স্বাস্থ্য ডেস্ক:
মহামারি করোনা ভাইরাসের আঁতুরঘর চিনের ইউহান প্রদেশ। কেউ বলে সেখানকার গবেষণাগার থেকে ছড়িয়েছে করোনা। কেউবা আবার বলে, সেখানে এক সামুদ্রিক প্রাণীর মাংসের বাজার থেকে ছড়ায় ভাইরাস। এই নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই।
২০২৫ এর শুরুতেই আবার সেই চিনেই মহাবিপদের ঘণ্টা বেজে উঠল। এবার সেখানে ‘এইচএমপিভি’ ভয় দেখাচ্ছে সারা বিশ্বকে। খুব স্বাভাবিকভাবেই ফিরেছে সেই করোনা আতঙ্ক। এবারও কি তাহলে মহামারির আশঙ্কা!
এরই মধ্যে চীনের হাসপাতালগুলোতে রোগীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে বেড়ানো বেশ কিছু পোস্ট ও প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদন মতে, এইচএমপিভি হলো হিউম্যান মেটাপনিউমোভাইরাস। এইচএমপিভি ফ্লু’র মতো উপসর্গ, বিশেষ করে শিশু ও অসুস্থ ব্যক্তিদের মধ্যে গুরুতর শ্বাসকষ্টের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। ভাইরাসটি করোনার মতোই ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে বলে সতর্ক করেছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞদের অনেকের শঙ্কা, ২০২৫ সালে আবার করোনার মতো নতুন কোনো মহামারির উদ্ভব হতে পারে। যদিও কোন রোগটি মহামারি আকার ধারণ করবে, সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো বার্তা এখনই দেওয়া সম্ভব নয়। তবে এইচএমভির প্রাদুর্ভাব ভাবাচ্ছে তাদের।
যুক্তরাজ্যের সাউদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ গবেষক মাইকেল হেড বলেন, ‘আরো একটি মহামারির আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে এখনো কোন রোগটি মহামারি আকার ধারণ করবে, সেটি নিশ্চিত না বলে আগাম মহামারির নাম দেওয়া হয়েছে ডিজিজ এক্স’।
সিডিসি (কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল) এর তথ্য অনুসারে, এইচএমপিভি একটি শ্বাসযন্ত্রের ভাইরাস, যা ওপরের ও নীচের শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ ঘটায়। এটি সব বয়সের ব্যক্তিদের প্রভাবিত করে।
তবে শিশু, বয়স্ক ও যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাদের জন্য ভাইরাসটি সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। এইচএমপিভি ২০০১ সালে প্রথম সনাক্ত করা হয়।
এইচএমপিভি’র লক্ষণ কী কী?
এইচএমপিভির উপসর্গগুলো ফ্লু ও অন্যান্য শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের মতোই। সাধারণ উপসর্গের মধ্যে আছে কাশি, জ্বর, নাক বন্ধ হওয়া ও শ্বাসকষ্ট। গুরুতর ক্ষেত্রে, ভাইরাস ব্রঙ্কাইটিস বা নিউমোনিয়ার মতো জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
এইচএমপিভির ইনকিউবেশন পিরিয়ড বা উন্মেষপর্ব সাধারণত ৩ থেকে ৬ দিনের মধ্যে হয়। তবে সংক্রমণের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে লক্ষণগুলো বিভিন্ন সময়কালের জন্য স্থায়ী হয়।
এইচএমপিভি ভাইরাস ছড়ায় কীভাবে?
এইচএমপিভি অন্যান্য শ্বাসযন্ত্রের ভাইরাসের মতোই ছড়ায়। যার মধ্যে আছে- কাশি এবং হাঁচি থেকে নিঃসরণ, হাত মেলানো বা স্পর্শ করা, সংক্রমিত স্থান স্পর্শ করা এবং তারপর মুখ, নাক বা চোখ হাত দিয়ে স্পর্শ করা ইত্যাদি।
প্রতিরোধ ও প্রতিকার
প্রায় ২ দশক আগে প্রথমবারের মতো এইচএমপিভি ভাইরাস উপস্থিতি জানান দিলেও এখন পর্যন্ত এর টিকা আবিষ্কার হয়নি। চিকিৎসকেরা বলছেন, করোনা মোকাবিলায় যেসব সতর্কতা নেওয়া হয়েছিল, একই পদক্ষেপে এই ভাইরাসও প্রতিরোধ করা সম্ভব।
টানা ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধোয়া, অপরিষ্কার হাতে নাক-মুখ স্পর্শ না করা এবং আক্রান্ত ব্যক্তিদের থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখার মধ্য দিয়ে এইচএমপিভি থেকে নিরাপদ থাকার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকেরা।