আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
নেপালের রাজধানী কাঠমাণ্ডুতে সোমবার হাজার হাজার তরুণ রাস্তায় নেমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর সরকারের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ও দেশজুড়ে বিস্তৃত দুর্নীতির সংস্কৃতির অবসানের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে। তবে বিক্ষোভকারীদের ওপর কাঁদানে গ্যাস ও জলকামান নিক্ষেপ করে ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে পুলিশ।
ফেসবুক, ইউটিউব, এক্সসহ বেশ কয়েকটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুক্রবার থেকে প্রবেশ করা যাচ্ছে না। সরকার ২৬টি অনিবন্ধিত প্ল্যাটফরম বন্ধ করে দেওয়ার পর সাধারণ ব্যবহারকারীরা ক্ষুব্ধ ও বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে।
লক্ষাধিক নেপালি বিনোদন, খবর ও ব্যবসার জন্য ইনস্টাগ্রামের মতো জনপ্রিয় প্ল্যাটফরমগুলোর ওপর নির্ভর করে।
জেনারেশন জেড বিক্ষোভকারীরা জাতীয় পতাকা হাতে জাতীয় সংগীত গেয়ে কর্মসূচি শুরু করে। এরপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন।
ইউজান রাজভাণ্ডারি নামের ২৪ বছর বয়সী এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের প্রতিবাদের সূচনা হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিষেধাজ্ঞা থেকে, তবে আমরা শুধু এই কারণেই জড়ো হইনি।আমরা প্রতিবাদ করছি নেপালে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নেওয়া দুর্নীতির বিরুদ্ধে।’
ইক্ষামা তুমরোক নামের ২০ বছর বয়সী আরেক শিক্ষার্থী জানান, তিনি সরকারের ‘স্বৈরাচারী মানসিকতার’ বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা পরিবর্তন দেখতে চাই। অন্য প্রজন্ম হয়তো সহ্য করেছে, কিন্তু আমাদের প্রজন্মের সঙ্গে এর ইতি ঘটতে হবে।’
নিষেধাজ্ঞার পর সাধারণ নেপালিদের দুঃসহ সংগ্রামের সঙ্গে রাজনীতিবিদদের সন্তানদের বিলাসবহুল সামগ্রী ও বিদেশ ভ্রমণের ছবি তুলনা করার ভিডিও টিকটকে ভাইরাল হচ্ছে।
ভূমিকা ভারতী নামের প্রতিবাদকারী একজন বলেন, ‘বিদেশে দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলন হয়েছে। সেটাই হয়তো এখানে শুরু হতে পারে, সরকার সে ভয় পাচ্ছে।’
গত মাসে মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নেয়, প্রভাবিত কম্পানিগুলোকে সাত দিনের মধ্যে নেপালে নিবন্ধন করতে হবে, যোগাযোগের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দিতে হবে এবং স্থানীয়ভাবে অভিযোগ নিষ্পত্তি কর্মকর্তা ও নীতিমালা-অনুসরণ কর্মকর্তা মনোনীত করতে হবে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনার পর এ সিদ্ধান্ত আসে।
এক বিবৃতিতে রবিবার সরকার জানিয়েছে, তারা মতপ্রকাশ ও চিন্তার স্বাধীনতাকে সম্মান করে এবং এর সুরক্ষা ও অবাধ ব্যবহারের পরিবেশ তৈরিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
নেপাল অতীতেও জনপ্রিয় অনলাইন প্ল্যাটফরমগুলোর প্রবেশাধিকার সীমিত করেছে। চলতি বছরের জুলাইয়ে অনলাইন প্রতারণা ও মানি লন্ডারিং বেড়ে যাওয়ার অজুহাতে সরকার টেলিগ্রাম অ্যাপ বন্ধ করে দেয়। আর গত বছরের আগস্টে ৯ মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষে নেপালের নিয়ম মেনে চলতে সম্মত হওয়ার পর টিকটক ফের চালু করা হয়।