আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে কথা বলেছেন। এ সময় ইউক্রেনে যুদ্ধ সম্প্রসারণ না করতে পুতিনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ট্রাম্প।
রোববার (১০ নভেম্বর) মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী কমলা হ্যারিসের বিরুদ্ধে জয় অর্জনের পর গত বৃহস্পতিবার ট্রাম্প রুশ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন। এ সময় ট্রাম্প ফ্লোরিডায় তার মার–এ–লাগো রিসোর্টে ছিলেন।
এই ফোনকলের বিষয়ে জানতে বার্তা সংস্থা এএফপির পক্ষ থেকে ট্রাম্পের প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। তবে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
যদিও ফোনকলের বিষয়ে জ্ঞাত একাধিক সূত্রের নাম গোপন রেখেই ওয়াশিংটন পোস্ট বলছে, ইউরোপের মাটিতে যুক্তরাষ্ট্রের ‘বিশাল সামরিক উপস্থিতির’ বিষয়টি পুতিনকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন ট্রাম্প।
সূত্র জানিয়েছে, ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধের সমাধানের লক্ষ্যে শিগগিরই পুতিনের সঙ্গে আবারও কথা বলা আগ্রহের কথাও ট্রাম্পের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
ট্রাম্পের ক্ষমতায় ফেরার মধ্য দিয়ে বছর তিনেক ধরে চলা ইউক্রেন যুদ্ধের রাশ টানার সম্ভাবনা নিয়ে আশাবাদ দেখা দিয়েছে। কেননা, দ্রুত যুদ্ধ বন্ধের পক্ষে ট্রাম্প। এ ছাড়া কিয়েভের জন্য ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে দেওয়া কোটি কোটি ডলারের অর্থনৈতিক ও সামরিক সহায়তা নিয়েও ট্রাম্পের প্রশ্ন রয়েছে।
এর আগে গত বুধবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গেও টেলিফোনে কথা বলেছেন ট্রাম্প। এ সময় তাদের সঙ্গে কথোপকথনে যুক্ত হন রিপাবলিকানদের কড়া সমর্থক ও ধনকুবের ইলন মাস্ক।
ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ট্রাম্প ও পুতিনের মধ্যে ফোনের বিষয়ে তাদের আগাম কিছু জানানো হয়নি।
প্রথম ওয়াশিংটন পোস্টে খবর হওয়া ওই ফোন কলের বিষয়ে প্রশ্নে ট্রাম্পের যোগাযোগ বিষয়ক পরিচালক স্টেভেন চন বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও অন্য বিশ্ব নেতাদের মধ্যে ব্যক্তিগত কলের বিষয়ে আমরা মন্তব্য করি না।’
যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে থাকা রাশিয়ার দূতাবাসও এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য জানানো রয়টার্সের অনুরোধে তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দেয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের ৫ নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে পরাজিত করেছেন ট্রাম্প। আগামী ২০ জানুয়ারি তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন। হোয়াইট হাউজ জানিয়েছে, বাইডেন তার ওভাল দপ্তরে বুধবার আসার জন্য ট্রাম্পকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
রোববার যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান জানিয়েছেন, বাইডেনের প্রধান বার্তা হবে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর নিশ্চিত করার জন্য তার প্রতিশ্রুতি, এর পাশাপাশি ট্রাম্পের সঙ্গে তিনি ইউরোপ, এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে কী হচ্ছে তা নিয়ে আলাপ করবেন।
সিবিএন নিউজের ‘ফেইস দ্য নেশন’ অনুষ্ঠানে সুলিভান বলেন, ‘ইউক্রেনকে ছেড়ে আসা যুক্তরাষ্ট্রের উচিত হবে না, এই বিষয়টি কংগ্রেস ও আগামী প্রশাসনকে বোঝানোর জন্য প্রেসিডেন্ট বাইডেনের হাতে ৭০ দিনের মতো সময় আছে। ইউক্রেনকে পরিত্যাগ করার অর্থ ইউরোপে আরো অস্থিরতা।’
সুলিভান এসব কথা যেদিন বলেছেন সেই রোববার ইউক্রেন ৩৪টি ড্রোন যোগে মস্কোয় হামলা চালিয়েছে। এটি ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে রাশিয়ার রাজধানীতে কিয়েভের চালানো বৃহত্তম ড্রোন হামলা।
ফেব্রুয়ারি, ২০২২ এ রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ শুরু করার পর থেকে ওয়াশিংটন দেশটিকে শত শত কোটি ডলারের সামরিক ও অর্থনৈতিক সহায়তা দিয়েছে। ট্রাম্প বারবার এসব তহবিল দেওয়ার সমালোচনা করেছেন এবং অন্য রিপাবলিকান আইনপ্রণেতাদেরও বিরোধিতা করেছেন।
গত বছর ট্রাম্প দাবি করেছেন, ওই সময় তিনি হোয়াইট হাউজে থাকলে পুতিন কখনোই ইউক্রেনে আক্রমণ চালাতেন না। তিনি রয়টার্সকে বলেন, একটি শান্তি চুক্তিতে পৌঁছতে ইউক্রেনকে কিছু অঞ্চল ছেড়ে দিতে হতে পারে। কিন্তু ইউক্রেনে এ ধরনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে এবং বাইডেন কখনোই এ ধরনের কোনো পরামর্শ দেননি।
যুক্তরাষ্ট্র সরকারের জবাবদিহি দফতরের তথ্য অনুযায়ী, বাইডেনের সময় ইউক্রেনকে ১৭ হাজার ৪০০ কোটি ডলারেরও বেশি সহায়তা দেওয়ার অনুমোদন দিয়েছে মার্কিন কংগ্রেস। সহায়তার এই পরিমাণ ট্রাম্পের আমলে অনেকটা হ্রাস পাবে এটা মোটামুটি নিশ্চিত।