড়া কিছুই হতে পারে না। বিস্ময়কর প্রতিভার অধিকারী সাদ বাংলাদেশের সম্পদ। দেশের যে কোন বিশ^বিদ্যালয় বা গবেষণা প্রতিষ্ঠান নিজেদের সম্পদ ঘোষনা করে তাকে কাজে লাগাতে পারেন বলেও যোগ করেন এই স্কুল শিক্ষক মি. মিজান।

ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সাবেক অধ্যাপক শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার অলোক কুমার সাহা বলেন, এমন সুপার ট্যালেন্ট ছেলে খুব কমই জন্মায়। এ ধরনের ট্যালেন্টরা এমবিবিএস ডিগ্রি শেষ করার এক বছরের মধ্যে অধ্যাপক হতে পারে। তবে সে সুপার ট্যালেন্ট কিনা তা পরিমাপ করা ছাড়া বলা যাচ্ছে না।

সাদের মামা চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক ডিসি মঞ্জুরুল হাফিজ জানান, সম্প্রতি সাদ তার বাবা-মা’র সাথে আমার এখানে বেড়াতে এসেছিল। আমি আমার অফিসের প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তাদের সাথে তার স্বাক্ষাৎ করিয়ে দিই। সবাই সাদের সাথে কথা বলেছে। বিভিন্ন রকম প্রশ্নও করেছে। সাদের মেধা দেখে সবাই বিস্মিত হয়েছে। সারা বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশের সাদই সম্ভবত একমাত্র মাইনর সুপার ট্যালেন্ট বলে যোগ করেন।

 

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন