হোম আন্তর্জাতিক নিঃসন্দেহে মৃত্যুর পরও জীবন রয়েছে :পাঁচ হাজার কেস স্টাডির পর মার্কিন বিশেষজ্ঞ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

জীবনের চির সত্যের নাম মৃত্যু। চাইলেও মরতে হবে, না চাইলেও। কিন্তু মৃত্যু আসলে কী? মরে যাওয়া মানে কী সবকিছুর শেষ, নাকি নতুন কোনো কিছুর সূচনা? এমন সব প্রশ্ন আদিকাল থেকে মানুষকে ভাবাচ্ছে। এ নিয়ে বিভিন্ন ধর্মে বিভিন্ন বক্তব্য রয়েছে। ইসলাম ধর্ম মতে, মৃত্যুর পরও জীবন আছে। মৃত্যু মানে রুহ বা আত্মার জগতে স্থানান্তর, ইহলৌকিক জীবনের ইতি টেনে পারলৌকিক জীবনে প্রবেশ।

মৃত্যুর পর জীবনের অস্তিত্ব আছে কিনা তার উত্তর খুঁজে পেতে চলছে বৈজ্ঞানিক গবেষণাও। এ নিয়ে বিশদ এক গবেষণার পর সম্প্রতি নিজের সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের এক চিকিৎসক ও গবেষক। জেফরি লং নামে ওই গবেষক বলছেন, ‘মৃত্যুর পরও জীবন আছে। এতে কোনো সন্দেহ নেই।’

জেফরি লং যুক্তরাষ্ট্রের কেনটাকি রাজ্যের একজন খ্যাতনামা ক্যানসার বিশেষজ্ঞ। মৃত্যু নিয়েও বহুদিন ধরে গবেষণা করছেন তিনি। ‘নিয়ার-ডেথ এক্সপেরিয়েন্স রিসার্চ ফাউন্ডেশন’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানও গড়ে তুলেছেন তিনি। ‘নিয়ার-ডেথ এক্সপেরিয়েন্স’র বাংলা করলে দাঁড়ায় মৃত্যুর কাছাকাছি পৌঁছার অভিজ্ঞতা। এই বিষয়টি নিয়েই গত প্রায় তিন দশক ধরে গবেষণা করছেন জেফরি লং।

এক্ষেত্রে পৃথক পৃথকভাবে প্রত্যেক ব্যক্তির গল্প শুনেছেন এবং সেগুলো বৈজ্ঞানিকভাবে বিশ্লেষণ করেছেন তিনি। তার মতে, ‘নিয়ার-ডেথ এক্সপেরিয়েন্স হলো একটি স্পষ্ট অভিজ্ঞতা যা প্রকৃত মৃত্যু বা আসন্ন মৃত্যুর হুমকির সময় ঘটা দেহবিযুক্ত অনুভূত চেতনার সাথে সম্পর্কিত।’

জেফরি লংয়ের দাবি, এখন পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নিয়ার-ডেথ এক্সপিরিয়েন্স-এর প্রায় ৫ হাজার ২০০ কেস স্টাডি করেছেন তিনি। যা নিয়ার-ডেথ এক্সপিরিয়েন্স রিসার্চ ফাউন্ডেশন ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। জেফরি বলছেন, এসব ঘটনার বৈজ্ঞানিক গবেষণার মধ্যদিয়ে তার এমন বিশ্বাস জন্মেছে যে, মৃত্যুর পরও জীবনের অস্তিত্ব রয়েছে এবং এ ব্যাপারে তার কোনো সন্দেহ নেই।

প্রায় তিন দশক ধরে চালানো নিজের সেই গবেষণার বিভিন্ন দিক তুলে ধরে সম্প্রতি মার্কিন সংবাদমাধ্যমে ইনসাইডারে এক নিবন্ধ লিখেছেন জেফরি লং। সেখানে তিনি বলেছেন, ‘প্রায় ৩৭ বছর ধরে আমি ৫ হাজারেরও বেশি নিয়ার-ডেথ এক্সপেরিয়েন্সের ঘটনা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছি। আমার এই গবেষণা আমাকে নিশ্চিত করেছে যে, মৃত্যুর পরেও জীবন আছে।’

মৃত্যু নিয়ে কিভাবে আগ্রহী হয়ে উঠলেন বা কিভাবে নিয়ার-ডেথ এক্সপেরিয়েন্স নিয়ে গবেষণা শুরু হলো সবিস্তারে প্রবন্ধে তা তুলে ধরেছেন জেফরি। বলেছেন, এখন থেকে ৩৭ বছর আগে আমি একজন অনকোলজিস্ট তথা ক্যানসার বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ শুরু করি। রেডিয়েশন থেরাপি ব্যবহার করে কীভাবে ক্যানসারের সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা করা যায় তা শিখছিলাম।’

