জাতীয় ডেস্ক :
রাজধানীর জুরাইনে ট্রাফিক সার্জেন্টসহ তিন পুলিশ সদস্যকে মারধরের ঘটনায় করা মামলায় ২৪ ঘণ্টায় ১৭ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা পুলিশের ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার আশরাফ হোসেন এ তথ্য জানান।
গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, পুলিশের ওপর মারধরের মামলায় সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত ২৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার (৯ জুন) গ্রেফতার দুই আইনজীবীকে রিমান্ডে নেয়ার ঘটনায় মামলার নথি তলব করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে রিমান্ড কেন বাতিল করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।
রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। রোববারের মধ্যে নথি আদালতে নিয়ে আসতে বলা হয়েছে। ওইদিন পরবর্তী শুনানি হবে।
রাজধানীর জুরাইনে ঘটনায় দুই আইনজীবীকে রিমান্ডে নেয়ায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে রিট করেন অ্যাডভোকেট সৈয়দ ফজলে ইলাহী।
এর আগে বুধবার (৮ জুন) ঢাকার অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেনের আদালত শুনানি শেষে পাঁচজনকে তিন দিনের রিমান্ড দেন। এ ছাড়া ইয়াসিন জাহান নিশান নামে এক অন্তঃসত্ত্বা আইনজীবীকে জামিন দেয়া হয়েছে।
রিমান্ড পাওয়া আসামিরা হলেন শিক্ষানবিশ আইনজীবী সোহাকুল ইসলাম রনি ও তার শ্যালক আইনজীবী ইয়াসিন আরাফাত ভুইয়া, স্থানীয় বাসিন্দা মো. শরিফ, মো. নাহিদ ও মো. রাসেল।
এদিন গ্রেফতার ছয় আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর এ মামলার আসামি আইনজীবী ইয়াসিন জাহান নিশান ভূঁইয়াকেও কারাগারে আটক রাখার আবেদন করা হয়।
অন্য পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শ্যামপুর থানার পরিদর্শক খন্দকার জালাল উদ্দিন মাহমুদ। অপরদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী জামিন চেয়ে আবেদন করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন আসামি নিশানের জামিন মঞ্জুর করেন। অপরদিকে পাঁচ আসামির জামিন নামঞ্জুর করে তাদের তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে মঙ্গলবার (৭ জুন) রাতে শ্যামপুর থানায় আহত ট্রাফিক সার্জেন্ট মো. আলী হোসেন বাদী হয়ে তিনজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৪৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে রাজধানীর জুরাইন রেলগেট এলাকায় উল্টোপথে আসছিল একটি মোটরসাইকেল। তাতে এক নারীসহ দুজন আরোহী ছিলেন। দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্ট আলী হোসেন কাগজপত্র দেখতে চাইলে মোটরসাইকেল চালক অত্যন্ত দুর্ব্যবহার শুরু করেন এবং পোশাক পরা অবস্থায় অন ডিউটিতে থাকা ট্রাফিক সার্জেন্টের পরিচয়পত্র দেখতে চার্জ করেন। পরে দুজনকে পুলিশ বক্সে নেয়া হলে সঙ্গে থাকা নারী উত্তেজিত হয়ে চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করেন।
তখন আশপাশে থাকা সুযোগসন্ধানী লোকজন নারী লাঞ্ছনার অভিযোগ তুলে সার্জেন্টকে মারধর করে ও পুলিশ বক্স গুঁড়িয়ে দেয়। অভিযুক্ত মোটরসাইকেল চালক সার্জেন্টের বুকের ওপর পা তুলে চেপে বসেন। এ সময় ঘটনাস্থলে উৎসুক জনতার মধ্য থেকে একজন সার্জেন্টের হাতে ছুরিকাঘাত করে।
সার্জেন্টকে উদ্ধারে আসা পুলিশ সদস্যদের মারধর ও ধাওয়া করা হয়। পরে শ্যামপুর থানা পুলিশ খবর পেয়ে অতিরিক্ত ফোর্স পাঠিয়ে আহত তিন পুলিশ সদস্যকে উদ্ধার করে। আহত তিন পুলিশ সদস্যের মধ্যে সার্জেন্ট আলী হোসেনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তার হাতে ২১টি সেলাই দিতে হয়েছে।