স্টাফ রিপোর্টার:
দেবহাটা উপজেলা সহকারী কমিশনার (এসিল্যান্ড) অফিসের নিরাপত্তা প্রহরী উদ্দাপ কুমার পাল বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। আউট সোর্সিং এনজিও’র মাধ্যমে মন্ত্রনালয় থেকে মাস্টার রোলে নিয়োগপ্রাপ্ত নিরাপত্তা প্রহরী উদ্দাপ পালের নানা অপকর্ম সম্প্রতি প্রকাশ্যে আসছে।
ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা থেকে শুরু করে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নেয়া, নামজারিসহ বিভিন্ন কেসের দালালি এখন তার নিত্যদিনের কাজ। শুধু তাই নয় এসিল্যান্ড অফিসের গোপনীয় নথিপত্রের রেকর্ড রুমে রয়েছে তার অবাধ যাতায়াত, করেন সরকারি নথিতে নয়-ছয়।
তাছাড়া ব্যবহার করেন অফিসের গুরুত্বপূর্ন পদে দায়িত্বরত অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কম্পিউটারও। এমনকি সাবেক এক উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বিরুদ্ধে উদ্ধর্ত্তন কর্মকর্তাদের কাছে বেনামি অভিযোগ দায়েরের অভিযোগ রয়েছে উদ্দাপ কুমার পালের বিরুদ্ধে।
উদ্দাপ পালকে বাকিতে মালামাল দিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন উপজেলা মোড় ও দেবহাটা বাজারের প্রায় অর্ধশত ব্যবসায়ী। ঋনের টাকা ফেরত চাইতে গেলেই উদ্দাপ পালের হুমকি ধামকি ও রোষানলে পড়েন এসব নীরিহ ব্যবসায়ীরা।
দিনের পর দিন চলতে থাকা তার এসব বেপরোয়া কর্মকান্ডে রীতিমতো অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন উপজেলা এলাকার সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়ী ও হয়ারানীর শিকার এসিল্যান্ড অফিসের সেবাপ্রার্থীরা। এতে করে সেবার মান নষ্টের পাশাপাশি সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে সরকারি গুরুত্বপূর্ন এ অফিসের।
নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরে এসব অপকর্ম চালিয়ে আসছেন নিরাপত্তা প্রহরী উদ্দাপ পাল। বছর দেড়েক আগে উপজেলা নির্বাহী অফিসার খালিদ হোসেন সিদ্দিকীকে বদলী করতে বিভিন্ন দপ্তরে বেনামি লিখিত অভিযোগ দায়ের করিয়েছিলেন তিনি। পরে নির্বাহী অফিসারের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে প্রশাসনের ভয় দেখিয়ে সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়ী ও সেবাপ্রার্থীদের রীতিমতো জিম্মি করে অর্থ হাতিয়ে নেয়া শুরু করেন।
কয়েক মাস আগে উপজেলার নওয়াপাড়া ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা খান নাজমুল হোসাইন চৌধুরীকে কৌশলে ফাঁদে ফেলে তৎকালীন নির্বাহী অফিসারের নাম ভাঙিয়ে হাতিয়ে ৩০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন নিরাপত্তা প্রহরী উদ্দাপ পাল। বিষয়টি সেসময় উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও জেলা প্রশাসককে জানিয়েও কোন আইনি প্রতিকার বা টাকা ফেরত পাননি ওই ভুক্তভোগী ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা।
উপজেলা প্রেসক্লাব মোড়ে সরকারি জমিতে থাকা শরিফুল নামের এক চা বিক্রেতার দোকান অপসারণ করে দেন নির্বাহী অফিসার খালিদ হোসেন সিদ্দিকী। ওই দোকানীকে ফের দোকান পাইয়ে দেয়ার প্রতিশ্রæতি দিয়ে হাতিয়ে প্রায় ৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় উদ্দাপ পাল। পরে ওই দোকানীকে দোকান বা টাকা কোনটাই ফেরত দেয়নি সে।
সূত্রগুলো আরও জানায়, সরকারি জামিতে প্রতিষ্ঠান থাকায় উচ্ছেদের ভয় দেখিয়ে দেবহাটা সদরের সেবা সমবায় সমিতি ও মুদি ব্যবসায়ী রাম দত্তের থেকেও দফায় দফায় মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে উদ্দাপ পাল। তাছাড়া উপজেলা মোড়ের মল্লিকা রেস্তরা, চা দোকানি বরকত, দেবহাটা বাজারের চা দোকানি রশিদ, আমীর ও কামরুলসহ অন্তত অর্ধশত দোকানীকে দোকান বাকির টাকা পরিশোধ না করে প্রশাসনের ভয়ভীতি দেখিয়ে হুমকির মুখে রেখেছেন প্রশাসনের ছত্রছায়ায় আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে যাওয়া এসিল্যান্ড অফিসের এ নিরাপত্তা প্রহরী। কয়েকদিন আগে এক প্রাথমিক শিক্ষকের কাছে টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে মারপিটের শিকার হয়েছেন তিনি।
এসব অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিতে অভিযুক্ত নিরাপত্তা প্রহরী উদ্দাপ পালের মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার মোবাইলটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এ প্রসঙ্গে বর্তমান উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ইয়ানুর রহমান বলেন, তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পেলে উদ্দাপ পালের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।