‘তখন ইন্টারনেট ছিল না। তাই লাইব্রেরিতে বসেই গবেষণা করেছি। একদিন আমি আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের জার্নালের একটা বড় ভলিউমের পাতা উল্টাচ্ছিলাম। তাতে আমি একটি প্রবন্ধ পেলাম যা নিয়ার-ডেথ এক্সপেরিয়েন্স বা মৃত্যুর কাছাকাছি পৌঁছার অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখা।’

জেফরি বলেন, প্রবন্ধটা আমাকে কিছুক্ষণের জন্য স্তব্ধ করে দিল। আমি যত চিকিৎসা বিষয়ক প্রশিক্ষণ নিয়েছি, সেখানে আমাকে বলা হয়েছে, আপনি হয় জীবিত না হয় মৃত। এর মাঝামাঝি কোনো কিছু নেই। কিন্তু হঠাৎ আমি ওই প্রবন্ধে জানলাম যেখানে একজন কার্ডিওলজিস্ট তথা হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ এমন রোগীদের কথা বলছেন যা যারা মারা গিয়েছিল এবং তারপরে জীবিত হয়ে ফিরে এসেছিল। প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে রোগীরা অতি স্বতন্ত্র ও প্রায় অবিশ্বাস্য অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন।

জেফরি বলেন, সেই মুহূর্ত থেকে আমি নিয়ার-ডেথ এক্সপেরিয়েন্স বিষয়টায় ডুবে গেলাম। জেফরি নিয়ার-ডেথ এক্সপেরিয়েন্স তথা মৃত্যু কাছাকাছি পৌঁছার অভিজ্ঞতার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন, এটা এমন একটা অবস্থা যেখানে একজন ব্যক্তি কোমায় চলে গেছেন তথা চিকিৎসা বিজ্ঞান অনুযায়ী মৃত। যার কোনো হৃদস্পন্দন থাকে না।

জেফরির মতে, এমন অবস্থায় মানুষের এমন এক স্পষ্ট অভিজ্ঞতা হয় যেখানে তারা দেখে, শোনে, আবেগ অনুভব করে এবং এমনকি অন্যান্য প্রাণীর সাথে যোগাযোগও করে। জেফরি বলেন, এই অভিজ্ঞতাগুলো সম্পর্কে আরও বেশি বেশি জানা ও বোঝার মধ্যদিয়ে মহাবিশ্ব সম্পর্কে আমার দৃষ্টিভঙ্গি আমূল বদলে গেছে।

জেফরি বলেছেন, ‘এমন বিষ্ময়কর প্রমাণের প্রেক্ষিতে আমি বিশ্বাস করতে শুরু করেছি যে, অবশ্যই পরকাল বলে একটা ব্যাপার আছে।’ তিনি আরও বলেন, মৃত্যুর কাছাকাছি পৌঁছা প্রতিটি ব্যক্তির অভিজ্ঞতাই আলাদা। তবে এক্ষেত্রে অনেকগুলো সামঞ্জস্য বা মিলও রয়েছে। এই ডাক্তার আরও বলেছেন, প্রায় ৪৭ শতাংশ রোগীই জানিয়েছেন যে, তাদের অ-শরীরী বা দেহের বাইরে চলে যাওয়ার অভিজ্ঞতা হয়েছিল।

জেফরি জানান, অভিজ্ঞতা শেয়ার করা ব্যক্তিরা দাবি করেছেন, ‘তাদের চেতনা তাদের শরীর থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছিল এবং সেটা অনেকটা শরীরের ওপরে চক্কর দেয়ার মতো।’ যেখানে তাদের চারপাশে কী ঘটছিল তা শুনতে ও দেখতে পেয়েছিলেন তারা।

এই বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, ‘অ-শরীরী বা দেহের বাইরে থাকার অনুভূতির পর অন্য এক জগতে যাওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন বেঁচে ফেরা ব্যক্তিরা। অনেকেই অদ্ভুত এক টানেল বা সুড়ঙ্গের মধ্যদিয়ে পার হওয়ার অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন যা শেষ প্রান্তে উজ্জ্বল আলো দেখা গেছে। এরপর সেই জগতে তারা আগেই মারা গেছে এমন প্রিয়জনের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে তাদের।’

‘অনেকে শৈশব, কৈশোর ও যৌবনের সব ঘটনা দেখতে পাওয়ার দাবি করেছেন। বেশিরভাগই মানুষই অপরিমেয় ভালবাসা ও চূড়ান্ত শান্তি অনুভবের কথাও জানিয়েছেন। এই সময় তাদের এমন অনুভূতি হয়েছে যে, এই জগতই তাদের আসল বাড়ি।’

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন