মাহমুদুল হাসান শাওন:
সাতক্ষীরার দেবহাটায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)’র উপজেলা শাখার সম্মেলন ঘিরে দু’গ্রুপের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ এবং বিশৃঙ্খলা এড়াতে সম্মেলনস্থল ও আশপাশের এলাকায় ১৪৪ ধারা জারী করেছে প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) বিকালে উপজেলার গাজীরহাট বাজার সংলগ্ন শিমুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে উপজেলা বিএনপির এ সম্মেলন আয়োজন করা হয়েছিল। এমনকি ওই সম্মেলনে বিএনপির জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের শীর্ষ নেতাদের উপস্থিত থাকারও কথা ছিল।
কিন্ত উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিপি ও সাতক্ষীরা-০৩ আসনে ধানের শীষের মনোনয়ন প্রত্যাশী মো. মহিউদ্দীন সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে একতরফাভাবে এ সম্মেলন আয়োজনের অভিযোগ তুলে বুধবার রাতেই সম্মেলনস্থলে একই সময়ে পাল্টা সমাবেশের ডাক দেয় উপজেলা বিএনপির আহবায়ক সিরাজুল ইসলামের অনুসারী বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক পারুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক বাবু ও নওয়াপাড়া ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান রেজাউল করিমসহ তাদের সমর্থকরা। এতেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে দেবহাটা উপজেলা বিএনপির রাজনৈতিক মাঠ।
একপর্যায়ে বিশৃঙ্খলা এড়াতে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে সম্মেলনস্থল ও আশপাশের এলাকায় সব ধরনের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৪ ধারা জারীর আদেশ দেন দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আসাদুজ্জামান।
দেবহাটা থানার ওসি মো. হযরত আলী বলেন, বিএনপির দু’গ্রুপের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘিরে যাতে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেজন্য ১৪৪ ধারা জারীর পর পুলিশি তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সমুন্নত রাখা ও জননিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে সম্মেলনস্থলসহ আশপাশের এলাকায় ১৪৪ ধারা জারী করা হয়েছে। আদেশে ওই এলাকায় সব ধরনের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিএনপির দু’গ্রুপের শীর্ষ নেতাদের সংঘাতে না জড়ানোর ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারীর এ আদেশ বহাল থাকবে।
এদিকে, সাম্প্রতিক সময়ে আধিপত্য বিস্তার ও ক্ষমতা দখলে মরিয়া হয়ে ওঠা দেবহাটা উপজেলা বিএনপির শীর্ষ নেতাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে দিশেহারা হয়ে পড়েছে দলটির তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। এব্যাপারে বর্তমান উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির একাধিক সিনিয়র নেতা বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) কেন্দ্রীয় নির্দেশনা ও জেলার শীর্ষ নেতাদের পরামর্শক্রমে সংগঠনকে গতিশীল করতে ইতোমধ্যেই যুগ্ম আহবায়কদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির সুপারিশে একে একে উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন ও এর অর্ন্তগত ৪৫টি ওয়ার্ড শাখার নতুন কমিটি অনুমোদন করেছেন উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব মহিউদ্দিন সিদ্দিকী। বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনা বাস্তবায়নে চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে লিপ্তদের বাদ দিয়ে এসব ইউনিটের নতুন নেতৃত্বে দীর্ঘদিনের ত্যাগী নেতাকর্মীদের স্থান দেয়া হয়েছে। সবগুলো ইউনিটের সম্মেলন শেষে আজ উপজেলা শাখার সম্মেলন আয়োজন করা হয়েছিল। যা মেনে নিতে পারেনি বিতর্কিত কর্মকান্ডে কোনঠাসা হয়ে পড়া কতিপয় ব্যক্তি।
বিএনপি নেতারা আরও অভিযোগ করে বলেন, একসময় যেসব নেতা বিএনপি থেকে দুরে সরে আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় থেকেছেন, আওয়ামী লীগের পৃষ্ঠপোষকতায় অবৈধ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন, স্বেচ্ছায় বিএনপির রাজনীতি থেকে অবসর নিয়েছেন; তারাই আবার ৫ আগষ্টের পর রাজনীতির মাঠে আর্বিভ‚ত হয়ে সীমাহীন চাঁদাবাজি ও মৎস্যঘের- সরকারি জমি-হাটবাজার দখল, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুরসহ নানা সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়েছেন। আধিপত্য বিস্তারের জন্য এসব বিতর্কিত এবং চাঁদাবাজ, দখলবাজদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে দলীয় কোন্দল সৃষ্টির জন্য উপজেলা বিএনপির আহবায়ক সিরাজুল ইসলাম ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক বাবুকে দায়ি করেন তারা।
সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির আহবায়ক অ্যাড. সৈয়দ ইফতেখার আলী বলেন, দেবহাটায় বিএনপির সম্মেলনকে ঘিরে দু’গ্রুপের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দেয়ায় উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে প্রশাসনের ১৪৪ ধারা জারীর বিষয়টি আমরা জেনেছি। দু’পক্ষের সাথে আলোচনা করে উদ্ভুত সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হবে।উল্লেখ্য, দেবহাটার আগে সাতক্ষীরার শ্যামনগর, কালীগঞ্জ ও আশাশুনি উপজেলায় বিএনপি নেতাকর্মীরা দফায় দফায় সংঘর্ষে লিপ্ত হলে ১৪৪ ধারা জারী করে প্রশাসন।