অনলাইন ডেস্ক:
সাতক্ষীরার কাসেমপুর গ্রামের চায়ের দোকানদার সিদ্দিক মোড়লের মেধাবী ছেলে শামীম কবির নিরব। তিনি চট্টগ্রামের মেরিন একাডেমিতে ভর্তি পরীক্ষায় ৩৫তম স্থান পেয়ে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পান। ভর্তির টাকা জোগাড় করতে দ্বারে দ্বারে ঘোরার পর অবশেষে পুলিশ সুপার মতিউর রহমান সিদ্দিকী তার ভর্তির ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।
সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে তার মায়ের কাছে এক লাখ ২০ হাজার টাকা তুলে দেন পুলিশ সুপারের পক্ষে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সজিব খান।
এ যেন কুঁড়ে ঘরে চাঁদের আলো। মেধা তালিকায় সুযোগ পেয়েও মেরিন একাডেমিতে ভর্তি হতে অনিশ্চয়তা দেখা দেয় সাতক্ষীরা শহরের চা বিক্রেতা সিদ্দিক মোড়লের ছেলে শামীম কবির নিরবের। এমন সুযোগ পাওয়ার পরও খুশি হতে পারছিল না শুধুমাত্র পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে। টাকার অভাবে গোটা পরিবারে দেখা দিয়েছিল মলিনতার ছাপ। ভর্তির টাকার জন্য সরকারসহ সমাজের বিত্তবানদের কাছে জানিয়েছিল সাহায্যের আবেদন।
মেরিন ক্যাডেট ভর্তি হতে প্রয়োজন ৫০ হাজার টাকা। এছাড়া মেডিকেল পরীক্ষাসহ বিভিন্ন খরচ দিয়ে শামীমের এক লাখ টাকার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু তার গরিব বাবার পক্ষে এককালীন এত টাকা জোগাড় করা সম্ভব হচ্ছিল না। তাই মেরিনে ভর্তি নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় থাকে শামিমের পরিবার। মেধা তালিকায় ৩৫তম স্থান অধিকারী শামীম কবির নিরব বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি চট্টগ্রামে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।
সাতক্ষীরা শহরের শিশু হাসপাতালের বিপরীতে শামীমের বাবা ছিদ্দিক মোড়ল চা বিক্রি করেন। এর আগে ২০২০ সালে সাতক্ষীরা পুলিশ লাইন স্কুল থেকে মাধ্যমিকে জিপিএ-৫ এবং ২০২২ সালে যশোর ক্যান্টমেন্ট কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয় সে। এছাড়া ক্লাস ফাইভের সমাপনী পরীক্ষায়ও জিপিএ-৫ এবং জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়।
পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তাদের তিন ছেলের মধ্যে শামীম বড়। ছেলের সাফল্যে তারা অনেক খুশি। খুশি এলাকাবাসীও। তাদের ছোট একটা চায়ের দোকানে ৫ জনের সংসার চলে। যশোর ক্যান্টমেন্ট কলেজ পড়াতে গিয়ে ছেলের পিছনে অনেক টাকা খরচ হয়েছে। অনেক কষ্টে প্রতিমাসে সেই টাকা জুগিয়েছেন তার বাবা। বতর্মান বাজারের সকল জিনিসের যে দাম তাতে আমাদের ৫ জনের সংসার ঠিক মতো চলে না। ভর্তির এতো টাকা কোথায় পাবে। সরকার অথবা কোনও দানশীল ব্যক্তি যদি তার লেখা পড়ার ভার বহন করে, সেই চেষ্টায় দ্বারেদ্বারে ঘুরে বেড়িয়েছেন তারা।
প্রতিবেশীরা তার ভুয়সী প্রশংসা করে সরকার সহ বিত্তবানদের সহযোগিতা আহ্বান জানায়।
গত ২৭ জানুয়ারি মেরিন একাডেমির ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে শামীম। এতে মেধা তালিকায় ৩৫তম স্থান অধিকার করেছে সে। ভর্তি হতে তার ৫০ হাজার টাকা লাগবে। এছাড়া মেডিকেল পরীক্ষায় ১০ হাজার টাকাসহ অন্যান্য খরচ দিয়ে প্রায় এক লাখ টাকা মতো লাগবে তার। তার বাবা একজন চায়ের দোকানি। ‘দরিদ্র পরিবারে জন্ম, করার কিছু নেই। ভর্তি হতে পারবো কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি তারিখের মধ্যে ভর্তি হতে না পারলে আসন শূন্য ঘোষণা করবে মেরিন একাডেমি। সে জীবনে কঠোর পরিশ্রম করে এ পর্যন্ত পৌঁছেছে । লেখাপড়ার পাশাপাশি সে তার বাবার চায়ের দোকানেও কাজ করেছে। এছাড়া ঢাকায় গিয়েও সে তার লেখাপড়ার খরচ নিজে চালিয়েছে।
চট্টগ্রাম মেরিন একাডেমিতে ভর্তির মেধা তালিকায় ৩৫তম হয়েও টাকার অভাবে বঞ্চিত হচ্ছিল সাতক্ষীরার মেধাবী ছাত্র শামীম কবির নিরব। ঘটনাটি জানার পর ভর্তি ও লেখাপড়ার খরচ ব্যবস্থা করলেন পুলিশের এসপি মতিউর রহমান সিদ্দিকী। সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টায় কার্যালয়ে ওই মেধাবী ছাত্র ও তার মায়ের হাতে এসপির পক্ষ থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকা তুলে দেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সজীব খান।
পদোন্নতিপ্রাপ্ত এ পুলিশ সুপার সজীব খান বলেন, ২০২০ সালে সাতক্ষীরা পুলিশ লাইন্স স্কুল থেকে মাধ্যমিকে জিপিএ-৫ এবং ২০২২ সালে যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন শামীম কবির। টাকার অভাবে ভর্তি হতে পারছে না ঘটনাটি জানার পর তাকে এ সহায়তা দেয়া হয়েছে। লেখাপড়ার যে কোনো প্রয়োজনে জেলা পুলিশ তার পাশে থাকবে।
দুশ্চিন্তা মুক্ত হয়ে পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন শামীম। নিজের ছেলেও বড় হয়ে এমন গরিবের পাশে দাঁড়াবে এমন আশা প্রকাশ করেন এই ছাত্রের মা আঞ্জুমানয়ারা বেগম। ছেলেটির বাবা শহরের সিটি কলেজের সামনে সরকারি জায়গায় চায়ের দোকান চালিয়ে পরিবার নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন।