খেলাধুলা ডেস্ক:
শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে সুপার ফোরে যাত্রা শুরুর পর আজ বাংলাদেশ ক্রিকেট দল মুখোমুখি হতে যাচ্ছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের। দুবাইয়ে রাত সাড়ে ৮টায় লিটন কুমার দাসরা মাঠে নামবেন ভারতের বিপক্ষে। কাগজে কলমে দুই দলের শক্তি, সাম্প্রতিক ফরম ও পরিসংখ্যান ভারতের পক্ষেই যায়। তবে ক্রিকেট শুধু সংখ্যার খেলা নয়, এটি আবেগ, আত্মবিশ্বাস ও মুহূর্তকে কাজে লাগানোর লড়াই। আর সেই জায়গাতেই বাংলাদেশ কোচ ফিল সিমন্স জোর দিয়েছেন।
গতকাল সংবাদ সম্মেলনে সিমন্স স্পষ্ট করেই বলেছেন, তার দল শুধু ম্যাচ জিততে মাঠে নামে না, বরং বড় কিছু করার স্বপ্ন নিয়েই এগোচ্ছে। তার কণ্ঠে ছিল দৃঢ় বিশ্বাস, ‘আমরা শুধু শ্রীলঙ্কাকে হারাতে আসিনি। আমরা এসেছি চ্যাম্পিয়ন হতে। বাদ পড়লে বা চ্যাম্পিয়ন হলে তখনই আবেগ দেখা যাবে। এখন আমার কাজ ড্রেসিংরুমে সবার পা মাটিতে রাখা।’ কোচের এমন কথা বাংলাদেশের ক্রিকেট সমর্থকদের নতুন করে আশাবাদী করে তুলেছে।
বাংলাদেশের বিপক্ষে ভারতের একাদশে কারা থাকছেন
ভারতের সাম্প্রতিক টি-টোয়েন্টি রেকর্ড ভীতিকর। ২০২৪ সালের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ৩৫ ম্যাচ খেলে ৩২টিতে জয়, হার মাত্র ৩টিতে। এই সময়ে তারা পাকিস্তানকে পরপর হারিয়েছে, যাদের সঙ্গে ঐতিহাসিকভাবে বড় উত্তেজনার প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল। ভারতীয় অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব পর্যন্ত বলছেন, পাকিস্তানের সঙ্গে আর কোনো ‘রাইভ্যালরি’ নেই। এমন এক সময়েই ভারতের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ, যাদের বিপক্ষে ইতিহাসটা একেবারেই একপেশে-১৭ ম্যাচে ১৬ জয় ভারতের, একমাত্র জয় বাংলাদেশের ২০১৯ সালে।
কিন্তু এখানেই সিমন্স অন্যভাবে বিষয়টা দেখতে চান। তার মতে, ক্রিকেট দিনের খেলা। আগের জয়-পরাজয় এখানে খুব একটা কাজে আসে না। ‘সব দলেরই ভারতকে হারানোর সক্ষমতা আছে। খেলাটা হয় একটা নির্দিষ্ট দিনে। ভারত আগে কী করেছে, সেটা তখন কোনো কাজে আসে না। ঐ সাড়ে তিন ঘণ্টায় কী হলো-সেটাই আসল।’ এই মানসিকতা যদি মাঠে প্রতিফলিত হয়, তবে যে কোনো কিছুই সম্ভব।
ভারতের বিপক্ষে একাদশে পরিবর্তন আনতে পারে বাংলাদেশ
বাংলাদেশের জন্য ভারতের বিপক্ষে এই ম্যাচে সবচেয়ে বড় শক্তি হবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পাওয়া জয়। ধীরগতির দুবাই উইকেটে মোস্তাফিজরা দেখিয়েছেন অসাধারণ নিয়ন্ত্রণ। এটিই ভারতীয় শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপের বিপক্ষেও কাজে লাগতে পারে। বিশেষ করে মাঝের ওভারগুলোতে রান চেপে ধরা গেলে ভারতকে ভুল করতে বাধ্য করা সম্ভব।
সিমন্স এ ব্যাপারেও স্পষ্ট-ভারতের বিপক্ষে জয় পেতে হলে সুযোগগুলো কাজে লাগাতে হবে। একটিও ক্যাচ হাতছাড়া করা যাবে না, একটিও সহজ রান নিতে দেওয়া যাবে না। বাংলাদেশের ব্যাটারদেরও দায়িত্ব নিতে হবে ইনিংস গড়ে তোলার। কারণ ভারতের মতো দলের বিপক্ষে ছোটখাটো ভুলই ম্যাচের গতিপথ বদলে দিতে পারে।
ভারতের বিপক্ষে খেলার মধ্যেই বাড়তি চাপ থাকে। মিডিয়া হাইপ, দর্শকের প্রত্যাশা, আর প্রতিপক্ষের শক্তি-সবমিলে ম্যাচকে ঘিরে বাড়তি উত্তেজনা তৈরি হয়। কিন্তু সিমন্স তার দলের কাছে একটাই বার্তা দিয়েছেন-উপভোগ করো প্রতিটি মুহূর্ত। তার কথায়, ‘সব ম্যাচেই হাইপ থাকে। বিশেষ করে ভারত যেহেতু এক নম্বর টি-টোয়েন্টি দল, তাদের বিপক্ষে তো থাকবেই। এটা থাকা উচিতও। আমরা এটা উপভোগ করি। প্রতিটি মুহূর্ত, প্রতিটি ম্যাচ উপভোগ করি। উপভোগ করো, সেরাটা দাও-ম্যাচের আগে আমাদের ভাবনা এটাই।’
এই মানসিক শক্তিই বড় ম্যাচে পার্থক্য গড়ে দেয়। আবেগে ভেসে গিয়ে নয়, ঠান্ডা মাথায় সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়াই হবে বাংলাদেশ দলের মূল কাজ। বাংলাদেশ-ভারত লড়াইয়ের ইতিহাস একতরফা হলেও ক্রিকেটে কিছুই অসম্ভব নয়। ধীরগতির উইকেটে মোস্তাফিজদের কৌশল, লিটন-হৃদয়দের দায়িত্বশীল ব্যাটিং আর অভিজ্ঞতা যদি সঠিকভাবে কাজে লাগে, তবে বাংলাদেশ সত্যিই ভারতকে চমকে দিতে পারে। এক জয়ই বদলে দিতে পারে পুরো টুর্নামেন্টের চিত্র-বাংলাদেশকে পৌঁছে দিতে পারে ফাইনালের একদম দুয়ারে।
আজ রাতে ২০১৯ সালের পর আবারও ভারতকে হারানোর রূপকথা লিখতে পারবে বাংলাদেশ? নাকি ভারতের সাম্প্রতিক আধিপত্যই শেষ পর্যন্ত জিতে যাবে? উত্তর মেলাতে দুবাইয়ে চোখ থাকবে ক্রিকেটপ্রেমীদের।