ফুটবল বিশ্বকাপ :
বিশ্বকাপের তিনবারের কোয়ার্টার ফাইনালিস্ট সুইজারল্যান্ড ১৯৫৪ সালে শেষবার খেলে কোয়ার্টার ফাইনালে। এরপর আরও তিনবার গ্রুপপর্ব পেরোতে পারলেও শেষ আট পর্যন্ত যাওয়া হয়নি। তবে কাতার বিশ্বকাপে সুইসরা গেছে সমীহ করার মতো দল নিয়ে। চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ও বর্তমান ইউরো চ্যাম্পিয়ন ইতালিকে পেছনে ফেলে তারা জায়গা করে নিয়েছে বিশ্বকাপে। প্রথম ম্যাচে ‘আফ্রিকার অদম্য সিংহ’ ক্যামেরুনকে হারিয়ে শুভ সূচনা করেছে।
সুইজারল্যান্ড দলটির ভরসার জায়গা ইয়ান সমার, গ্রানিত জাঁকা, স্কদ্রান শাকিরি, ডেনিশ জাকারিয়ার মতো তারকারা। তবে তাদের সবচেয়ে বড় শক্তিটা দল হিসেবে খেলার ক্ষমতা। খুব বড় তারকা না থাকা সত্ত্বেও তাই ইতালির মতো পরাশক্তিকে পেছনে ফেলে বিশ্বকাপে জায়গা করে নেয়া সম্ভব হয়েছে তাদের।
বিশ্বকাপে কখনোই শেষ আটের গণ্ডি পার না হতে পারা সুইসরা নিজেদের ইতিহাসের সেরা সাফল্য রচনা করতে চায় কাতারে। র্যাঙ্কিংয়ে ১৫ নম্বরে থাকা দলটির বিশ্বকাপ জেতার ক্ষমতা হয়তো নেই, কিন্তু ফেবারিটদের বিপক্ষে অঘটন ঘটিয়ে পেরোতে চায় শেষ আটের বাধা।
একনজরে সুইজারল্যান্ড ফুটবল দল:
ডাকনাম: এ-টিম ন্যাতি
অংশগ্রহণ: ১২বার (১৯৩৪, ১৯৩৮, ১৯৫০, ১৯৫৪, ১৯৬২, ১৯৬৬, ১৯৯৪, ২০০৬, ২০১০, ২০১৪, ২০১৮, ২০২২)
সেরা সাফল্য: কোয়ার্টার ফাইনাল (১৯৩৪, ১৯৩৮, ১৯৫৪)
র্যাঙ্কিং: ১৫
কোচ: মুরাত ইয়াকিন
অধিনায়ক: গ্রানিত জাঁকা
বিশ্বকাপের গ্রুপ: জি (প্রতিপক্ষ: ব্রাজিল, সার্বিয়া, ক্যামেরুন)
বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ফল: বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে উয়েফা অঞ্চলে গ্রুপ সি-তে থাকা সুইজারল্যান্ডের প্রতিপক্ষ হিসেবে ছিল চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইতালি, উত্তর আয়ারল্যান্ড, বুলগেরিয়া ও লিথুয়ানিয়া। ৫ ম্যাচে ২ জয় ও ৩ ড্রয়ে অপরাজিত থেকে গ্রুপপর্বে শীর্ষস্থান অর্জন করে বিশ্বকাপ নিশ্চিত করে সুইসরা।
কোচের পরিকল্পনা ও কৌশল: তুর্কিয়ে বংশদ্ভূত মুরাত ইয়াকিন ২০২১ সালে সুইসদের কোচের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। সুইজারল্যান্ড জাতীয় দলের সাবেক এই সেন্টারব্যাক এই প্রথম কোনো জাতীয় দলকে কোচিং করাচ্ছেন। তার অধীনই ইতালিকে পেছনে ফেলে বিশ্বকাপে জায়গা করে নিয়েছে সুইজারল্যান্ড।
নেশন্স লিগে স্পেন-পর্তুগাল ও চেক প্রজাতন্ত্রের সঙ্গে কঠিন গ্রুপে ৬ ম্যাচের ৩টিতে জয় পায় সুইসরা। সমান ৩টি করে জয় পায় স্পেন ও পর্তুগালও। তবে স্পেন ও পর্তুগাল যথাক্রমে ১টি ও ২টি ম্যাচে হারলেও ৩টি ম্যাচে হেরে গ্রুপে তৃতীয় হয় সুইজারল্যান্ড। শক্তিশালী গ্রুপে এমন পারফরম্যান্সেও অবশ্য খুশি কোচ।
মূল খেলোয়াড়:
গ্রানিত জাঁকা: আর্সেনালের সহ-অধিনায়ক গ্রানিত জাঁকা সুইজারল্যান্ড জাতীয় দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। শারীরিকভাবে দারুণ শক্তিশালী এই মিডফিল্ডার একই সঙ্গে সৃজনশীলও। সুইসদের হয়ে এর আগে আরও দুটি বিশ্বকাপে খেলেছেন এই ৩০ বছর বয়সি। ক্যারিয়ারের তৃতীয় বিশ্বকাপ খেলার আগে দারুণ ফর্মে আছেন তিনি। ক্লাব আর্সেনালের এই মৌসুমে দারুণ পারফরম্যান্সের পেছনে তার আছে বড় অবদান।
স্কদ্রান শাকিরি: সামর্থ্যের পুরোটা দেখাতে না পারলেও সময়ে সময়ে নিজের প্রতিভার ঝলক ঠিকই দেখিয়েছেন শাকিরি। ৩১ বছর বয়সী লিভারপুল ও বায়ার্ন মিউনিখের সাবেক এই তারকা এখন খেলছেন মেজর লিগ সকারের দল শিকাগো ফায়ারের হয়ে। তবে সুইজারল্যান্ড জাতীয় দলে তিনি এখনও অপরিহার্য সদস্য। জাতীয় দলের হয়ে সবসময় নিজের সবটুকু দিয়ে খেলেন। আর বিশ্বকাপ হলে তো কথাই নেই, নিজেকে পুরো উজাড় করে দেন এই উইঙ্গার।
ইতিহাস: ১৯৩৪ বিশ্বকাপে প্রথমবার খেলতে এসেই কোয়ার্টার ফাইনালে খেলে সুইজারল্যান্ড। একই ফল করে পরের আসরেই। ১৯৫০ বিশ্বকাপে গ্রুপপর্ব থেকে বিদায় নিলেও ১৯৫৪ সালে শেষবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনাল খেলে তারা।
এখন পর্যন্ত ১২ বার বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে সুইসরা। তিনবার কোয়ার্টার ফাইনালে খেলা ছাড়াও তিনবার খেলেছে রাউন্ড অব সিক্সটিনে। কাতার বিশ্বকাপে আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাওয়ার লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামছে মুরাত ইয়াকিনের দল।
