বিনোদন ডেস্ক :
কারো গায়ের রঙ, গোত্র কিংবা পেশা দিয়ে মানুষের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করার নামই বর্ণবাদ। যুগের পর যুগ এর শিকার হয়ে দমন-নিপীড়নে পড়েছে বহু জাতি। আজকের গল্পটা দক্ষিণ আফ্রিকার। একটা সময় বাইরের দুনিয়ার কাছে কেবল বর্ণ-বৈষম্যের দেশ হিসেবেই পরিচিত ছিল এই দেশটি।
প্রায় সাড়ে তিনশ বছর ধরে শিক্ষা, সমাজ, রাষ্ট্র সবক্ষেত্রে এ প্রথার শিকার হয়েছেন তারা। ১৬৮৮-১৭০০ সালের মধ্যে ২০০ ক্যালভিন মতাদর্শী ফরাসির আগমন ঘটে, যারা প্রত্যেকেই কালো চামড়ার মানুষের ভীষণ ঘৃণার চোখে দেখত। প্রকট হয়ে ওঠে বর্ণবৈষম্য, বেড়ে যায় কৃষ্ণাঙ্গদের ওপর নিপীড়ন।
তবে কালের বিবর্তনে পরিবর্তন এসেছে দক্ষিণ আফ্রিকায়। বদলেছে সেসব প্রথাগুলিও। কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠী নিজেদের অধিকার আদায়ে সচেষ্ট হয়েছে। বৈষম্যের বেড়াজাল থেকে নিজেকে মেলে ধরতে শুরু করেছেন। তেমনি বর্ণবাদের এই দেশে কৃষ্ণাঙ্গ এক নারীর বৈষম্যের দেয়াল ভেঙে আকাশ ছোঁয়ার গল্প নিয়ে আজ কথা বলব।
রেফিলওয়ে লেডওয়াবা যিনি সাউথ আফ্রিকার প্রথম নারী কৃষ্ণাঙ্গ পাইলট। যিনি নিজেও বৈষম্যের শিকার হয়েছেন বহুবার, তবে নিজেকে আলাদাভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল রেফিলওয়ে লেডওয়াবাকে।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে তার অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন রেফিলওয়ে। প্রথমবার কেবিন ক্রু হিসেবে প্রশিক্ষণের সময়ই তার ককপিটের প্রতি টান অনুভব হয়েছিল। তখন তার শ্বেতাঙ্গ সহকর্মীরা তাকে পাইলট হতে উৎসাহিত করেন তাকে তেলের খরচ দিয়ে প্রশিক্ষণ নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়।
পরবর্তীতে সুযোগ মিলে ২০০৫ সালে। ডারবানের বাইরে একটি সরকারি স্কুলে শুরু হয় হেলিকপ্টার চালানোর প্রশিক্ষণ। প্রথমে স্নায়ুর চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হয় রেফিলওয়েকে। প্রথমে তার মনে হয়েছিল কোনো নারীর পক্ষে কোনো পুরুষ ছাড়া একা হেলিকপ্টার ওড়ানো অসম্ভব।
কিন্তু দমে যাননি তিনি। বারবার ব্যর্থতার পর ঠিকি উঠে দাঁড়িয়েছেন। সব জটিলতাকেই অদম্য ইচ্ছা শক্তি নিয়ে পার করেছেন। সঙ্গে ছিল সহকর্মীদের অনুপ্রেরণা। তার এই অদম্য ইচ্ছাশক্তি তাকে সাউথ আফ্রিকার সনদপ্রাপ্ত প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ হেলিকপ্টার চালকের পরিচয় দিয়েছে।
এক ইন্টারভিউতে রেফিলওয়ে বলেছিলেন, ‘যখন আপনি একজন মহিলা একই সঙ্গে কালো গায়ের রঙের তখন এটি দ্বিগুণ চ্যালেঞ্জ আপনার জন্য এবং কঠিন। এ ক্ষেত্রে সঠিক মানুষের সহযোগিতা অবশ্যই কাম্য। সে সময় সঠিক মানুষের সহযোগিতা মিললে অবশ্যই অসাধ্য সাধন করা সম্ভব।’
যখন প্রথমবার একা তিনি হেলিকপ্টার চালিয়েছেন, তার মনে হয়েছিল তিনি তার পেছনের সেই জাতি এবং লিঙ্গভেদে বৈষম্য, প্রথা- বাধাগুলি ভেঙে ফেলেছেন। কয়েক মাস পরে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার পুলিশ সার্ভিসে যোগদানকারী প্রথম মহিলা ব্ল্যাক হেলিকপ্টার পাইলট হন। রেফিলওয়ে লেডওয়াবা নিজে যা করতে পেরেছেন, তার অর্জন, তিনি তা সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে চেয়েছেন। তার মতো আরও নারীদের উৎসাহ জোগাতে চেয়েছেন।
যার প্রচেষ্টায় তিনি এক দশকেরও বেশি সময় ধরে আফ্রিকার চারটি দেশে তার ফাউন্ডেশন, গার্লস ফ্লাই প্রোগ্রাম ইন আফ্রিকা (GFPA) চালাচ্ছেন। শত শত তরুণীকে মহাকাশ ও বিমান চালনায় প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। রেফিলওয়ে লেডওয়াবার মতে তিনি সব সময় নিন্দুকের চেয়ে আশাবাদীদের পক্ষপাত করেছেন।