হোম অন্যান্যসারাদেশ নড়াইলে পিআইও অফিসের কোটিপতি কেরানি মনিরুজ্জামান বহাল তবিয়তে

নড়াইলে পিআইও অফিসের কোটিপতি কেরানি মনিরুজ্জামান বহাল তবিয়তে

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 129 ভিউজ

নড়াইল অফিস :

নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা অফিসের অফিস সহকারী মো.মনিরম্নজ্জামান মুকুল সামান্য কেরানি থেকে কোটি টাকার সম্পদের মালিক। নিজে চলাচল করেন ভিআইপি স্টাইলে। মনিরুজ্জামান হঠাৎ করেই এত সম্পদের মালিক হওয়ায় নড়াইল জুড়ে বইছে সমালোচনার ঝড়। ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি এ বিশাল সম্পত্তির মালিক হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

এদিকে,নড়াইল-২ আসনের এমপি মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার ডিও লেটার ১১দিন অতিবাহিত হলেও তার কোন বাস্তবায়ন দেখা যায়নি। অফিসের বস থেকে শুরু করে স্থানীয় প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধিদেরও পাত্তা না দেয়ার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে । অফিস সহকারীর খুঁটির জোর কোথায় এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে নড়াইলের অলিতে-গলিতে। ২৩ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত উক্ত কোটিপতি অফিস সহকারী মনিরুজ্জামানের দ্রুত বদলীসহ অভিযোগের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ জানিয়ে দুর্যোগ ও ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবরে ডিও লেটার প্রদান করেছেন নড়াইল-২ আসনের এমপি মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা।

তিনি মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে অধিদপ্তরে প্রেরিত তদন্তধীন বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগসহ লোহাগড়া উপজেলা পিআইও,ইউএনও এবং উপজেলা চেয়ারম্যানের সুপারিশের কথাও উল্লেখ করেছেন তাঁর ডিও’তে। অপরদিকে, গত ১৬ আগস্ট তার বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জন করায় নড়াইলের জনৈক ব্যবসায়ী মিলন খান দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চেয়ারম্যান বরাবরসহ সরকারী বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন।ওই অভিযোগের কারণে ৬ সেপ্টেম্বর যার তদন্ত প্রতিবেদন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর, মহাখালী ঢাকার উপপরিচালক(প্রশাসন-২) ড.হাবিবউলস্নাহ বাহার জেলা প্রশাসক,নড়াইলকে ২৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ওই দপ্তরে প্রেরণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়। কিন্তু ওই তারিখে তদন্ত প্রতিবেদন প্রেরণ করা হয়নি বলে জানা গেছে।

মিলন খানের লিখিত অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে,উপজেলার লাহুড়িয়া ইউনিয়নের এগারো নলী গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মো.মকসেদ মোল্যার ছেলে মো.মনিরম্নজ্জামান মুকুল পিআইও অফিসের ১৫ হাজার ৯৬০টাকা বেতনের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী। তিনি গত ১০বছরে বরগুনা, মাগুরা, নড়াইল সদর ও লোহাগড়া পিআইও অফিসে চাকুরী করেছেন। বর্তমানে লোহাগড়া পিআইও অফিসে তিনি একাই একশ। কাউকে তোয়াক্কা না করে দুই হাতে অবৈধ পন্থায় কামিয়ে নিচ্ছেন টাকা।

অফিস সহকারীরর দায়িত্বে নিয়োজিত থাকা অবস্থায় অবৈধ লেন-দেনের বিনিময়ে অর্জিত টাকা দিয়ে লোহাগড়া পৌর শহরের মদিনা পাড়ায় ৮ শতক জায়গার ওপর কোটি টাকায় বিলাসবহুল একটি দ্বিতল আলিশান ভবন নির্মাণ করেছেন। এছাড়া মনিরুজ্জামানের গ্রামের বাড়ি এগারো নলীতে আরো একটি দ্বিতল বাড়ি নিমার্ণ করেছেন। পাশাপাশি তার নিজ নামে মাগুরা পৌর শহরের পার নান্দুয়লী গ্রামে ৭ শতক দামি জমি,বরগুনা সদর উপজেলা পরিষদের পাশে এক খন্ড জমি,লাহুড়িয়া মৌজায় ২৪ শতক করে দু’টি জমি, এগারো নলীতে আরো ৩০ শতক জমিসহ বিঘায় বিঘায় সম্পত্তি ক্রয় করেছেন। এ ছাড়া নামে-বেনামে আরও সম্পদ রয়েছে, রয়েছে ব্যাংক ব্যালেন্সও। তার টাকায় দুই সহোদর ব্যবসা করেন বলে জানা গেছে। তিনি অনৈতিকভাবে তার মালিকানাধীন দু’টি বিলাস বহুল বাড়িতে দুটি ৭৫ হাজার টাকা মূল্যের সরকারি স্ট্রিট লাইট ও একটি লক্ষাধিক টাকা মূল্যের এসিডিসি বসিয়েছেন। তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হলেও চলেন রাজার হালে, উঠা-বসা,চলাফেরা হাই-প্রোফাইল লোকদের সঙ্গে। স্থানীয় প্রভাব আর ক্ষমতার অপব্যবহার করে পিআইও অফিস থেকে অন্যের নামের লাইন্সেসে বিভিন্ন সময়ে অনেক কাজ বাগিয়ে নেন। বিভিন্ন সময়ে ঠিকাদারদের সঙ্গে অশোভন আচারণ করে তাদের কাজের থেকে মাসোহারা নেন।

অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, মনিরুজ্জামানের ওই সমস্ত সম্পদের আনুমানিক মূল্য হবে পাঁচ কোটি টাকা। এসকল সম্পত্তি তিনি কিভাবে অর্জন করেছেন তা খতিয়ে দেখার ক্ষেত্রে রহস্যজনক কারণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্র অভিযোগ করেছেন। অপরদিকে ধীরগতিতে তদন্ত্ম কাজ এগুচ্ছে। তার খুঁটির জোরটা বেশ শক্ত বলে বিশ্বস্ত সূত্রের অভিযোগ। অভিযোগ প্রসঙ্গে মনিরম্নজ্জামান মুকুল বলেন,’আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ করে অহেতুক হয়রানি করা হচ্ছে। আমি কখনো কোন দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। তবে আমার নামে বর্তমান বাজার মূল্যের ৫০-৬০লাখ টাকার সম্পদ আছে। যা আমি বর্তমান চাকুরীর আগে ও পরে বৈধভাবে টাকা আয় করে রেখেছি। আমার নামে অভিযোগকৃত কোটি কোটি টাকার সম্পদের কোন অতিত্ব নেই ‘ মনিরম্নজ্জামানের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ তদন্ত সম্পর্কে জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা বলেন,’অভিযোগের তদন্ত অব্যাহত আছে। তদন্ত শেষে যথাযথ কর্তৃপক্ষে অবহিত করা হবে।’ একই প্রসঙ্গে লোহাগড়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) এসএমএ করিমের মতামত জানতে বারবার যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন