হোম আন্তর্জাতিক ধৈর্যের বাঁধ ভাঙবেন না: পশ্চিমকে রাশিয়ার হুঁশিয়ারি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :

পশ্চিমা দেশগুলোকে আবারও হুঁশিয়ারি দিয়েছে রাশিয়া। বলেছে, রুশ ভূখণ্ডে ফের হামলা হলে কঠিন জবাব দেওয়া হবে। বৃহস্পতিবার (২৮ এপ্রিল) এক বিবৃতিতে এ হুঁশিয়ারি দেন রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা। খবর রয়টার্সের।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। এরপর দুই মাসের বেশি সময় ধরে এ অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তীব্র লড়াইয়ের মাঝে বুধবার (২৭ এপ্রিল) রাতভর সীমান্ত-লাগোয়া রাশিয়ার অন্তত তিনটি শহরে একের পর এক বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। একই সময়ে বেলগরোদ শহরে একটি গোলাবারুদ সংরক্ষণাগারে আগুন লাগে বলে জানায় রুশ কর্তৃপক্ষ।

ইউক্রেন এসব হামলার সরাসরি দায় স্বীকার করেনি। তবে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য যুক্তরাজ্য বলেছে, রুশ স্বার্থকে লক্ষ্য করে আঘাত হানা ইউক্রেনের জন্য ‘বৈধ’। বৃহস্পতিবার (২৮ এপ্রিল) ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস বলেন, ‘রাশিয়ার খাদ্য, জ্বালানি ও গোলাবারুদ সরবরাহ ব্যবস্থা লক্ষ্য করে হামলা চালানো ইউক্রেনীয় বাহিনীর জন্য বৈধ।’

বেন ওয়ালেসের এ বক্তব্যের পরপরই এক সংবাদ সম্মেলনে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেন, ‘পশ্চিমারা খোলাখুলিভাবে তাদের পাঠানো অস্ত্র দিয়ে রাশিয়ার ওপর হামলা চালানোর আহ্বান জানাচ্ছে। আমি তাদের উদ্দেশে বলতে চাই, আপনারা আমাদের ধৈর্যের পরীক্ষা নেবেন না।’

এর আগে এক বিবৃতিতে পশ্চিমকে সতর্ক করে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘রাশিয়ার ভূখণ্ডে যদি আবারও এমন হামলা চালানো হয় তাহলে ইউক্রেনের সিদ্ধান্তগ্রহণ কেন্দ্রকে টার্গেট করবে মস্কো।’ জাখারোভা বলেন, ‘কিয়েভ ও পশ্চিমের উচিত রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই হুঁশিয়ারিকে গুরুত্ব সহকারে নেওয়া। রাশিয়ার ভূখণ্ডে হামলা চালাতে ইউক্রেনকে ফের উস্কানি দেওয়া হলে রাশিয়ার পক্ষ থেকে কঠিন জবাব দেওয়া হবে।’

বিবৃতিতে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, পশ্চিমাদের বক্তব্য-বিবৃতিতে মনে হচ্ছে, ইউক্রেনের বর্তমান সরকার স্বাধীন না। তার কথায়, ‘আমরা আবারও দেখছি জেলেনস্কির সরকার স্বাধীন না। তাদের সিদ্ধান্ত পুরোপুরি নির্ভর করে বিদেশিদের ওপর।’ জেলেনস্কিকে উদ্দেশ্য করে তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি, পশ্চিমারা আমাদের এটা বিশ্বাস করাতে চায় যে, আপনার (জেলেনস্কির) কর্মকাণ্ড স্বাধীন। আপনি আসলে স্বাধীন নন। আপনাকে পশ্চিমারা ব্যবহার করছে।’

জাখারোভা আরও বলেন, সবশেষ সম্ভাব্য শান্তি চুক্তি প্রস্তাবে ইউক্রেনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো সাড়া পায় নি রাশিয়া। তার ভাষায়, ‘আজ (বৃহস্পতিবার, ২৮ এপ্রিল) সকালে ব্রিফিংয়ের প্রস্তুতির আগ পর্যন্ত ইউক্রেনের কাছ থেকে কোনো উত্তর পায়নি মস্কো।’

এক মাস আগে ইস্তানবুলে রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতিনিধিরা শান্তি আলোচনায় বসেন। তবে সেই বৈঠক থেকে ভালো কোনো ফলাফল আসেনি। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, মস্কোর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যার অভিযোগ আনা সত্ত্বেও রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি আলোচনা অব্যাহত থাকবে।

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের সবশেষ খবর

বৃহস্পতিবার (২৮ এপ্রিল) রাশিয়ার ইউক্রেন অভিযান ৬৪তম দিনে গড়িয়েছে। অভিযানের ৯ম সপ্তাহে এসে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলে হামলা জোরদার করেছে রুশ সেনাবাহিনী।

আরআইএ নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, লড়াইয়ের ৬৪তম দিনে ইউক্রেনের অধিকৃত শহর খারসনের কেন্দ্রে তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে ইউক্রেনীয় বাহিনী। এর মধ্যে দুটো ক্ষেপণাস্ত্র গুলি করে ভূপাতিত করেছে রুশ বাহিনী। এরই মধ্যে খারসন শহরে শহরবাসীর একটি বিক্ষোভ টিয়ারগ্যাস ও স্টান গ্রেনেড ছুঁড়ে ভেস্তে দিয়েছে রুশ নিরাপত্তা বাহিনী।

এদিকে ইউক্রেন দাবি করেছে, লড়াইয়ে এখন পর্যন্ত রাশিয়ার ২২ হাজার ৮০০ সেনা নিহত হয়েছে। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটি ৪০০ সেনা হারিয়েছে রুশ বাহিনী। ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর জেনারেল স্টাফ এ তথ্য জানায়।

এক ফেসবুক বার্তায় দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর জেনারেল স্টাফ আরও জানিয়েছে, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সামরিক অভিযান শুরুর পর মস্কো ৯৮০ টি ট্যাংক, ২ হাজার ৩৮৯টি সাঁজোয়া যান, ১৮৭ টি প্লেন এবং ১৫৫টি হেলিকপ্টার হারিয়েছে। তবে এ ব্যাপারে এখনও কোনো মন্তব্য করেনি রাশিয়া।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন