নড়াইল অফিস :
ভূমিদস্যু বর্গাচাষী সেজে এক বিধবা হিন্দু নারীর জমি দখল করে ঘের কাটছেন। এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে নড়াইল সদর উপজেলার বিছালী ইউনিয়নের রুখালি গ্রামে। ক্ষতিগ্রস্থ ওই বিধবা নারী ইউপি চেয়ারম্যানসহ সদর থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন।
লিখিত অভিযোগে জানা গেছে,সদর উপজেলার সিঙ্গাশোলপুর ইউনিয়নের বড়কুলা গ্রামের কাজল বিশ্বাসের বিধবা মেয়ে আদুরী বিশ্বাসের মায়ের (উন্নতি বিশ্বাস) নামে পাশের বিছালী ইউনিয়নের রুখালি মৌজার ৩২৬ দাগে ২৯ শতক জমি আছে। বাড়ি থেকে জমির অবস্থান দূরে হওয়ায় রুখালি গ্রামের শুকুর বিশ্বাসের ছেলে মুজিবর বিশ্বাস ও তার ভাই ইখতিয়ার বিশ্বাস যোগসাজসে বর্গাচাষী সেজে ওই জমি চাষ করে আসছে। জমির প্রকৃত মালিককে নাজানিয়ে বর্তমানে ওই জমিতে ঘের কাটা শুরু করেন। বিষয়টি জানতে পেরে জমিতে গিয়ে প্রতিবাদ করলে তারা ওই নারীকে নানা প্রকার ভয়ভীতি দেখায়। এক পর্যায়ে তাকে হত্যারও হুমকী দেওয়া হয়। শুধু তাই নয়। গ্রামের অনেকের জমি এভাবে জবরদখল করে দুই ভাই খাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
সরেজমিন বিভিন্ন কৃষকসহ সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানাগেছে,শুকুর বিশ্বাসের দুই ছেলে ভূমিদস্যু প্রকৃতির। প্রথমে তারা বর্গাচাষী সেজে জমির মালিকের কাছ থেকে জমি নেয়। জমির মালিককে ২/৩ বছর জমির ফসল ঠিকমত দেবার পর তারা তালবাহানা করতে থাকে। এক পর্যায়ে তারা ওই জমি নিজেদের বলে দাবি করে। এভাবেই চলে আসছে বছরের পর বছর। ভয়ে এলাকার কেউ তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না।
ক্ষতিগ্রস্থদের জানান, রুখালি গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত কালিয়া উপজেলা সহকারি প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আজিজুর রহসান গাজী বলেন, রুখালি মাঠে (বিলে) আমার ১৭ শতক জমি জবর দখল করে খাচ্ছে শুকুর বিশ্বাসের দুইছেলে।
গ্রামের রওশন আলী বিশ্বাস বলেন, আমার ৪৮ শতক জমি, শাহাদাৎ বিশ্বাসের ১৮ শতক জমিও দখল করে খাচ্ছে। এর পেছনের ইন্ধনদাতা হচ্ছে গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য স,ম ফয়সাল। জানাগেছে ফয়সাল নড়াইলের বিখ্যাত জারীবয়াতি মো.কিবরিয়া হোসেনের ছেলে।
আদরী বিশ্বাস বলেন,জমিটুকু আমার মায়ের নামে। বাবা মারা গেলে সংসারে অভাব হয়। মা পরের বাড়ি কাজ করে জমিটুকু কিনিছিলো। শুকুর বিশ্বাসের দুই ছেলে আমার কাছ থেকে জমি বর্গা করার কথা বলে জমি চাষ করা শুরু করে। প্রথম ২/৩ বছর ফসল দেছে। পরে শুনি ওই জমিতে ঘের কাটতিছে। বাধা দিলি তারা কয় জমি আমাগে। শেষে চেয়ারমেনের কাছে লিখিত জানাই। তিনি ফাড়ি পুলিশ নিয়ে ঘের কাটতি বারণ করে।
ইন্ধনদাতার স,ম ফয়সালের কাজে মুঠোফোনে (০১৯১৪৩২১৫৫৭)বিষয়টি জানতে চাইলে তার বিরুদ্ধে আনীত এমন অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন,আমি যতদূর জানি শুকুর বিশ্বাসের ছেলেদের দালিলিক সম্পত্তি। ওই জমি নিয়ে বর্তমানে উচ্চাদালতে মামলা চলছে।
বিছালী ইউপি চেয়ারম্যান মো. হেমায়েত হোসেন বলেন,সিঙ্গাশোলপুর ইউনিয়নের বড়কুলা গ্রামের আদুরী বিশ্বাস নামে এক বিধবা নারীর জমি জবরদখল করে ঘের কাটছে আমার ইউনিয়নের রুখালি গ্রামের মুজিবর বিশ্বাসও তার ভাই ইকতিয়ার বিশ্বাস। গ্রাম আদালতে দায়ের করা এমন অভিযোগ পাবার পর সরেজমিন পরিদর্শন করি। বিষয়টি দেখতে পেয়ে প্রাথমিক পর্যায়ে ঘেরের মাটি ভেঙে দেই। তিনি আরো বলেন,ওই দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে জমি দখলের আরো অভিযোগ গ্রাম আদালতে জমা পড়েছে।
সদর থানারভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো.শওকত কবির বলেন,আদুরি বিশ্বাস এবং তার প্রতিপক্ষের লোকজনের কাছ থেকে দুটি লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি তদন্ত চলছে।