মোস্তফা কামাল:
‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে তারুণ্যের একতা: গড়বে আগামীর শুদ্ধতা’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে নড়াইলে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উদযাপন করা হয়েছে। দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির মধ্যদিয়ে দিবসটি উদযাপন করা হয়। কর্মসূচির মধ্যে ছিল জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে জাতীয় ও দুদক পতাকা উত্তোলন, বেলুন ও ফেস্টুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন, মানববন্ধন, আলোচনা সভা ও জনবহুল স্থানে দুর্নীতিবিরোধী নাটিকা প্রদর্শন।
নড়াইল জেলা প্রশাসন ও জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি (দুপ্রক)’র যোথ উদ্যোগে সোমবার (৯ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গণে বেলুন ও ফেস্টুন উড়িয়ে কর্মসূচির উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক শারমিন আক্তার জাহান। পরে শহরের চৌরাস্তা মোড়ে স্কুল-কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, জেলা প্রশাসক, প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে দুর্নীতিবিরোধী মাননবন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধন শেষে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। জেলা দুপ্রক’র সভাপতি অধ্যক্ষ মনিরুজ্জামান মল্লিকের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক শারমিন আক্তার জাহান। সঞ্চালনা করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো: আহসান মাহমুদ রাসেল। আলোচনায় অংশ নেন ও দিবসের ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন জেলা দুপ্রক’র সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক কাজী হাফিজুর রহমান, সদর থানার অফিসার ইনচার্জ সাজেদুল ইসলাম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা আহŸায়ক রাফায়েতুল হক তমাল। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক জুলিয়া সুকায়না, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সঞ্চিতা বিশ্বাস, জেলা শিক্ষা অফিসার জাহাঙ্গীর আলম, জেলা তথ্য অফিসার মো: রোস্তম আলীসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাবৃন্দ।
প্রধান অতিথি শারমিন আক্তার তার বক্তব্যে বলেন, আমাদের সমাজ, রাষ্ট্র তথা জাতিকে সমৃদ্ধশালী করতে প্রথমেই দেশ থেকে দুর্নীতি নির্মূল করতে হবে। আর তার জন্য প্রয়োজন দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা। শুধু আর্থিক অনিয়মই দুর্নীতি নয়। দায়িত্ব পালনে অবহেলা বা সঠিকভাবে পালন না করাও দুর্নীতি। যেমন শিক্ষক যদি ক্লাসে ঠিকমত না পড়িয়ে কোচিং বা প্রাইভেট পড়ানোতে বেশি গুরুত্ব দেন সেটাও দুর্নীতি। আবার চিকিৎসক যদি সরকারি দায়িত্বে ফাকি দিয়ে ব্যক্তিগত চেম্বারে বেশি ঝুঁকে পড়েন সেটাও দুর্নীতি। সমস্ত দুর্নীতির মূলোৎপাটন করতে হবে।
সভায় দুর্নীতিরোধে দুপ্রক’র পক্ষ থেকে ১৪ টি সুপারিশ তুলে ধরা হয়। সেগুলি হলো- দুর্নীতিবিরোধী চিন্তাচেতনার বিকাশ ও বিস্তার ঘটানো; আন্দোলন পরিচালনার জন্য সংগঠন গড়ে তোলা; নেতৃত্ব ও সংগঠনের প্রতি জনগণের সমর্থন ও আস্থা অর্জন করা; দুর্নীতি মোকাবেলায় গঠিত সংগঠনে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা; জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দুর্নীতি মোকাবিলায় কার্যকর পন্থা ও উপায় কার্যকরকরণ; মূল্যায়ণ ও কার্যকারিতা স্থায়ীকরণ; ধর্মীয় বিধানাবলি প্রচার ও কার্যকর করা; দুর্নীতিবিরোধী সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করা; বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা; দুর্নীতিবাজদের উপযুক্ত শাস্তি প্রদান করা; দুর্নীতিবিরোধী দিবস পালন করা; দুর্নীতিবাজদের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ বা সামাজিকভাবে বয়কট করা; জেলায় সম্পদ মূল্যায়ণ মেলা করা ; দক্ষ তদন্তকারী এবং সরকারি আইনজীবী নিয়োগ করে দুর্নীতিবাজদের শাস্তি প্রদান নিশ্চিত করা; দুর্নীতি দমন কমিশনকে সত্যিকার অর্থে স্বাধীন ও শক্তিশালী করা।