বাণিজ্য ডেস্ক:
সঠিকভাবে ছাড়ানো ও সংরক্ষণের অভাবে ৩০ শতাংশ কোরবানির পশুর চামড়া নষ্ট হয়। রোববার (২৫ জুন) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে দেয়া এক চিঠিতে এমন তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ)।
চিঠিতে বলা হয়েছে, চামড়ার গুণগত মান নির্ভর করে যথাযথভাবে চামড়া ছাড়ানো, সংগ্রহ ও সংরক্ষণের ওপর। প্রাণীর গা থেকে সঠিকভাবে চামড়া ছাড়ানো ও সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা হয় না। কোরবানির পশুর চামড়ার গুণগত মান বজায় রাখা ও ব্যবস্থাপনায় বেশ কিছু বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।
এগুলো হলো:
১) কাঁচা চামড়া সংরক্ষণের জন্য লবণ গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কাঁচা চামড়া প্রাথমিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য শুধু কোরবানির ঈদে প্রায় এক লাখ মেট্রিক টন লবণের চাহিদা রয়েছে। কোরবানির ঈদের সময় লবণের দাম বৃদ্ধি পায়। কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি এবং লবণের দাম যাতে বৃদ্ধি না পায়, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে সারা দেশে প্রয়োজনীয় পরিমাণ লবণ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
২) বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে এ বছরও ঈদুল আজহা গরমে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। যার ফলে চামড়া সংরক্ষণ করা কঠিন হয়ে পড়বে। এই পরিস্থিতিতে যারা কোরবানি দেবেন, তারা চামড়া ছাড়ানোর কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের মাধ্যমে যথাসময়ে পরিমাণমতো লবণ লাগিয়ে রাখলে কাঁচা চামড়া সংরক্ষণ সহজতর হবে। কাঁচা চামড়ায় যথাযথভাবে লবণ লাগানোর বার্তা সারা দেশে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
৩) স্থানীয় মাদ্রাসায় বা এতিমখানায় যারা চামড়া সংগ্রহ করেন, তাদের লবণ লাগানোর বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। এই ক্ষেত্রে পশু সম্পদ বিভাগ, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প করপোরেশন (বিসিক), স্থানীয় প্রশাসন, তথ্য কর্মকর্তা, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ভূমিকা রাখতে পারে।
৪) দেশের অভ্যন্তরে কোরবানির চামড়া পরিবহনে যাতে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না হয়, সে বিষয়ে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সীমান্তসহ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে তদারকি বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশ পুলিশবাহিনী এবং বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশকে (বিজিবি) প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে হবে।
৫) চামড়া সংগ্রহের জন্য ট্যানারি শিল্পের অনুকূলে ৫০০-৬০০ কোটি টাকা ঋণের ব্যবস্থা এবং ব্যাংক ঋণ বিতরণকালে কোনো ছিনতাই বা অঘটন রোধে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৬) স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় রাত ১০টার আগে কাঁচা চামড়া সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং পরিবহন নিশ্চিত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৭) দেশব্যাপী বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে নির্দেশনা দিতে হবে।
৮) ব্যাপকভাবে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে কোরবানির আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের লেদার সেক্টর বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিলের (এলএসবিপিসি) সহযোগিতায় লেস্-কাট হ্রাসকরণ ও কাঁচা চামড়া সঠিকভাবে সংরক্ষণ ও পরিবহনে সরকারি-বেসরকারি গণমাধ্যমে প্রয়োজনীয় প্রচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
বিটিএ আরও জানায়, চামড়াশিল্প বৈদেশিক মুদ্রা আয়, জাতীয় প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান ও মূল্য সংযোজনের নিরিখে সম্ভাবনাময় খাত। ঈদুল আজহায় শতকরা ৫০ ভাগ কাঁচা চামড়া সংগৃহীত হয়। যার পরিমাণ কমবেশি ১ কোটি ২৫ লাখ পিস চামড়া। দেশের বিভিন্ন হাট, ২৬৬ বড় ও ১ হাজার ৬০০টি মাঝারি আকারের, এ ছাড়াও ছোট আকারের আড়ত থেকে ট্যানারির মালিক ও বাণিজ্যিক রফতানিকারক ঈদের পর থেকে প্রায় তিন মাস পর্যন্ত লবণযুক্ত কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করে।
এ ছাড়া পোস্তা-ঢাকা নাটোর রেলওয়ে বাজার-নাটোর, রাজারহাট- যশোর, পলাশবাড়ী-গাইবান্ধা, তারাগার-রংপুর, মাতারী- নওগাঁ, শম্ভুগঞ্জ ময়মনসিংহ, পাকুটিয়া-টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জহাট-কিশোরগঞ্জ, ইলিয়টগঞ্জ-কুমিল্লা, আতুরা ডিপো- চট্টগ্রাম, আমিনবাজার- ঢাকা, টঙ্গী-গাজীপুরসহ উল্লেখযোগ্য আড়তগুলোতে প্রাথমিকভাবে কাঁচা চামড়া সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও মজুত করা হয়ে থাকে বলেও জানায় সংগঠনটি।
এর আগে রোববার (২৫ জুন) পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানির পশুর চামড়ার নতুন দাম নির্ধারণ করেছে সরকার। ঢাকায় প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম ৫০ থেকে ৫৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, গত বছরের চেয়ে ৩ টাকা বাড়িয়ে ঢাকায় প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম ৫০ থেকে ৫৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এ ছাড়া খাসির চামড়ার দাম অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। ঢাকায় প্রতি বর্গফুট খাসির চামড়া ১৮ টাকা থেকে ২০ টাকা এবং বকরির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১২ থেকে ১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বাণিজ্যমন্ত্রী জানান, গত বছর প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম ছিল ৪৭ টাকা থেকে ৫২ টাকা।
চলতি বছর অত্যধিক গরমের কারণে লবণ সহজলভ্য করতে পশুর হাটের পাশে লবণ বেচাকেনার ব্যবস্থা রাখা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি বন্ধ করে লবণের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে মজুতবিরোধী অভিযান চালানো হবে। তবে এবারও যদি চামড়ার দাম কারসাজির মাধ্যমে কমানো হয়, তাহলে কাঁচা চামড়া রফতানির অনুমোদন দেয়া হবে।