আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
এখন থেকে অভ্যন্তরীণ বা আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে আফগান নারীরা পুরুষ অভিভাবক ছাড়া উঠতে পারবেন না। আফগানিস্তানের সব এয়ারলাইনসকে তালেবানের পক্ষ থেকে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের বরাতে এ তথ্য জানা গেছে।
তালেবান ক্ষমতা দখলের পর বিভিন্ন আইন জারি করে আফগানিস্তানে। প্রথম থেকেই শরীয়াহ আইন জারির চেষ্টা করে তালেবানরা। গেল বুধবার তালেবান মেয়েদের উচ্চমাধ্যমিক স্কুল বন্ধ করে দেয়। অথচ তারা ক্ষমতা দখলের পর মেয়েদের স্কুলে যেতে দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু তালেবান সরকার সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করায় হতাশ হয়েছেন আফগানরা। বিভিন্ন দেশ ও মানবাধিকার সংগঠন এজন্য তালেবানের নিন্দা জানিয়েছে। মেয়েদের স্কুল বন্ধ করে দেওয়ার জেরে যুক্তরাষ্ট্র গত শুক্রবার অর্থনৈতিক নানা বিষয় নিয়ে তালেবান কর্মকর্তাদের সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত বৈঠক বাতিল করে। মেয়েদের স্কুল বন্ধ করে দেওয়ার জেরে যুক্তরাষ্ট্র গত শুক্রবার অর্থনৈতিক নানা বিষয় নিয়ে তালেবান কর্মকর্তাদের সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত বৈঠক বাতিল করে।
সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানায়, তারা একটি সূত্র থেকে নারীদের উড়োজাহাজে ভ্রমণের বিষয়ে তথ্য পেয়েছেন। কিন্তু নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে নিজেদের নাম প্রকাশ করেনি কর্মকর্তারা। কিন্তু তারা জানান, তালেবানের পুণ্যের প্রচার এবং পাপের প্রতিরোধ মন্ত্রণালয় থেকে শনিবার দেশটির সব এয়ার লাইনসকে চিঠি দিয়ে নতুন নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে অবহিত করে।
তবে যেসব নারী ইতোমধ্যে পুরুষ সঙ্গী ছাড়া বিমানের টিকিট বুক করে ফেলেছেন, তারা কেবল আগামী রোববার ও সোমবার ভ্রমণ করার অনুমতি পাবেন। শনিবার কাবুল বিমানবন্দর থেকে টিকিট কাটা আছে এমন কয়েকজন নারীকে উড়োজাহাজে উঠতে দেওয়া হয়নি বলেও জানান তারা।
এ বিষয়ে জানতে রয়টার্স থেকে পুণ্যের প্রচার এবং পাপের প্রতিরোধ মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতি এবং তথ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হতে হয়েছে। এর আগে তালেবান প্রশাসনের একজন মুখপাত্র বলেছিলেন, বিদেশে পড়তে যাওয়া নারীদের উচিত একজন পুরুষ স্বজনকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়া।
১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তান শাসন করে তালেবান। তারপর সেনা অভিযান চালিয়ে যুক্তরাষ্ট্র তাদের ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে। গত বছর পুনরায় আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করে তালেবান। নতুন করে ক্ষমতা দখলের পর তারা বলেছিল, যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে আগের বারের তুলনায় তারা তাদের শাসন ব্যবস্থায় এবার কিছু পরিবর্তন আনবে। বলেছিল, ইসলামি আইন এবং আফগান সংস্কৃতি অনুযায়ী তারা এবার নারীদের বেশ কিছু অধিকার দেবে।
কিন্তু ওই প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন করে নি তালেবান সরকার। বরং নানা রকম নিয়ম চালু করে গোটা দেশজুড়ে। মেয়েদের উচ্চমাধ্যমিক স্কুল বন্ধ করে দেওয়া, কাজের ক্ষেত্রে অসংখ্য বিধিনিষেধ এবং এবার পুরুষ স্বজন ছাড়া দীর্ঘ পথ ভ্রমণের অনুমতি না দেওয়া সেই পুরান তালেবানকে মনে করিয়ে দিচ্ছে। যার কঠোর সমালোচনা করছেন আফগান নারী এবং বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখনও তালেবান প্রশাসনকে স্বীকৃতি দেয়নি, বরং দেশটির ওপর নতুন করে নানা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। যার ফলে দেশটি সাধারণ জনগণ আবারও চরম মানবিক সংকটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।