হোম রাজনীতি ফ্যাসিস্টদের সঙ্গে কাজ করছে জামায়াত, অভিযোগ রিজভীর

ফ্যাসিস্টদের সঙ্গে কাজ করছে জামায়াত, অভিযোগ রিজভীর

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 50 ভিউজ

নিউজ ডেস্ক:
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ‘পতিত ফ্যাসিস্টদের’ সঙ্গে কাজ করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এই মন্তব্য করেন।

রিজভী বলেন, ‘যারা ফ্যাসিস্টদের প্রত্যাবর্তন ঘটানোর জন্য চিন্তা করছেন, তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করার জন্য চিন্তা করছেন; তারা কী ইতিহাস থেকে কোনও শিক্ষা নেননি।’

জামায়াত ইসলামকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়েছে আমাদের দেশের ইসলামপন্থি একটি রাজনৈতিক দল বরাবরই আওয়ামী লীগকে সন্তুষ্ট করার জন্য কাজ করছে। তারা এদেশে রাজনীতি করার সুযোগ পেয়েছে শহীদ জিয়াউর রহমানের কাছ থেকে। তারা ছিল নিষিদ্ধ দল। শহীদ জিয়া তাদের রাজনীতি করার সুযোগ দিয়েছেন।’

তিনি আরও বলেন. ‘কিন্তু তাদের এমন কোনও মিটিং নাই, এমন কোনও কর্মসূচি নাই যেখানে তারা স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানের তীব্র ভাষায় সমালোচনা করেন নাই। আমরা দেখেছি, প্রতিটি ঘটনায় তারা আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তের সঙ্গে এক হয়ে কাজ করেছেন।’

উদাহরণ তুলে ধরে রিজভী বলেন, ‘১৯৮৬ সালে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে গেছে। মানুষকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এক আর কাজ করেছে আরেক। ঠিক একইভাবে তারাও (জামায়াতে ইসলামী) করেছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগ আন্দোলনের নামে যে জ্বালাও-পোড়াও করেছিল সেখানেও তারা লীগের সঙ্গে একই কাজ করেছে। বিভিন্ন জায়গায় ওই সময়ে তারা হত্যাও করেছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র টিটোকে শিবির গুলি করে হত্যা করেছিল। ১৯৯৫-৯৬ সালে যে আন্দোলন হয়েছিল, এটা তো কারও ভুলে যাওয়ার কথা নয়। ২০০৮ সালের নির্বাচনে ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) যেতে চাননি, তাদেরই নেতারা বাধ্য করেছিল। এখন আবার তারা স্বরুপে বেরিয়ে আওয়ামী লীগের পূনর্বাসন চাচ্ছেন। ভারতের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক চাচ্ছেন।’

তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা বা তার সেই ফ্যাসিবাদের পূনরুত্থান বা পুনর্জাগরণের কোনও সুযোগ বাংলাদেশে নেই।’

বিএনপির এই জ্যৈষ্ঠ নেতা বলেন, ‘এদেশের মানুষ মধ্যপন্থি, এদেশের মানুষ ধর্মভীরু কিন্তু গণতন্ত্র প্রিয়। তারা কথা বলতে চায় নির্ভয়ে, তারা এক-দুই বেলা কম খেলেও তাদের কণ্ঠের আওয়াজ তীব্র করতে চায়। সেদেশের মানুষকে জোর করে ফ্যাসিবাদের নতুন ধারায় কেউ মনে করে যে নিয়ে আসতে চাইবে এটা জনগণ হতে দেবে না।”

‘সাবেক প্রধানমন্ত্রীর টেলিসংলাপ ভয়ংকর’

রিজভী বলেন, ‘গতকাল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যেসব ডকুমেন্ট ও টেলিফোন কথোপকথন উপস্থাপন করা হয়েছে, যে কেউ তা শুনলে শিহরিত হয়ে উঠবেন। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী সরাসরি গুলির জন্য নির্দেশ দিচ্ছেন! আমরা যারা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছি, আন্দোলন করেছি, রাজনীতি করেছি আমরা প্রত্যেকে মৃত্যুর মুখোমুখি ছিলাম। শেখ হাসিনার বর্বরতা আমরা স্বচক্ষে দেখেছি।’

তিনি বলেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রীর টেলিফোন কথোপকথনে যে বিষয়গুলো উপস্থাপন করা হযেছে তাতেই আমাদের মধ্যে উদ্বেগ-শঙ্কা দেখা দিচ্ছে। যদি এই ফ্যাসিবাদী শক্তির আবার পুনরুত্থান ঘটে তাহলে ৫ আগস্টের আন্দোলনকামী মানুষ, গণতন্ত্রকামী মানুষের কী ভয়ংকর পরিণতি ভোগ করতে হবে সেটা চিন্তা করে শরীরের লোম শিউরে ওঠে। হেলিকপ্টার থেকে গুলি করার নির্দেশ দিচ্ছেন, সরকারি ভবনে আগুন জ্বালিয়েছে, মেট্রোরেলের স্টেশনে যে আগুন লাগানো হলো সব শেখ হাসিনার নির্দেশে হয়েছে। সেটা আজ সেই টেলিফোনের কথোপকথনে বেরিয়ে আসছে। অথচ ওই সমস্ত নাশকতার ঘটনায় তখন আন্দোলনকারী মানুষদের ওপরে চাপানো হয়েছে। আমাকে ওই সময়ে মেট্রোরেল স্টেশন পোড়ানোর মামলায় আসামি করা হয়েছিল। নজরুল ইসলাম খানসহ আরও অনেকে গ্রেফতার হয়েছেন। অথচ এখন আমরা প্রমাণ পাচ্ছি এইসব ঘটনার সব নির্দেশনা দিয়েছেন শেখ হাসিনা নিজেই।’

‘কয়েকজন উপদেষ্টা-আমলার কর্মকাণ্ড নিয়ে’ প্রশ্ন তুলে রিজভী বলেন, ‘এই অন্তবর্তীকালীন সরকারের কিছু উপদেষ্টার কর্মকাণ্ডে সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠছে। আজকের গণমাধ্যমে এসেছে, উপদেষ্টা সজীব ভূঁইয়া তার নিজ এলাকায় সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ নিয়েছেন। প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা। এটা এক ধরনের বৈষম্য এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কাজ। তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সুযোগ কাজে লাগিয়ে নিজের এলাকা উন্নয়নের নামে ভবিষ্যতে এমপি হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সাধারণ মানুষ।’

রিজভী বলেন, ‘একজন উপদেষ্টা কিংবা একজন সরকারি উচ্চপর্যায়ের আমলা কি নিজের এলাকায় হাজার হাজার কোটি টাকার সরকারি বরাদ্দ নিয়ে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালাতে পারেন? সারা দেশকে বঞ্চিত রেখে এটি করা সম্পূর্ণরূপে অনৈতিক এবং নীতিবিরোধী। আমরা শুনেছি, কেবিনেট সচিব একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের প্রতি অনুগত। তিনি হয়তো অবসরের পরে নির্বাচনেও অংশ নিতে পারেন। এটি দুঃখজনক এবং সরকারি শৃঙ্খলা ও স্বচ্ছতার পরিপন্থি।’

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন