নিউজ ডেস্ক:
নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহে দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংবাদিকদের জন্য নীতিমালা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বুধবার (২৩ জুলাই) ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদের সই করা নীতিমালাটি প্রকাশ করা হয়।
নীতিমালায় বলা হয়, রাজধানী কেন্দ্রিক গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের কেন্দ্রীয় সাংবাদিক হিসেবে গণ্য করা হবে। এসব সাংবাদিকদের পাশ, গাড়ি ও মোটরসাইকেলের স্টিকার নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের জনসংযোগ অধিশাখা থেকে দেওয়া হবে।
স্থানীয় সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে জেলা বা উপজেলা থেকে প্রকাশিত পত্রিকা এবং জাতীয় দৈনিক, টেলিভিশন, অনলাইন, আইপিটিভি এর স্থানীয় প্রতিনিধি স্থানীয় সাংবাদিক হিসেবে বিবেচিত হবেন। স্থানীয় পর্যায়ের এসব সাংবাদিকদের কার্ড, গাড়ি ও মোটরসাইকেলের স্টিকার সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসার বা তার কর্তৃক ক্ষমতা প্রাপ্ত কর্মকর্তারা দেবেন।
ভোটগ্রহণের অন্তত সাতদিন আগে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমের অফিসিয়াল প্যাডে নিউজ এডিটর/চিফ রিপোর্টার/বার্তা প্রধান/ব্যুরো প্রধান/জেলা প্রতিনিধির সই করা আবেদন নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব বা রিটার্নিং অফিসার বরাবর দাখিল করতে হবে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে কতজন সাংবাদিককে অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হলো—তাদের নাম, প্রতিষ্ঠানের সাংবাদিক পরিচয়পত্র/পিআইডি কার্ড, জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, সদ্য তোলা এক কপি পাসপোর্ট ও এক কপি স্ট্যাম্প সাইজ রঙিন ছবি আবেদনের সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে।
প্রাপ্ত আবেদনগুলো ও দলিলাদি যথাযথভাবে যাচাই বাছাই করে নির্বাচনের গুরুত্ব অনুযায়ী রিটার্নিং অফিসারের বিবেচনায় যৌক্তিক সংখ্যক সাংবাদিককে অনুমোদন ও কার্ড ইস্যু করবেন। জটিলতা এড়াতে কতসংখ্যক স্থানীয় সাংবাদিককে পরিচয়পত্র দেওয়া যায়; তা স্থানীয় প্রেসক্লাব বা সাংবাদিক সংগঠন বা সাংবাদিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে নির্ধারণ করবেন। এছাড়া সাংবাদিকদের আবেদন যাচাই-বাছাই করে পরিচয়পত্র ও গাড়ির স্টিকার দেওয়ার জন্য রিটার্নিং অফিসার একটি কমিটি গঠন করে দিতে পারবেন।
আবেদন যাচাই-বাছাইয়ের সময়, পত্রিকা নিয়মিত প্রকাশিত হওয়ার বিষয়ে সন্দেহ হলে, পত্রিকা নিয়মিত প্রকাশিত হয় কিনা তা দেখার জন্য গত এক সপ্তাহের পত্রিকা। সাপ্তাহিকের ক্ষেত্রে তিনটি সংখ্যা জমা দেওয়ার জন্য বলা যেতে পারে। সাংবাদিক পরিচয়পত্র বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট পত্রিকার এডিটর/ প্রেস ক্লাবের সভাপতির সঙ্গে যোগাযোগ করা যাবে। যেসব সাংবাদিককে অনুমোদন দেওয়া হবে তাদের বিস্তারিত তথ্য ইস্যু নম্বরসহ রেজিস্টারে লিখে রাখতে হবে এবং ইস্যু করা কার্ডে রিটার্নিং অফিসার/ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সই, সিল ও তারিখ থাকতে হবে।
নীতিমালায় নির্বাচনি এলাকা ও ভোটকেন্দ্রে সাংবাদিকদের পালনীয় নির্দেশাবলীতে বলা হয়, নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে প্রদত্ত বৈধ কার্ডধারী সাংবাদিক সরাসরি ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন। ভোটকেন্দ্রে প্রবেশের পর প্রিজাইডিং অফিসারকে অবহিত করে ভোটগ্রহণ কার্যক্রমের তথ্য সংগ্রহ, ছবি তোলা এবং ভিডিও ধারণ করতে পারবেন, তবে কোনোক্রমেই গোপন কক্ষের ভিতরের ছবি ধারণ করতে পারবেন না।
একইসঙ্গে দুইয়ের বেশি মিডিয়ার সাংবাদিক একই ভোটকক্ষে প্রবেশ করতে পারবেন না এবং ১০ মিনিটের বেশি ভোটকক্ষে অবস্থান করতে পারবেন না। ভোটকক্ষে নির্বাচনী কর্মকর্তা, নির্বাচনী এজেন্ট বা ভোটারদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করতে পারবেন না।
ভোটকক্ষের ভিতর হতে কোনোভাবেই সরাসরি সম্প্রচার করা যাবে না। ভোটকেন্দ্রের ভিতর থেকে সরাসরি সম্প্রচার করতে হলে ভোটকক্ষ থেকে নিরাপদ দূরত্বে গিয়ে তা করতে হবে, কোনোক্রমেই ভোটগ্রহণ কার্যক্রমে বাঁধার সৃষ্টি করা যাবে না।
সাংবাদিকরা গণনা কক্ষে ভোট গণনা দেখতে পারবেন, ছবি নিতে পারবেন তবে সরাসরি সম্প্রচার করতে পারবে না। ভোটকক্ষ থেকে ফেসবুকসহ কোনও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরাসরি প্রচার করা যাবে না। কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ কার্যক্রম ব্যাহত হয়—এমন সব কাজ থেকে বিরত থাকবেন।
ভোটকেন্দ্রে সাংবাদিকরা প্রিজাইডিং অফিসারের আইনানুগ নির্দেশনা মেনে চলবেন। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাজে কোনরূপ হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। কোনও প্রকার নির্বাচনি উপকরণ স্পর্শ বা অপসারণ করতে পারবেন না।
নির্বাচনী সংবাদ সংগ্রহের সময় প্রার্থী বা কোনও রাজনৈতিক দলের পক্ষে বা বিপক্ষে যেকোনও ধরনের প্রচারণা বা বিদ্বেষমূলক প্রচারণা থেকে বিরত থাকবেন। এবং নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়তার জন্য নির্বাচনি আইন ও বিধিবিধান মেনে চলবেন।
উল্লেখিত নির্দেশনাগুলো কোন সাংবাদিক পালন না করলে কার্ড ইস্যুকারী কর্তৃপক্ষ পাশ বাতিল করতে পারবেন। এছাড়া সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক বা উক্ত প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নির্বাচনি আইন ও বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে জানানো হয়।
এ নীতিমালা নির্বাচন কমিশনের অধীনে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ, উপজেলা পরিষদ, সিটি করপোরেশন, জেলা পরিষদ, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের সাধারণ নির্বাচন ও উপ-নির্বাচনের জন্য প্রযোজ্য হবে বলেও উল্লেখ করা হয়।