হোম ফিচার পরিবার থেকে বিয়ে মেনে না নেওয়ার কারনে প্রীতি রানী কুন্ডুকে অকালেই চলে যেতে হলো

মণিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি :

ঋষির ছেলেকে ভালবেসে বিয়ে করায় পরিবার মেনে না নেয়ায় প্রীতি রানী কুন্ডুকে অকালেই চলে যেতে হলো। প্রায় ৪ মাস সংসার করার পর বাবার করা মামলায় আদালতের মাধ্যমে প্রীতি রানী কুন্ডুর অমতে জোর করে বাড়িতে (বাবা) আনা হয়। স্বামী বাড়িতে চলে যেতে চাওয়ায় প্রীতি রানীর উপর শারীকি, মানসিক নির্যাতন চলতো বলে অভিযোগ রয়েছে। গত শুক্রবার রাত ৯ টার দিকে শোবার ঘর থেকে প্রীতির মরদেহ উদ্ধার হয়।

প্রীতি রানী কুন্ডু যশোরের মণিরামপুর উপজেলার চিনাটোলা গ্রামের বলাই কুন্ডুর মেয়ে। বড় দিদির শ্বশুর বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে পরিচয় সূত্রে ঋষির ছেলে দেবাশীষ দাশের সাথে প্রেমজ সম্পর্ক গড়ে উঠে। পরে দুইজন হিন্দু ধর্মমতে বিয়ে করেন। দেবাশীষ দাশ বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট উপজেলার লখপুর গ্রামের হরেনা দাশের ছেলে।

জানাযায়, প্রীতি রানী কুন্ডুর বড় দিদির শ্বশুর বাড়ি বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট উপজেলার লখপুর গ্রামে। বড় দিদিস্মৃতি রানী কুন্ডুর স্বামী আশীষ কুন্ডুর বন্ধু দেবাশীষ দাশ। গত বছরের ডিসেম্বরে দিদির শ্বশুর বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে দেবাশীষ দাশের সাথে প্রীতির পরিচয় থেকে প্রেম সম্পর্ক হয়। বিষয়টি টের পেলে বিয়ের তোড়জোড় শুরম্ন করলে প্রীতি দেবাশীষ দাশের কাছে চলে যায়। চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি দুইজনে স্থানীয় কাটাখালি মন্দিরে হিন্দু ধর্মমতে বিয়ে করেন। পরে ২০ জানুয়ারি খুলনা নোটারি পাবলিক কার্যালয়ে এ্যাফিডেভিট করে হিন্দু ধর্মীয়মতে বিয়ে করেন।

এদিকে প্রীতিকে উদ্ধারের জন্য প্রীতির বাবা বলাই কুন্ডু মেয়ে অপ্রাপ্ত বয়স্ক উলেস্নখসহ নানা অভিযোগ এনে ২০২২ সালের ৩ এপ্রিল যশোর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল-২’এ দেবাশীষ দাশ ও তার ভাই উত্তম দাশের বিরম্নদ্ধে মামলা দায়ের করেন। যার তদন্তভার পড়ে সিআইডি (অপরাধ তদন্ত বিভাগ)-এর উপর। তদন্তকারি কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর সিরাজুল ইসলাম তদন্ত করেন।

সমন জারি হলে গত ২৫ এপ্রিল স্ত্রী প্রীতি রানীকে নিয়ে যশোর আদালতে হাজির হন দেবাশীষ দাশ। এরপর প্রীতি যেতে না চাইলেও দেবাশীষকে হাতকড়া পরিয়ে আটকিয়ে রেখে জোর করে বাবার সাথে পাঠিয়ে দেয়া হয়। বাবার বাড়িতে যাওয়ার পর ৬দিন পর প্রীতি একাই রাতে বাড়ি থেকে বের হয়ে স্বামী দেবাশীষ দাশের কাছে যাবার জন্য রাস্ত্মায় চলে আসে। টের পেয়ে ফের প্রীতিকে বাড়িতে নেয়া হয়।

এরমধ্যে মা প্রভাতী রানী কুন্ডুর ফোন থেকে মেসেঞ্জারে গোপনে স্বামী দেবাশীষ দাশের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে। প্রীতি বিভিন্ন সময় স্বামীকে জানাই তার উপর অত্যাচার করা হচ্ছে, সে (স্বামী দোবাশীষ) যেন তাকে নিয়ে যায়। এরমধ্যে বয়স প্রমানে প্রীতির মেডিকেল এবং ২২ ধারায় জবানবন্দী নেওয়া হয়। কেউ অপরহরণ করেনি মর্মে ২২’ ধারায় প্রীতি স্বেচ্ছায় বিয়ে করেছেন বলে জবানবন্দী দেয়। কিন্তু মেডিকেল রিপোর্টে প্রাপ্ত বয়স্ক উল্লেখ করে রিপোর্ট প্রদান করেন যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ডাঃ আব্দুস সামাদ। মেডিকেল রিপোর্ট পেয়ে গত ৯ জুন স্ত্রী প্রীতিকে ফিরে পেতে বাগেরহাট নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালত প্রীতি রানীকে আদালতে হাজির করতে গত ২৩ জুন ওসি মনিরামপুর থানাকে নির্দেশ প্রদান করেন। কিন্তু পরদিন ২৪ জুন বাবার বাড়ির একটি ঘর থেকে প্রীতি রানীর মরদেহ উদ্ধার হয়।

দেবাশীষ দাশ কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, শুধু জাতের বিচার করে আমার স্ত্রীকে মেরে ফেলা হয়েছে। তার স্ত্রী প্রীতি তাকে শেষ কথা বলেছিল’ আমাকে নিয়ে যাও, আমি এখানে থাকলে বাচবো না। এমনকি তার স্ত্রীর গর্ভের সন্ত্মানও পরিকল্পিতভাকে নষ্ট করা হয়েছে। তার স্ত্রীকে ঘরে আটকে রেখে মারপিট করা হতো বলে তার অভিযোগ।

এ ব্যাপারে প্রীতির বাবা বলাই কুন্ডু বলেন, বহু বিবাহের হোতা, জেল খাটা আসামীর হাতে কোন বাবা মেয়েকে তুলে দিতে চাইবে?-এমন প্রশ্ন ছুড়ে বলেন, পারিবারিক কারনে তার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। তাছাড়া তার মেয়ে দেবাশীষকে ডিভোর্স দিয়েছিল।

জেল ফেরত বিষয় জানতে চাইলে দেবাশীষ দাশ ডিভোর্স পোপার পাননি জানিয়ে বলেন, বিডিআর বিদ্রোহের সময় তিনি চাকরীতে ছিলেন। পরে তার ৬ বছরের জেল হয়। তার প্রথম স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে যায়। এরপর প্রীতির সাথে বিয়ে হয়।

মনিরামপুর থানার ওসি (তদন্ত) গাজী মাহবুবুর রহমান বলেন, সার্স ওয়ারেন্টের ব্যাপারে বাগেহাটের এক ছেলে তাকে ফোন করেছিল কিন্তু পরে আর যোগাযোগ করেনি।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন