রাজধানীর বঙ্গবাজার মার্কেটের পুড়ে যাওয়া দোকানের শাটার, স্টিল ও লোহা নিয়ে দৌড়ে পালাচ্ছিল কয়েকজন কিশোর। ১২ থেকে ১৪ বছর বয়সী এসব কিশোরের পিছু পিছু গিয়ে দেখা যায় সরকারি কর্মচারী হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ভ্যানে ওঠানো হচ্ছে সেসব লোহা। ভ্যানে করে পরে সেগুলো চলে যাচ্ছে অন্য কোথাও। এসব দেখে যে কেউ বলবেন এখানে হরিলুট চলছে। খোদ পুলিশের সামনে এগুলো ঘটলেও নির্বিকার তারা। কারণ কে কার দোকানের মালামাল নিয়ে যাচ্ছে সেটা শনাক্ত করা কঠিন।
সাব্বির নামের এক কিশোরের কাছে জানতে চাইলে সে বলে, তাদের কয়েকজন লোক এই কাজ দিয়েছেন। তারা বলেছেন তাদের দোকানের লোহা, তাই সেখান থেকে নিয়ে আসতে।
যদিও এগুলো কে নিতে বলেছেন তার নাম বলতে পারেনি সাব্বির। তবে সে জানায়, এসব লোহা ভ্যানে তুলে দিলে ১০০ টাকা দেবেন ওই ব্যক্তি।
বুধবার (৫ এপ্রিল) বিকেল ৫টার দিকে সরেজমিনে বঙ্গবাজার মার্কেটে এই চিত্র দেখা যায়। মার্কেটের আশপাশে পুলিশ মোতায়েন থাকলেও তারা ছিলেন অনেকটা নিশ্চুপ।
শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে নারী-পুরুষ সব ধরনের বয়সীদের দেখা যায়, কেউ মাথায় করে, কেউ হাতে, কেউ আবার কাঁধে বা ভ্যানে যেভাবে পারছে লোহার জিনিসপত্র নিয়ে যাচ্ছে।
মার্কেটের সামনে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থাকা দোকানি জাফর হোসেন জাগো নিউজকে জানান, যে যেভাবে পারছে লোহা থেকে শুরু করে যা পাচ্ছে তাই নিয়ে যাচ্ছে। কারও পৌষ মাস কারও সর্বনাশ!
সরকারি কর্মচারী হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা এক ভ্যানে তোলা হচ্ছিল পুড়ে যাওয়া দোকানের লোহা। ভ্যানচালক ইকবাল জাগো নিউজকে বলেন, একজন ৫০০ টাকায় ঠিক করেছেন এসব লোহা এখান থেকে তুলে নিয়ে তার গ্যারেজে দেওয়ার জন্য।
লোহা ছাড়াও পুড়ে যাওয়া কাপড়ও নিতে এসেছেন অনেকেই। তাদেরই একজন ফাতেমা বেগম। জাগো নিউজকে ফাতেমা বলেন, ‘আমি বস্তিতে থাকি। খবর পেলাম এখানে আগুন লেগেছে। কাপড় পড়ে আছে অনেক। তাই এসে (ব্যবহার করার মতো) কাপড় খুঁজছিলাম। একটা শাড়ি পেয়েছি, তবে কিছু অংশ পোড়া। আর পোলার (ছেলের) জন্য দুইটা প্যান্ট পেয়েছি, তবে মনে হয় সেগুলো পোলার জন্য বড় হবে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ সদস্য বলেন, যারা এখানে আসছেন সবাই বলছেন তাদের দোকান পুড়েছে। তাই তারা তাদের মালামাল নিয়ে যাচ্ছেন। এখন কার দোকান পুড়েছে এটা নিশ্চিত করবে কে?
বিকেল ৫টার পরে ঘটনাস্থলে আসেন শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূর মোহাম্মদ। এসেই তিনি ঘটনা দেখার পর হ্যান্ডমাইক নিয়ে পুলিশ সদস্যদের একত্রিত করেন। পরে বাঁশি দিয়ে বহিরাগত সবাইকে মার্কেট থেকে বের করে দেন। এরপর মার্কেটের আশপাশে বহিরাগতদের প্রবেশে পুলিশ সদস্যদের কঠোর হতে বলেন। এছাড়া ফায়ার সার্ভিস পানি ছিটিয়ে বহিরাগতদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
জানতে চাইলে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূর মোহাম্মদ জাগো নিউজকে বলেন, এখানে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এখন থেকে আর বহিরাগত প্রবেশ করতে পারবে না।