রাজনীতি ডেস্ক:
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও র্যালিসহ বিভিন্ন কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
শুক্রবার (১৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ভার্চুয়ালি এক সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচির ঘোষণা দেন তিনি।
রিজভী জানান, শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) সকাল ৭টায় ঢাকা থেকে জাতীয় স্মৃতিসৌধের উদ্দেশে রওয়ানা দেয়া হবে। স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ শেষে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মাজারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ এবং ফাতেহা পাঠ করা হবে। এরপর দুপুর ১টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ বিএনপির আয়োজনে বিজয় র্যালি শুরে হয়ে মগবাজার গিয়ে শেষ হবে।
বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সব নেতাকর্মীকে এই কর্মসূচি সফল করার আহ্বান জানান রুহুল কবির রিজভী।
সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন ইস্যুতে ক্ষমতাসীনদের সমালোচনা করে রিজভী অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ ২০১৪ সালে বিনাভোটে অটোপাস এবং ২০১৮ সালে ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতায় এসেছে। এবার আর কোনো রাখ-ঢাক নেই তাদের। লজ্জা-শরমের মাথা খেয়ে প্রকাশ্যে আসন বাটোয়ারা করে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা। গোটা দেশ গোল্লায় যাচ্ছে সেদিকে ন্যূনতম ভ্রূক্ষেপ নেই। তার পরিষদবর্গ-দলদাস-আজ্ঞাবহরা ব্যস্ত কীভাবে পাতানো নির্বাচনী ম্যাচ খেললে জনগণ এবং বিদেশিদের চোখে ধূলা দেয়া যাবে। একদল উচ্চ শিক্ষিত তথাকথিত আত্মা ও ব্যক্তিত্ব বিক্রি করা বুদ্ধিজীবী ব্যস্ত আছেন নির্বাচনে নৌকা জিতবে কত আসনে সেই হিসাব নিয়ে। প্রশাসন ব্যস্ত কিভাবে নির্বাচন করলে জনগণ বুঝতে পারবে না যে এটা পাতানো নির্বাচন হচ্ছে সেই কৌশল নিয়ে।
আওয়ামী লুটপাটে বাংলাদেশের অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে গেছে দাবি করে বিএনপির সিনিয়র এই নেতা বলেন, ধেয়ে আসছে প্রলয়ংকরী বিপর্যয়। দেশের ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ ৯ বিলিয়ন ডলারের নিচে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার এক সপ্তাহ আগে বলেছেন, আমরা বর্তমানে একেবারে তলানিতে এসেছি। আর তো নিচে নামার পথ নেই। আমার ৩৬ বছরের সিভিল ও পাবলিক সার্ভিসে কখনোই এমন ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট প্রত্যক্ষ করিনি। বিদেশি ঋণ ১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি। এই অবস্থায় কার্যত দেউলিয়াত্ব ঘোষণার অপেক্ষা মাত্র।
রিজভী বলেন, দেশ ধাবিত হচ্ছে নিশ্চিত ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতির দিকে। লুটপাট ও দুর্নীতি করে ব্যাংকিং সেক্টর ফোকলা করে দিয়েছে আওয়ামী লুটেরা গোষ্ঠী। টাকার ঘাটতির কারণে দেশের শরিয়াহভিত্তিক পাঁচ ব্যাংকের আর্থিক লেনদেন সেবা বন্ধের উপক্রম হয়েছে।
বর্তমানে আওয়ামী লীগ ছাড়া এই দেশ কারো বাসযোগ্য নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, গরিব আরও গরীব হচ্ছে। মানুষ সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছে। বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের উচ্চমূল্যের যাঁতাকলে মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। অর্থনীতি আজ মহাসংকটে নিমজ্জিত। রাষ্ট্রযন্ত্র অকার্যকর হয়ে পড়েছে।
রিজভী বলেন, এই পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে হলে প্রতিটি মানুষকে রাজপথে নেমে সরকারের ক্ষমতায় থাকার সিলমোহরের নির্বাচন বানচাল করে দিতে হবে। এখন আর কারো ঘরে বসে থাকার পরিস্থিতি নেই। আপনাকে প্রতিবাদে নামতেই হবে।
‘আমি বিএনপিসহ সব দল-মত নির্বিশেষে সবার প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি, রাষ্ট্রীয় অর্থের বিনিময়ে খরিদ করা ‘কুইন্স পার্টি’, ভূঁইফোড় পার্টি-তৃনভোজী পার্টি-ডামি পার্টি-খুঁদকুঁড়ো পার্টি এবং বিভিন্ন দল থেকে বিচ্যুত লোকজন হায়ার করে নিয়ে কথিত নির্বাচনী নাটক মঞ্চস্থ করার তামাশায় কেউ কোনো প্রক্রিয়ায় অংশ নেবেন না। ভোটকেন্দ্রে যাবেন না। ভোট দেবেন না। ‘আমরা আর মামুরা’ মার্কা এই নির্বাচনের প্রার্থী বা তাদের পক্ষভুক্তদের ত্যাগ করুন। বিএনপি বা অঙ্গসংঠনের কোনো কোনো নেতাকর্মীর এই ভুয়া নির্বাচন এবং কোনো প্রার্থীর সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে’, যোগ করেন তিনি।