জাতীয় ডেস্ক :
ফরিদপুরের সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসিকুজ্জামানের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি মামলা হয়েছে। রোববার (২৭ মার্চ) ফরিদপুরের সিনিয়র ম্যাজিস্ট্রেট ৬নং আমলী আদালতে এ মামলাটি দায়ের করেন সালথা উপজেলার গট্টি ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. মুরাদ মোল্লা। মামলাটি আদালত আমলে নিয়ে পিবিআইকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
ইউপি সদস্য মুরাদ মোল্লা জানান, সালথা থানার ওসি মো. আসিকুজ্জামান ও তার অধীনস্থ এসআই হান্নান ২০২১ সালের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনের সময় তার কাছে বিভিন্ন অজুহাতে চাঁদা দাবি করেন। টাকা না দিলে তাকে ইউপি নির্বাচনে অংশ নিতে দেবেন না বলে জানিয়ে দেন এবং ভয়ভীতি দেখান।
পরে বাধ্য হয়ে তিনি ওসির হাতে ৭৫ হাজার টাকা তুলে দেন। টাকা দেওয়ার পরেও তারা আরও ১ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। ওই টাকা না দেওয়ার কারণে অসুস্থ থাকার পরও মুরাদ মোল্লার বিরুদ্ধে ৩টি মামলা দেওয়া হয়। এভাবে বিভিন্ন সময় নানা অজুহাতে তার কাছ থেকে অর্থ দাবি করতে থাকেন ওসি মো. আসিকুজ্জামান।
মামলার অভিযোগে আরও বলা হয়, ইউপি সদস্য মুরাদ মোল্লার ভাই জিহাদকে রাতের আঁধারে ধরে নিয়ে মারপিট করে মিথ্যা মামলায় চালান দেওয়া হয়। এ ঘটনার প্রতিকার চাইলে ওসি ফের বিভিন্ন মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। এসব নিয়ে ওসির বিরুদ্ধে মানববন্ধন করা হলে ক্ষিপ্ত হন ওসি মো. আসিকুজ্জামান।
এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী ইউপি সদস্য মুরাদ মোল্লা বলেন, আমি পঙ্গু মানুষ। আমাকে বিভিন্ন মিথ্যা মামলা দিয়ে ওসি হয়রানি করছে। আমি ওসির বিচারের দাবি জানাই। আমি ওসির এসব অন্যায় কাজের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছি।
এদিকে, সালথা থানার ওসি মো. আসিকুজ্জামান রোববার বিকেলে থানায় সংবাদ সম্মেলন করে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। তিনি বলেন, প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে, ১৩ মার্চ সালথা থানা এলাকার গট্টি ইউনিয়নের বাসুয়ারকান্দী গ্রামে ধলামিয়ার দল ও ইকবাল শেখের দলের মধ্যে মারামারি হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় কয়েকজন আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। সংঘর্ষের পরিস্থিতি শান্ত হলে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে চলে আসে।
এ ঘটনার জেরে গট্টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যে বিরোধ ছড়িয়ে পড়ে। ওই দিন রাত ২টার দিকে পুনরায় খবর আসে বালিয়া বাজার এলাকায় দুইটি দলের লোকজন অস্ত্র নিয়ে সংগঠিত হচ্ছে। এমন খবরে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য রাতেই পুলিশফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দলবদ্ধ লোকজনকে ছত্রভঙ্গ হওয়ার নির্দেশ দেই। উপস্থিত দুই পক্ষের লোকজন পুলিশি নির্দেশ অমান্য করে পুলিশের ওপর বেপরোয়াভাবে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। তাদের আক্রমণে আমিসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হই।
এ সময় ঘটনাস্থল থেকে এতে জড়িত আক্কাছ শেখ, মজনু ফকির, জিহাদ মোল্যা ও সজিব মিয়াকে দেশীয় অস্ত্র ঢাল-কাতরাসহ গ্রেফতার করা হয়। পরে ওই রাতেই মুরাদ মেম্বার ও গট্টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান লাবলু থানায় মুরাদের ভাই জিহাদকে ছাড়াতে আসে। আমি তাকে ছাড়তে নারাজ হই। এতেই মুরাদ মেম্বার আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়। জিহাদকে গ্রেফতার করে থানা গারদে রাখা হয়। তাকে কোনো মারধর করা হয়নি। পরদিন তার বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে আদালতে পাঠানো হয়।
এ বিষয়ে পুলিশ সুপার আলিমুজ্জামান বলেন, এ ঘটনার বিষয়ে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে তদন্ত শুরু হয়েছে। দোষী প্রমাণিত হলে দুই পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।