জাতীয় ডেস্ক:
গত এক বছরে পদ্মা সেতু পাল্টে দিয়েছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার কোটি কোটি মানুষের অর্থনীতির ভাগ্যের চাকা। বরিশাল অঞ্চলে যাত্রীর চাপ সামলাতে নামানো হয়েছে পাঁচ শতাধিক বিলাসবহুল নতুন বাস। পরিস্থিতি বিবেচনায় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক চার লেন করারও উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
তবে সড়কের যান চলাচলের ঢল নামলেও নৌ ও আকাশ পথ চরম সংকটে রয়েছে বলে জানান বিশ্লেষকরা।
পদ্মা সেতুতে বদলে যায় দৃশ্যপট
বছরখানেক আগে ঢাকা থেকে বরিশাল রুটে যাত্রী পরিবহনে বাস চলতো সবমিলিয়ে ১৫০টির মতো। পদ্মাসেতু উদ্বোধনের পরই, বদলে যায় দৃশ্যপট। বছর ব্যবধানে এর সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৬০০। এর মধ্যে প্রায় ৫০০ বিলাসবহুল বাস চলছে ২০ থেকে ২৫টি কোম্পানির। বরিশাল থেকে ঢাকায় পৌঁছাতে আগে সময় লাগতো ১৪ ঘণ্টা। আর এখন মাত্র তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টা সময় লাগে। অল্প সময় গন্তব্যে পৌঁছাতে পারায় খুশির শেষ নেই যাত্রীদের।
দক্ষিণাঞ্চলের কৃষিপণ্য রাজধানীতে সরবরাহ এবং উত্তরাঞ্চলের সবজি বরিশালের বাজারে পৌঁছাতে সময় অনেকটা কমে আসায় দারুণ খুশি পরিবহন সংশ্লিষ্টরাও।
ফোর লেনে গাড়ির চাপ আরও বাড়বে
বরিশাল জেলা বাস মালিক গ্রুপের সভাপতি আফতাব হোসেন বলেন, দিন দিন ঢাকা বরিশাল রুটে বিলাসবহুল বাসের সংখ্যা বাড়ছে। মহাসড়ক ফোর লেন হলে গাড়ি আরও বাড়বে বলে জানান ওই বাস মালিক নেতা। এছাড়া বাসের সংখ্যার মতো বেড়েছে পণ্যবোঝাই ট্রাক চলাচলও।
উল্টোরথে নৌ-পথ
সড়কে যখন যাত্রীচাপ তখন ভিন্ন রূপ নৌ-পথে। যাত্রী সংকটে বন্ধ হয়ে গেছে লঞ্চের ডে-সার্ভিস। কেবিন পেতে যুদ্ধ করতে হয় না যাত্রীদের। টিকিট বিক্রি করাই এখন চ্যালেঞ্জ লঞ্চগুলোর বলে জানান লঞ্চ মালিক সমিতির সহ সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু।
পদ্মার ঢেউ লেগেছে আকাশ পথেও
নৌপথের সঙ্গে সঙ্গে পদ্মার ঢেউ লেগেছে আকাশেও। পদ্মাসেতু চালু হওয়ায় মহাসড়কে তিনগুণ যাত্রীচাপ বাড়লেও, যাত্রী সংকটের কথা জানিয়ে গত এক বছরে বেশ কয়েকটি যাত্রীবাহী বিমান গুটিয়ে নেয়া হয়েছে।
যাত্রী সংকটে নভোএয়ার বিমান সার্ভিস বন্ধ হয়ে গেছে। বাংলাদেশ বিমান সপ্তাহে প্রতিদিনের বদলে তিনদিন চলছে। যাত্রী ধরতে দেয়া হচ্ছে নানা অফার।
বরিশাল ইউএস বাংলার স্টেশন ম্যানেজার সৈয়দ মোস্তাইন হোসেন বলেন, আগের চেয়ে যাত্রী অনেক কমে গেছে পদ্মা সেতুর প্রভাবে। বিভিন্ন অফারেও সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।
মহাসড়ক প্রশস্তকরণের উদ্যোগ
চাপ সামলাতে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক প্রশস্তকরণের উদ্যোগ নিয়েছে সড়ক বিভাগ। এর অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে মাদারীপুর পর্যন্ত শেষ হয়েছে জমি অধিগ্রহণ।
বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার আমিন উল আহসান বলেন, মাদারীপুর থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত জমি অধিগ্রহণের জন্য সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে। দ্রুত কাজ শুরু হবে ফোর লেনের। তখন আর কোনো ভোগান্তি থাকবে না।
পদ্মা সেতুর নির্মাণ
বাংলাদেশের ইতিহাসে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ ছিল সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং। দুই স্তরবিশিষ্ট ইস্পাত ও কংক্রিটে নির্মিত এই সেতুর ওপরের স্তরে চার লেনের সড়কপথ এবং নিচের স্তরে একটি একক রেলপথ রয়েছে। পদ্মা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা নদীর অববাহিকায় তৈরি সেতুটি ৪১টি স্প্যান নিয়ে গঠিত, প্রতিটি স্প্যান লম্বায় ১৫০ দশমিক ১২ মিটার বা ৪৯২ দশমিক ৫ ফুট এবং চওড়ায় ২২ দশমিক ৫ মিটার বা ৭৪ ফুট। সেতুটির মোট দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার বা ৩ দশমিক ৮২ মাইল। এটি বাংলাদেশের দীর্ঘতম সেতু। ১২০ মিটার বা ৩৯০ ফুট গভীরতার বিশ্বের গভীরতম পাইলের সেতু এটি।