হোম জাতীয় পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় নারী কর্মকর্তার অভিযোগ

জাতীয় ডেস্ক :

বরিশালে প্রতারণার মাধ্যমে বিয়ে ও শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের অভিযোগে ১০ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের (এএসপি) বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ দিয়েছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা দফতরের এক নারী কর্মকর্তা।

সোমবার (২ জানুয়ারি) বরিশাল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে নালিশী অভিযোগ দেন তিনি।

পরে বিচারক মো. ইয়ারব হোসেন অভিযোগটির বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন বলে জানিয়েছেন ট্রাইব্যুনালের বেঞ্চ সহকারী হুমায়ন কবির। তিনি জানান, আগামী সাত দিনের মধ্যে অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর মামলা গ্রহণ বিষয়ে শুনানি হবে।

নালিশী অভিযোগের বিবাদী মাহমুদুল হাসান ফেরদৌস ব্রাক্ষণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার বোরানাল গ্রামের মো. আব্দুল আউয়াল খন্দকারের ছেলে।

নালিশি অভিযোগ জমা দেয়া আইনজীবী বিপ্লব কুমার রায় জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুবাদে বাদী নারী ও বিবাদী পুলিশ কর্মকর্তার পূর্বপরিচয় ছিল। কর্মজীবনে বরিশাল অফিসার্স ক্লাবে তাদের দেখা হয়। পূর্বপরিচয়ের সুবাদে তারা প্রায়ই ক্লাবে ব্যাডমিন্টন খেলতেন। একপর্যায়ে দুজনের মধ্যে সুসম্পর্ক তৈরি হলে দুজনই বিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও বাদীকে বিয়ের প্রস্তাব দেন বিবাদী। এ ঘটনার জের ধরে কিছুদিন পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ রাখেন ওই নারী কর্মকর্তা। কিছুদিন পর বরিশাল নগরীর ত্রিশ গোডাউন এলাকায় দুজনের আবার দেখা হলে অনুনয়-বিনয় করে আবারও সুসম্পর্ক স্থাপন করেন মাহমুদুল হাসান। এ সম্পর্কের জের ধরে বাদীকে ডিভোর্স দেন তার স্বামী।

পরবর্তীতে ২০২২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ১০ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের বাংলোতে ইসলামী শরীয়া অনুযায়ী বাদীর সঙ্গে বিবাদীর বিয়ে হয়। তবে কোনো কাবিন করেননি মাহমুদুল হাসান। এভাবে বিয়ের পর বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি অনুষ্ঠানে উভয়ে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে অংশ নেয়।

গত বছরের মার্চে পুলিশ কর্মকর্তার প্রথম স্ত্রী সন্তানসহ দশম আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের বাংলোতে আসে। তখন বিয়ের কাবিন করার জন্য ওই নারী চাপ দিলে বাংলোতে তাকে বেধড়কভাবে পেটানো হয়। সুস্থ হয়ে বিষয়টি দশম আর্মড ব্যাটালিয়ন পুলিশের অধিনায়কের কাছে অভিযোগ দিতে গেলে কাবিন করতে রাজি হয়। তবে ৩ থেকে ৪টি বিভাগীয় মামলা থাকার কথা জানিয়ে বাদীকে মামলাগুলোর ঝামেলা গেলেই কাবিন করা হবে বলে জানায়।

এরপর গত ২২ জুলাই নারীকে ঢাকা নিয়ে রাজধানীর ইস্কাটনে পুলিশ অফিসার্স মেসে নেয়। গত ২৫ জুলাই গুলশানের এক বন্ধুর বাসায় কাবিনসহ বিয়ে হয়। তবে বাদী কাবিননামা চাইলে নানানভাবে ঘোরাতে থাকে বিবাদী। ১৮ জুলাই বাদীকে পুলিশ অফিসার্স মেসে রেখে বিবাদী জরুরী কাজে কিশোরগঞ্জ চলে যায় এবং বাদী ২৯ জুলাই পুলিশ অফিসার্স মেস থেকে বরিশালের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন।

বিবাদীর সঙ্গে বাদীর সর্বশেষ কথা হয় ১১ অক্টোবর। এরপর থেকে বিবাদী ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ম্যাসেঞ্জার, মোবাইল নাম্বার বন্ধ করে দেয়।

এর ম‌ধ্যে কিছুদিন আগে ফোনে কথা হলে পুলিশ কর্মকর্তা বাদীকে বিয়ের কথা স্বপ্ন মনে করে ভুলে যেতে বলেন এবং বিয়ের বিষয়টিকে অস্বীকার করেন। এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে গুলি ক‌রে হত্যাসহ সহকর্মীদের মাধ্যমে মামলা দিয়ে হয়রানি করারও হুমকি দেন তিনি।

এরপর থেকে যোগাযোগ বন্ধ করে দিলে ২০ নভেম্বর স্ত্রীর মর্যাদা চেয়ে পুলিশ কর্মকর্তার কাছে আইনি নোটিশ পাঠান বাদী। কিন্তু জবাব না পেয়ে ২৭ নভেম্বর কোতোয়ালি মডেল থানায় তিনি অভিযোগ দেন।

সেই পরামর্শ অনুযায়ী বাদী আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন বলে জানিয়েছেন আইনজীবী বিপ্লব কুমার রায়।

মামলার বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহমুদুল হাসান ফেরদৌসের মোবাইল ফোন নম্বরে যোগাযোগ করলেও তিনি রিসিভ করেননি।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন