মধুসূদন মন্ডল:
সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার ঈশ্বরীপুর ইউনিয়নে অবস্থিত ইতিহাসবিখ্যাত ঐতিহাসিক ঈশ্বরীপুর যশোরেশ্বরী কালী মন্দির।যশোরেশ্বরী অর্থ যশোরের দেবী।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য এটি একটি ঐতিহাসিক তীর্থস্থান।সত্যযুগে দক্ষযজ্ঞের পর সতী মাতা দেহ ত্যাগ করলে দেবাদিদেব ত্রিলোকেশ্বর মহাদেব সতীর মৃতদেহ কাঁধে নিয়ে বিশ্বব্যাপী প্রলয় নৃত্য শুরু করলে বিষ্ণুদেব সুদর্শন চক্র দ্বারা সতীর মৃতদেহ ছেদন করেন।এতে সতী মাতার দেহখণ্ড সমূহ ভারতীয় উপমহাদেশের ভারত,বাংলাদেশসহ সমগ্র বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে দেবীর পীঠস্থান পতিত হয় এবং এ সকল স্থান সমূহ শক্তিপীঠ হিসেবে পরিচিতি পায়।আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশে দেবীর ৫১ পীঠের মধ্যে সারাদেশে মোট ৪ টি পবিত্র স্থানে দেবীর ৪টি পীঠস্থান অবস্হিত।
বাংলাদেশের এই ৪টি পীঠস্থানের মধ্যে (১)সাতক্ষীরার শ্যামনগরে দেবীর পাণিপদ্ম,(২)বরিশালের সুগন্ধায় দেবীর নাসিকা,(৩)করতোয়া তটে দেবীর বসন/বাসতল্প,(৪)চট্টগ্রামে দেবীর দক্ষিণবাহু পতিত হয়েছিল।যা আজও ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় পীঠ স্থান হিসেবে সারা বিশ্বে সমধিক পরিচিতি বহন করে চলেছে।প্রতিবছর সারাদেশসহ বিদেশ থেকেও আমাদের ঈশ্বরীপুর যশোরেশ্বরী কালিমাতা মন্দিরে লক্ষাধিক ভক্তের সমাগম হয়ে থাকে।১২ শতকের শেষার্ধে রাজা লক্ষণ সেনের রাজত্বকালে যশোরেশ্বরী কালিমন্দির নির্মিত হয় বলে ঐতিহাসিকরা মনে করেন।রাজা প্রতাপাদিত্য রাজধানী নির্মাণকালে জঙ্গল পরিষ্কার করার সময় ভগ্নাবস্থায় এই মন্দির ও কষ্টিপাথরের কালীমূর্তি উদ্ধার করেন।
সেসময় থেকে ঐ মন্দিরে ধর্মীয় মতাদর্শের অলৌকিক বিভিন্ন ঘটনার সুত্রপাত লক্ষ করা যায়।তারপর তিনি এ বিশাল মন্দিরটি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন।
কবিরামের দিগ্বিজয় গ্রন্থ থেকে জানা যায়,ঈশ্বরীপুরে অবস্থিত যশোরেশ্বরী মন্দির ও তার উত্তর-পূর্বকোণে চন্ড ভৈরব মন্দির নির্মাণ করেছিলেন রাজা লক্ষণ সেন।প্রতিবছর যশোরেশ্বরী মন্দিরে মহা ধুমধামে শ্যামা কালীপূজা অনুষ্ঠিত হয়।নতুন করে সাজানো সম্পূর্ণ মন্দির।মায়ের পূজায় ভক্তগণ ফুল, ফল ও নানা ধরনের মিষ্টি নিয়ে আসেন।প্রতিবছর শ্যামাপূজায় লক্ষ লক্ষ ভক্ত দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জড়ো হয়।মন্দিরের সামনে তিনদিন ব্যাপী ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনায় মেলা অনুষ্ঠিত হয়।এছাড়া সপ্তাহের প্রতি শনিবার ও মঙ্গলবার পূজা হয়ে থাকে।
প্রতিদিন দেশ বিদেশের অনেক দর্শানার্থী ভিড় জমান এই মন্দিরটি দেখতে।শনিবার ও মঙ্গলবার ছাড়া এই মন্দিরের সদর গেট খোলা হয় না বলে এসকল দর্শনার্থী মন্দিরের সদর গেটের বাইরে থেকে একনজর দেখেই তাদের তৃপ্তি মেটান।যশোরেশ্বরী কালিমাতা মন্দির পরিদর্শনে ভারত,শ্রীলঙ্কা,নেপাল,ভূটান হাই কমিশন সহ বিশ্বের নামীদামী ব্যক্তিবর্গ উক্ত পবিত্র মন্দির দর্শন করেছেন,প্রশংসা করেছেন।
এই মন্দিরটি সরকারিভাবে পরিচালিত হোক এবং প্রত্নতত্ব অধিদপ্তর কতৃর্ক পরিচালিত হোক এটাই এই এলাকার মানুষের প্রাণের দাবি।এছাড়া মন্দিরের দখলকৃত জায়গা উদ্ধারসহ সার্বিক উন্নতিকল্পে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন জননেত্রী শেখহাসিনার আশু সুদৃষ্টি কামনা করছি।ইতিমধ্যে এই মন্দিরের উন্নতিকল্পে উন্নয়নমূলক কিছু কার্যকরী আশু পদক্ষেপ গ্রহন করায় সফল রাষ্ট্রনায়ক মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন জননেত্রী শেখহাসিনা কে আমরা সাতক্ষীরা বাসীর পক্ষ থেকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিবাদন জানাচ্ছি।আশা করি অবিলম্বে শ্যামনগরের শ্রী শ্রী যশোরেশ্বরী কালিমাতা মন্দিরের দখলকৃত জায়গা উদ্ধারসহ অন্যান্য উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ খুব শীঘ্রই গ্রহন করা হবে।
আজ ১৫ সেপ্টেম্বর রোজ মঙ্গলবার শ্রী শ্রী যশোরেশ্বরী কালিমাতা মন্দিরের পূজায় পূজা দিতে যাই।আজ মঙ্গলবার কালীপূজারও দিন।অন্যান্য দিনের মত আজও অনেক পূর্ণার্থী,ভক্তবৃন্দ ও দর্শানার্থীরা ভিড় জমিয়েছেন এই মন্দিরটি দেখতে এবং মহাময়ের কৃপাদর্শন পাওয়ার জন্য।সকল ভক্তবৃন্দ ফুল,ফল,বিল্বপত্র সহ অন্যান্য পূজার সামগ্রী সাথে নিয়ে এসেছেন,কারোর মনোঃকামনা পূরণ হয়েছে আবার কারোর মানতঃ করার জন্যও এসেছেন।অনেকের মনের কামনাবাসনা পূরণ হয়েছে এজন্য পূজা দিতে এসেছেন।
দেবীর ৫১ পীঠের বাংলাদেশের পবিত্র ৪ টি পীঠস্থানের অন্যতম পীঠস্থান শ্রী শ্রী যশোরেশ্বরী কালিমাতা মন্দিরে র জয় হোক।ত্রিলোকেশ্বর মহাদেব এবং সতী মাতা মহামায়া আমাদের সকলের মনোবাসনা পূর্ণ করুন,মঙ্গল করুন এবং বিশ্বব্রহ্মাণ্ড থেকে মহামারী করোনা মুক্ত করুন।