জাতীয় ডেস্ক:
পদ্মা সেতুতে রেল চলাচল উদ্বোধনের পর প্রথম যাত্রী হিসেবে বিশেষ ট্রেনে করে পদ্মা পাড়ি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) দুপুরে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া থেকে ট্রেনে করে পদ্মা রেল সেতু দিয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় যান তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আছেন তার ছোট বোন শেখ রেহানা, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগের নেতাসহ সরকারের পদস্থ কর্মকর্তারা।
উদ্বোধনের পর ট্রেনে ওঠার আগে নিজ হাতে টিকিট কাটেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর বাঁশি বাজিয়ে ও সবুজ পতাকা নাড়িয়ে রেল চলাচলের সংকেত দেন তিনি।
দুপুরে ভাঙ্গায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় বক্তব্য দেবেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর বিকেলে সড়কপথে গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়া যাবেন তিনি।
এর আগে ২০২২ সালের ২৫ জুন পদ্মা সেতু চালু করা হয়। দ্বিতল এই সেতুর ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। সেতুর ভেতরে রয়েছে ট্রেন চলাচলের পথ। পদ্মার দুই পাড়ে যোগাযোগ স্থাপন করতে নেয়া হয় আলাদা প্রকল্প, যা পদ্মা সেতু রেল লিংক প্রকল্প নামে পরিচিত।
বর্ণিল ইতিহাস
২০২২ সালের ২৫ জুন পদ্মা সেতু চালু হয়। দ্বিতল এ সেতুর ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। সেতুর ভেতরে রয়েছে ট্রেন চলাচলের পথ। পদ্মার দুই পাড়ে যোগাযোগ স্থাপন করতে নেয়া হয় আলাদা প্রকল্প, যা পদ্মা সেতু রেল লিংক প্রকল্প নামে পরিচিত।
প্রকল্প পরিচালক আফজাল হোসেন বলেন, উদ্বোধনের পর শিগগিরই এই পথে যাত্রী নিয়ে ট্রেন চলাচল করবে। তবে এখনও দিনক্ষণ ঠিক হয়নি। শুধু আধুনিকই নয়, দৃষ্টিনন্দন এ রেল সংযোগ প্রকল্পটির মাধ্যমে আরও একধাপ এগিয়ে গেছে দেশের রেলখাত।
বর্তমানে দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ৪৩ জেলায় রেলপথ রয়েছে। ঢাকা-ভাঙ্গা রেলপথের মাধ্যমে মুন্সিগঞ্জ ও মাদারীপুর রেলপথের সঙ্গে যুক্ত হবে। ঢাকার দক্ষিণের উপজেলা কেরানীগঞ্জে এতদিন রেল যোগাযোগ ছিল না। যশোর পর্যন্ত রেলপথ চালু হলে নড়াইল নতুন করে যুক্ত হবে। ভবিষ্যতে ভাঙ্গা থেকে বরিশাল হয়ে পটুয়াখালী পর্যন্ত রেলপথ সম্প্রসারণের পরিকল্পনা আছে রেলওয়ের। বর্তমানে বরিশাল বিভাগে কোনো রেলপথ নেই।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ থেকে জানা গেছে, ঢাকা-খুলনা পথের সুন্দরবন ও চিত্রা এক্সপ্রেস এবং ঢাকা-যশোর পথের বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেন ৩টি পদ্মা সেতু হয়ে চালানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। ট্রেনগুলো বর্তমানে ঢাকা থেকে টঙ্গী-জয়দেবপুর-বঙ্গবন্ধু সেতু-ঈশ্বরদী, হার্ডিঞ্জ ব্রিজ হয়ে চলাচল করছে। একইভাবে রাজশাহী থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত চলাচল করা মধুমতি এক্সপ্রেস ট্রেনটি পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা পর্যন্ত চালানোরও পরিকল্পনা আছে। এর বাইরে কমিউটার ট্রেন চালুর বিষয়টিও বিবেচনায় আছে।
তিন অংশে ভাগ করে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। প্রথম অংশ ঢাকা-মাওয়ার দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৮ কিলোমিটার। এই অংশে কেরানীগঞ্জে একটি নতুন স্টেশন তৈরি হচ্ছে। মাওয়া-ভাঙ্গা অংশের দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৩ কিলোমিটার। এ অংশে নতুন স্টেশন ভবন রয়েছে পাঁচটি। এ দুই অংশ আজ উদ্বোধন হলো।
প্রকল্পের শেষ অংশ ভাঙ্গা থেকে যশোর। এ অংশের দৈর্ঘ্য প্রায় ৮৩ কিলোমিটার। স্টেশনের সংখ্যা ১৪। প্রকল্পের মেয়াদ অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত পুরো রেলপথটি চালুর লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। মাঠপর্যায়ে প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালে।
রেলওয়ে সূত্রে আরও জানা গেছে, ২০১৬ সালের ৩ মে একনেকে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়। অনুমোদনের সময় প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ৩৪ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকা। বর্তমানে এই প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। প্রকল্পটি সরকারের অগ্রাধিকার তালিকাভুক্ত (ফাস্ট ট্র্যাক)। চীনের অর্থায়নে ওই দেশেরই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রেলপথ নির্মাণের কাজটি করছে।
নির্মাণাধীন পদ্মা সেতুর সংযোগ রেলপথে কী পরিমাণ যাত্রী ও মালামাল পরিবহন হতে পারে, তার একটি বিশ্লেষণ এরই মধ্যে তৈরি করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে গ্রুপ (সিআরইসি)। স্বল্পমেয়াদি বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ২০৩০ সাল নাগাদ রেলপথটির ঢাকা-ভাঙ্গা অংশে প্রতিদিন ১৩ জোড়া ট্রেন চলবে। একইভাবে ভাঙ্গা-কাশিয়ানী অংশে প্রতিদিন সাত জোড়া ও কাশিয়ানী-যশোর অংশে প্রতিদিন চলবে পাঁচ জোড়া ট্রেন। এই সময়ের মধ্যে ঢাকা-ভাঙ্গা অংশে বছরে ৪০ লাখ, ভাঙ্গা-কাশিয়ানী অংশে বছরে ১৭ লাখ ও কাশিয়ানী-যশোর অংশে বছরে সাড়ে ১৩ লাখ যাত্রী পরিবহন করা হবে। ‘ওয়ান-ডিরেকশন’ বা একমুখী চলাচলের ওপর ভিত্তি করে এই প্রাক্কলন তৈরি করেছে সিআরইসি। আর কাজ তদারকি করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।