রাজনীতি ডেস্ক:
বিএনপির সাবেক নেতাদের নিয়ে পুনর্গঠন হচ্ছে সদ্য নিবন্ধন পাওয়া তৃণমূল বিএনপি। গত ১৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত কাউন্সিলে বিএনপির সাবেক নেতা প্রয়াত নাজমুল হুদার প্রতিষ্ঠিত দলটির চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন শমশের মুবিন চৌধুরী এবং মহাসচিব হন তৈমুর আলম খন্দকার।
এ অবস্থায় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের এক ঝাঁক সাবেক ও বর্তমান নেতা তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দিচ্ছেন বলে খবর চাউর হয়েছে। এদের মধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদও আছেন বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।
দলটির পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বুধবার (৮ নভেম্বর) বেলা ১১টায় তৃণমূল বিএনপির উদ্যোগে জাতীয় প্রেস ক্লাব অডিটোরিয়ামে দলে যোগদান অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।
সারা দেশ থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অসংখ্য নেতাকর্মী, অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা, সাংবাদিক, আইনজীবী আনুষ্ঠানিকভাবে তৃণমূল বিএনপিতে যোগদান করবেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন দলের চেয়ারপারসন শমশের মুবিন চৌধুরী বীর বিক্রম। বিশেষ অতিথি থাকবেন তৃণমূল বিএনপির নির্বাহী চেয়ারপারসন অ্যাডভোকেট অন্তরা সেলিমা হুদা, তৃণমূল বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারপারসন মেজর (অব.) ডা. শেখ হাবিবুর রহমান। এতে প্রধান বক্তা থাকবেন তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার।
ওই অনুষ্ঠানে মেজর হাফিজ যোগ দিচ্ছেন এমন গুঞ্জনের বিষয়ে জানতে চাইলে হাফিজের কোর্টে বল ঠেলে দেন তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম। এ বিষয়ে সরাসরি কিছু না বললেও কারা কারা যোগ দিচ্ছেন সে বিষয়ে চমক দেখাতে চান বলে জানান তিনি।
তৈমুর আলম সাংবাদিকদেরকে বলেন, আমরা বড় কোনো দলের ছত্রছায়ায় থেকে দল গোছাতে চাই না। আমরা স্বতন্ত্রভাবে এগিয়ে যেতে চাই। এ ধারাবাহিকতায় ৮ নভেম্বর আমাদের যোগদান অনুষ্ঠানে অনেকেই দলে আসবেন। কোনো লুটপাট এবং মানুষের ওপর নির্যাতনের ইতিহাস নেই, এমন যে কাউকে আমরা দলে নেব। তবে শর্ত হলো জনগণের জন্য কাজ করতে হবে।
মেজর হাফিজের যোগদানের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। এ নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকলে তাকে জিজ্ঞেস করতে পারেন। তবে দলের ফরম পূরণ করেছেন এমন কয়েকজন বুধবার দলে যোগ দেবেন। আর কয়েকজন বাকি থাকবেন, পরিবেশ-পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।’
এদিকে যোগদানের বিষয়ে জানতে চাইলে মেজর হাফিজও কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
দল থেকে মূল্যায়ন না হওয়ার দাবি করা হাফিজ এর আগে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে দল থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পেয়েছিলেন। সাবেক পানিসম্পদমন্ত্রী মেজর হাফিজ ১৯৯১ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হন। এরপর বিগত ২২ বছর ধরে দলের অন্যতম ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন হাফিজ। ৬ বার সংসদ সদস্য হয়েছেন তিনি।
অন্যদিকে আগস্টে নিবন্ধন পাওয়া ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন’ নামে নতুন আরেকটি দলেও ভিড়ছেন বিএনপির সাবেক নেতারা। বিষয়গুলোকে বিএনপি নেতারা প্রকাশ্যে গুরুত্ব না দিলেও ভেতরে ভেতরে সতর্ক নজর রাখছেন বলে শোনা যাচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপির ভেতরের সিদ্ধান্তহীনতা, ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে দল ছাড়ছেন অনেকে।
সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক অজয় দাশ গুপ্ত বলেন, তারা সবসময় বলছে, যেকোনো মুহূর্তে সরকারকে উৎখাত করে ফেলবেন। কিন্তু বাস্তবে যখন নেতাকর্মীরা তার কিছুই দেখছেন না, তখন তারা দলটিকে নেতিবাচক হিসেবে ভাবেন।
বিরোধী দল ও জোটকে বেকায়দায় ফেলতে রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে ক্ষমতাসীন দল সুযোগ নেবে–এমনটা স্বাভাবিক বলেই মনে করেন তিনি।
অজয় দাশ গুপ্ত আরও বলেন, ‘নির্বাচনে নিজের ভালো করার জন্য, নিজের জন্য সুবিধাজনক পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য তো ক্ষমতাসীনরা কাজ করবেই। আর বিএনপি সে সুযোগই করে দিচ্ছে, যা অন্যরা কাজে লাগাচ্ছে।’
একই রকম মত দেন আরেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন অর রশিদ। তিনি বলেন, ‘বিরোধী দলের সঙ্গে রাজনীতির মাঠে, নির্বাচনের মাঠে কেউ যখন খেলবে, তখন সে তো কৌশল অবলম্বন করবেই। এখানে দোষের কিছু নেই। তবে দেখতে হবে সেটা নৈতিক না অনৈতিক।’
নির্বাচনী রাজনীতিতে ছোট দল ও জোট প্রভাব রাখলেও সামগ্রিক রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ছাড়া কেউ খুব একটা তাৎপর্য বহন করে না বলেও মনে করেন বিশ্লেষকরা।