হোম খুলনা নতুন বছরে খুলনা-মোংলা রুটে যাত্রীবাহী ট্রেন

অনলাইন ডেস্ক:

দীর্ঘ এক যুগের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে নতুন বছরের প্রথম দিন থেকে খুলনা-মোংলা রুটে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হচ্ছে। যশোর থেকে ফুলতলা হয়ে প্রতিদিন দুইবার মোংলা যাতায়াত করবে যাত্রীবাহী ট্রেন। তাই জোরেশোরে চলছে শেষ সময়ের প্রস্তুতি। নতুন এই রেলপথ নিয়ে উচ্ছ্বসিত যাত্রীরা। দ্রুত পণ্যবাহী ট্রেন চলাচলের মাধ্যমে মোংলা বন্দর ব্যবহার করে ব্যবসা-বাণিজ্যে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

মোংলা বন্দরের সঙ্গে রেল যোগাযোগের মাধ্যমে পণ্য পরিবহন সহজ করতে ২০১০ সালে খুলনা-মোংলা রেলপথ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। ২০১০ সালে একনেকে অনুমোদন হলেও জমি অধিগ্রহণ জটিলতা, ঠিকাদার নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৬’র সেপ্টেম্বরে। রেলপথ, রেলসেতুসহ মূল রেল লিংকিংয়ের কাজ শেষ হয় চলতি বছরের অক্টোবরে। ৯১ কিলোমিটার রেলপথের পাশাপাশি রূপসা নদীর ওপর ৫.১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলসেতু, ১১টি প্লাটফর্ম, ১০৭টি কালভার্ট, ৩১ ছোট ব্রিজ ও ৯টি আন্ডারপাস নির্মাণ করা হয়েছে।

নির্মাণ শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ১ নভেম্বর ভার্চুয়ালি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন এই রেলপথ। অপেক্ষা ছিল আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রেন চালুর। নতুন বছরের প্রথম দিন থেকেই এই পথে রেল চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। যশোর থেকে ফুলতলা হয়ে মোংলায় যাবে প্রতিদিন দুইটি ট্রেন। সহজ যোগাযোগমাধ্যম হওয়ায় নতুন এই রেলপথ নিয়ে উচ্ছ্বসিত খুলনা, যশোর ও মোংলা অঞ্চলের যাত্রীরা।

মোংলা ইপিজেডে কাজ করেন খুলনা বয়রা এলাকার বাসিন্দা ওবায়দুল। তিনি বলেন, এই রেলপথ আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরুর অপেক্ষায় ছিলাম। এখন থেকে সকালে ট্রেনে ইপিজেড স্টেশনে নেমে কাজ শেষ করে আবারও ট্রেনে বাড়ি ফিরতে পারব।

তিনি আরও বলেন, শুধু আমি না, আমার মতো আরও অনেকে খুলনা থেকে মোংলা বন্দর ও মোংলা ইপিজেডে কাজ করতে খুলনা থেকে মোংলা যাতায়াত করেন। এতদিন আমাদের নানা দুর্ভোগে যাতায়াত করতে হত। সরকারের এই উন্নয়নে এ অঞ্চলের মানুষ খুব খুশী।
খুলনার মোহাম্মদ নগর এলাকার বাসিন্দা আরাফাত হোসেন বলেন, নতুন রেলপথ আমাদের এই অঞ্চলের যোগাযোগে নতুন অধ্যায় সৃষ্টি করবে। এতে আমরা দারুণ খুশী। যাত্রা শুরুর প্রথম দিনেই আমি এই রেলে উঠতে চাই।

যাত্রীবাহী ট্রেন চালুর তারিখ ঘোষণা হলেও এখনো পণ্যবাহী ট্রেন চালুর তারিখ চূড়ান্ত হয়নি। এ অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা অপেক্ষায় আছেন পণ্যবাহী ট্রেন চালুর। এই রেলপথে মোংলা বন্দর দিয়ে পণ্য সরাসরি বেনাপোল বন্দর হয়ে ভারত যাবে। আর পণ্যবাহী ট্রেন চালুর অপেক্ষায় মোংলা বন্দরকেন্দ্রিক ব্যবসায়ীরা।

মোংলা বন্দর ব্যবহারকারী সমন্বয় সমিতির মহাসচিব অ্যাড. সাইফুল ইসলাম বলেন, যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরুর বিষয়টি আমাদের জন্য দারুণ সুখবর। তবে ব্যবসায়ীরা অপেক্ষায় আছি এই পথে পণ্যবাহী ট্রেন চলাচলের। আমাদের সাথে বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা যোগাযোগ করছেন এই পথ দিয়ে ভারতে পণ্য আমদানি-রফতানির জন্য। এই রেলপথের মধ্য দিয়ে মোংলা বন্দর ব্যবহার করে পণ্য আমদানি-রফতানি বাড়বে। আর তাতে এ অঞ্চলের অর্থনীতির নতুন সম্ভাবনা তৈরি হবে।

এদিকে আগামী পহেলা জানুয়ারি থেকে রেল চলাচলের সব প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে বলে জানিয়ে প্রকল্প পরিচালক মো. আরিফুজ্জামান বলেন, মূল রেল লিংকিং কাজ আমরা আগেই সম্পন্ন করেছি। এখন শেষ দিকের কিছু কাজ বাকি। যেগুলো আমরা বলছি ফিনিসিং কাজ। এখন টেলিকিমিউনিকেশন ও সিগন্যালিংয়ের কিছু কাজ চলছে। যা দ্রুত শেষ হবে।

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচির (উন্নয়ন) মো. ইয়াসিন বলেন, পহেলা জানুয়ারি হতে যশোর থেকে মোংলা পর্যন্ত রেল চালানোর জন্য আমাদের সব প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন। ভাড়া নির্ধারণসহ অন্যান্য কিছু বিষয় চূড়ান্ত করা বাকি। আশা করছি নির্ধারিত সময়ের আগেই সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হবে।

ভারত সরকারের ঋণ সহায়তা চুক্তির আওতায় ৪ হাজার ২৬১ কোটি ব্যয়ের এ রেলপথটি নির্মাণ করেছে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান এলঅ্যান্ডটি এবং ইরকন ইন্টারন্যাশনাল।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন