আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
তুরস্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রী হুলুসি আকার বলছেন, ন্যাটোর বাইরে গিয়ে জোট গঠন করলে তাতে এই সংস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। গত মাসে গ্রিস ও ফ্রান্স প্রতিরক্ষা চুক্তিতে সম্মত হওয়ার পর ন্যাটো সদস্য তুরস্কের কাছ থেকে এমন মন্তব্য এসেছে।
সেপ্টেম্বরে ন্যাটোমিত্র গ্রিস ও ফ্রান্স একটি কৌশলগত সামরিক ও প্রতিরক্ষা চুক্তিতে সই করেছে। এতে ৩০০ কোটি ইউরোর সমমূল্যের তিন ফরাসি রণতরীও রয়েছে।-খবর রয়টার্সের
চলতি মাসে গ্রিস পররাষ্ট্রমন্ত্রী কেইরিয়াকোস মিটসোটাকিস বলেন, বিদেশি হুমকির মুখে পরস্পরের সহযোগিতার সুযোগ তৈরিতে আমরা একটি চুক্তিতে সই করেছি।
কিন্তু তুর্কিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী হুলুসি আকার বলেন, আমরা যে ন্যাটোতে আছি, সেটা মাথায় নিয়ে সবার জানা উচিত, এই সংস্থার বাইরে বিভিন্ন জোট গঠন করলে ন্যাটোসহ আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এতে আমাদের আত্মবিশ্বাস নড়বড়ে হয়ে যেতে পারে।
চলতি সপ্তাহে ব্রাসেলসে ন্যাটো প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি। জলসীমা ও মহীসোপান নিয়ে তুরস্ক ও গ্রিসের মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে। এ বছরের শুরুতে বিরোধ মীমাংসায় দুদেশের মধ্যে পরীক্ষামূলক যোগাযোগ হয়েছে।
হুলুসি আকার বলেন, গ্রিক পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তার গঠনমূলক ও ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। সামনের দিনগুলোতে আমরা আরও ইতিবাচক ফল আসবে বলে আশা করছি।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভাইপার এফ-১৬ যুদ্ধবিমান পেতে কারিগরি আলোচনা শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে তুর্কিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে যুদ্ধবিমানের আধুনিকায়নের যন্ত্রও কিনতে চাচ্ছে তুরস্ক।
এর আগে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান জানিয়েছিলেন, তাদেরকে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান দিতে প্রস্তাব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তার এই মন্তব্যের সত্যতা নিশ্চিত করেনি মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এরদোগান বলেন, এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানের বিনিয়োগের বিনিময়ে এফ-১৬ বিক্রি করতে চাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। রাশিয়া থেকে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ক্রয়ের পর এফ-৩৫ প্রকল্প থেকে তুরস্ককে বাদ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
এর আগে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ৪০টিলকহিড মার্টিন-নির্মিত এফ-১৬ যুদ্ধবিমান কিনতে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে তুরস্ক। পাশাপাশি বিমান আধুনিকায়নের ৮০টি যন্ত্র চেয়েছে আংকারা।
এরদোগান বলেন, এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান প্রকল্পে ফিরতে চাচ্ছে তুরস্ক। এ নিয়ে আলোচনা এগিয়ে চলছে। কারণে এই প্রকল্পে ইতিমধ্যে ১৪০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে। সেই অর্থের বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র এখন এফ-১৬ যুদ্ধবিমান বিক্রি করতে চাচ্ছে।
তিনি বলেন, দেশের প্রতিরক্ষার প্রয়োজনে যে ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে মনে হচ্ছে, তা নিতে বলা হয়েছে। তবে নতুন এফ-১৬ যুদ্ধবিমান বিমান বহরকে সমৃদ্ধ করতে সহায়তা করবে।
শতাধিক এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানের ক্রয়াদেশ দিয়েছিল আংকারা, যা লকহিড মার্টিনের তৈরি। কিন্তু ২০১৯ সালে এই প্রকল্প থেকে তুরস্ককে বাদ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। কারণ রাশিয়া থেকে এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ক্রয় করেছে আংকারা।
এতে কয়েক দশকের তুর্কি-মার্কিন সম্পর্কে ফাটল দেখা দিয়েছে। গেল পাঁচ বছর ধরে সিরীয় নীতি, মস্কোর সঙ্গে আংকারার সম্পর্ক, পূর্ব ভূমধ্যসাগরে তুরস্কের নৌ উচ্চাকাঙ্ক্ষা, তুরস্কের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকের বিরুদ্ধে মার্কিন অভিযোগ ও বাকস্বাধীনতাসহ তুরস্কের নাজুক মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে দুই দেশের মধ্যে ব্যাপক মতবিরোধ দেখা গেছে।
তুরস্কের কাছে যুদ্ধবিমান বিক্রয়ে মার্কিন কংগ্রেসের অনুমোদন পাওয়া কঠিন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ ন্যাটোমিত্রকে নিয়ে কংগ্রেস সদস্যদের মধ্যে গভীর তিক্ততা আছে। বিশেষ করে মস্কোর কাছ থেকে আংকারার এস-৪০০ ক্রয় ও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে দ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছেছে।
এছাড়া রুশ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ক্রয়ের পর তুরস্কের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে তুরস্কের প্রতিরক্ষা শিল্প অধিদপ্তর ও তার প্রধান ইসমায়েল ডেমিরসহ আরও তিন ব্যক্তিকে কালোতালিকাভুক্ত করে ওয়াশিংটন।
এরপর থেকে রুশ অস্ত্র ক্রয়ে তুরস্ককে বারবার হুঁশিয়ারি করে যাচ্ছে মার্কিন প্রশাসন। কিন্তু গত সপ্তাহে রাশিয়া থেকে দ্বিতীয় দফায় এস-৪০০ ক্রয়ের আভাস দিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। এতে ওয়াশিংটনের সঙ্গে মস্কোর সম্পর্কের ফাটল আরও গভীর হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
আর তুরস্কের বিরুদ্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনের চাপ বাড়াতে পদক্ষেপ নিতে পারে কংগ্রেস।