মোস্তফা কামাল, নড়াইল :
নড়াইলের পাটের বাম্পার ফলন,পচানো নিয়ে ভাবনা,বৃষ্টির অপেক্ষায় কৃষক। খালে-বিলে বিভিন্ন জলাশয়ে কোথাও জমা পানি নেই। পাট পচানো নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। একমাত্র বৃষ্টিই উপরে ভরসা করছেন তারা। পানির জন্য অনেক স্থানে জমিতে জামাতে নামাজ আদায় করছেন কৃষকরা। জেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে এমন দৃশ্য।
সরেজমিন কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে,পানির অভাবে পাট পচন দিতে না পারায় জমিতেই পাট রোদে পুড়ে শুকিয়ে যাচ্ছে। অনেকে উপায় না পেয়ে অপরিস্কার অল্প পানিতেই পাট পচন দিতে বাধ্য হচ্ছে। ফলে পাটের রং কালো হয়ে যাচ্ছে। এই কালো পাট বাজারে নিয়ে কৃষকরা ভালো দাম পাচ্ছেন না।
জুলাই মাস শেষ আগষ্ট মাস শুরু এথন পর্ষন্ত কোন ভারী বৃষ্টিপাত হয়নি। খাল-বিলেও তেমন পানি নেই। তাই পানির অভাবে কৃষকরা পাট জাগ দিতে পারছেন না। প্রচন্ড রোদের তাপে পাট শুকিয়ে যাচ্ছে ক্ষেতেই। সদর উপজেলার শেখহাটি গ্রামের কৃষক রাজু শেখ বলেন, আমি এক একর জমিতে পাটের চাষ করেছিলাম। ফলনও ভালো হয়েছে। তবে পাট কেটে এখন বিপাকে পড়েছি। পানির অভাবে পাট পচানোর জায়গা নেই। তাই সড়কের পাশে ফেলে রেখেছি।
কালিয়া উপজেলার যাদবপুর গ্রামের জিহাদুল ইসলাম বলেন, ‘অন্যান্য বছর গুলোতে আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে প্রচুর বৃষ্টি হলেও এ বছর বৃষ্টি নেই। পানির অভাবে পাট জাগ দিতে পারছি না। প্রচন্ড রোদে কাটা পাট শুকিয়ে যাচ্ছে।’
লোহাগড়া উপজেলার করফা গ্রামের ইমরুল সিকদার বলেন, এ বছর আমি কয়েক বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। আমার পাটের ফলনও ভালো হয়েছে। কিন্তু খাল-বিলে পানি না থাকায় পাট জাগ দিতে পারছি না। উপজেলার অধিকাংশ পাট চাষিদের একই অবস্থা।
জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, নড়াইল সদর উপজেলায় পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৬ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে। আবাদ হয়েছে ৭ হাজার ৩৫ হেক্টর জমিতে। আবাদকৃত জমিতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮০ হাজার ৯০৩ বেল পাট।
লোহাগড়া উপজেলায় পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১১ হাজার ৭৩৫ হেক্টর জমিতে। আবাদ হয়েছে ১২ হাজার ১৫৫ হেক্টর জমিতে। আবাদকৃত জমিতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৭৮২ বেল পাট। কালিয়া উপজেলায় পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে। আবাদ হয়েছে ৪ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে। আবাদকৃত জমিতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪৭ হাজার ৭২৫ বেল পাট।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ দীপক কুমার রায় বলেন,এ বছর পাট নিয়ে কৃষকরা মহা বিপদে আছেন। পানির অভাবে পাট পচন দিতে পারছে না। তিনি বলেন,পাট কেটেই জমিতে আমনের চাষ করা হয়। সময়মত পাট পচন দিতে না পারলে আমন চাষ ব্যাহত হবে। তিনি বলেন,যে যেখানে পারেন অল্প পানিতেই পাট পচন দিয়ে তার ওপর পলিথিন কিংবা মাটি ও বালির বস্তা চাপা দিয়ে পাট পানির তলে ডুবিয়ে দিতে হবে। এছাড়া কৃষকদের কোন উপায় নেই।