জাতীয় ডেস্ক:
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেছেন, নৌকাবাইচ আবহমান বাংলার সমৃদ্ধ সংস্কৃতির একটি অনন্য ঐতিহ্য। বাংলার আনাচে কানাচে ছড়িয়ে আছে লোকসংস্কৃতির অমূল্য বহু উপাদান। এসব লোকসংস্কৃতি সঠিকভাবে লালন করা গেলে এগুলো বিশ্ব সংস্কৃতি ও সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ হয়ে উঠতে পারে। ধর্মের দোহাই দিয়ে অনেকেই বাঙালি সংস্কৃতির চেতনাকে রুখে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। যারা যারা চেষ্টা করেছে তারা বারবার ব্যর্থ হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে পাবনার সাঁথিয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে ইছামতি নদীতে নৌকাবাইচের ফাইনাল প্রতিযোগিতায় উপস্থিত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এসব কথা বলেন।
রাষ্ট্রপ্রধান আরও বলেন, পাবনা জেলা বাঙালি লোকসংস্কৃতির উর্বর ক্ষেত্র। এ জেলায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন বাংলা সিনেমার কিংবদন্তি নায়িকা সুচিত্রা সেন। বাংলা সাহিত্য সংস্কৃতির অনেক দিকপাল ও কীর্তিমানের জন্ম এ জেলায়। আমরা আমাদের শিল্প-সংস্কৃতির ঐতিহ্য নিয়ে গর্বিত। নৌকাবাইচ আমাদের এলাকায় তেমনি একটি ঐতিহ্যবাহী উৎসব। আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বিশ্বের যে কোনো দেশের তুলনায় উন্নত, সমৃদ্ধ ও অমলিন। বাংলার আকাশে বাতাসে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকা আমাদের সাংস্কৃতিক উপাদানগুলোকে খুঁজে বের করতে হবে। এগুলোর সঠিক পরিচর্যা আমাদের সংস্কৃতিকে আরও অনেক উচ্চতা নিয়ে যেতে পারে।
রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, ‘করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ নানা চ্যালেঞ্জের মধ্যেও বাংলাদেশ অর্থনীতির নেতিবাচক পরিস্থিতি মোকাবিলা করে এগিয়ে যাচ্ছে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ, মেট্রোরেল, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ, কর্ণফুলী টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ সকল মেগা প্রকল্পের কাজ সময়মতো শেষ হয়েছে। জনগণ এর সুফল পেতে শুরু করেছে। পাবনার উন্নয়নেও নতুন গতি এসেছে। ২০০৮ সালে পাবনা মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হলেও এতদিনে কোনো হাসপাতাল ছিল না। আজ সকালেই পাবনায় ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল নির্মাণকাজের শুভ সূচনা করা হয়েছে। পাবনা থেকে রেল চলাচল এ মাসেই শুরু করার কথা থাকলেও প্রশাসনিক ও কারিগরি কারণে তা সম্ভব হয়নি। তবে অল্পদিনের মধ্যে পাবনা থেকে রেল চলাচল শুরু হবে ইনশাআল্লাহ। এছাড়া পাবনার প্রাণ কেন্দ্র দিয়ে বয়ে যাওয়া ইছামতি নদীর সংস্কার ও পুনরুদ্ধারের একটি প্রকল্প চূড়ান্ত অনুমোদনের পর্যায়ে রয়েছে।’
উন্নয়ন একটি চলমান প্রক্রিয়া উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘উন্নয়ন তখনই ফলপ্রসূ হয় যখন এর সাথে জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ, সম্পৃক্ততা ও সহযোগিতা থাকে। তাই পাবনার উন্নয়নের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। নীতি-নৈতিকতা ও আদর্শের কারণে আমরা বিভিন্ন মত ও পথের অনুসারী হতে পারি৷ কিন্তু পাবনার উন্নয়নে আমরা এক ও ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবো, এটাই জনগণের প্রত্যাশা।’
ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু এমপির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ফার্স্ট লেডি ড. রেবেকা সুলতানা। স্বাগত বক্তব্য দেন, সাঁথিয়া পৌরসভার মেয়র মাহবুবুল আলম বাচ্চু।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে পাবনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য নুরুজ্জামান বিশ্বাস, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আ স ম আব্দুর রহিম পাকন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল রহিম লাল, বেড়া পৌরসভার মেয়র অ্যাডভোকেট আসিফ শামস রঞ্জন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জেলার বহু কাঙ্ক্ষিত পাবনা মেডিকেল কলেজে ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।