বাণিজ্য ডেস্ক:
তিন বছর ধরে কোনো কার্যক্রম না থাকার পরও বেতন দিতে হয় পাবনা সুগার মিলের শ্রমিক-কর্মচারীদের। এতে সরকারের গচ্চা গেছে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২০ সালের ডিসেম্বরে শিল্প মন্ত্রণালয় এই মিলটির আখ মাড়াই বন্ধ ঘোষণা করে। তবে বন্ধ হয়নি শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন। প্রতিমাসেই স্থায়ী আর অস্থায়ী কর্মচারী মিলিয়ে ৫৭ জনকে বেতন দিতে হয় ১২ লাখ টাকা।
একদিকে সরকারের টাকা গচ্চা, অন্যদিকে দীর্ঘদিন কার্যক্রম না থাকায় নষ্ট হচ্ছে মিলের কোটি টাকার যন্ত্রাংশ। এছাড়াও আখ চাষের প্রসার হওয়ার পর মিলটি বন্ধ হয়ে যাওয়াতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন চাষীরা। এমন অবস্থায় দ্রুত মিলটি চালুর দাবি সংশ্লিষ্টদের।
আখচাষি মকবুল বলেন, আখ চাষে প্রচুর পরিমাণে লাভ হতো এবং একসাথে অনেক টাকা পাওয়া যেত। সেই টাকা একসাথে পেয়ে কোনো না কোনো কাজে লাগাতে পারতাম। তবে সুগার মিলটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর এখন অন্য সবজি চাষ করতে হচ্ছে। এতে তেমন লাভ হচ্ছে না।
চাষি রুবেল হোসেন বলেন, মিলটি বন্ধ হওয়ার পর আমরা সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। আখ চাষ যখন লাভজনক হয়ে উঠছিলো তখনই তা বন্ধ করে দেয়া হয়। দিনশেষে আমরা কিছুই পেলাম না। মিলটি চালু হলে আবার সুদিন ফিরে আসত।
একই কথা বলছেন শফি মন্ডল, শাহীন মোল্লাসহ অনেক চাষি।
পাবনা সুগার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, চিনির সঙ্গে অন্যান্য পণ্য উৎপাদন করার সিদ্ধান্ত নিলে মিল চালু সম্ভব হবে। কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিলে মিলটি আবার চালু করা যায়।
জানা যায়, ১৯৯২ সালে ৭৯ কোটি টাকা ব্যায়ে পাবনার দাশুড়িয়ায় ১৮০ বিঘা জমির ওপর দৈনিক চল্লিশ হাজার একশ আটাশি মণ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন মিলটির কাজ শুরু হয়। পরে ১৯৯৬-৯৭ মাড়াই মৌসুমে উৎপাদন শুরু হলেও, ১৯৯৭-৯৮ মৌসুমে বাণিজ্যিকভাবে কার্যক্রম শুরু করে মিলটি। পাবনা সুগার মিলটি দেশের অন্যতম একটি সুগার মিল হিসেবে পরিচিত ছিলো। ধারণ ক্ষমতা থেকে শুরু করে সব যন্ত্রাংশ ছিলো উন্নত মানের এবং আধুনিক। যে কারণে অন্যান্য সুগার মিলের তুলনায় পাবনা সুগার মিলটিতে উৎপাদিত চিনি ছিলো গুণগত মানসম্পন্ন।
সুগার মিলগুলোতে লোকসান হওয়ার কারণে লোকশান কমাতে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ১৫টি সুগার মিলের মধ্যে ৬ টি সুগার মিল বন্ধ ঘোষণা করে শিল্প মন্ত্রণালয় ৷ এরমধ্যে রয়েছে পাবনা সুগার মিলটিও। দেশের অন্যতম এই মিলটি বন্ধ ঘোষণা করার পর আন্দোলনে নামেন শ্রমিক-কর্মচারীরা। তবে সফল হয়নি সে আন্দোলন।